উৎপাদনে খরচ ১০ টাকা, তবু আলুর দাম ৬০-৭০ টাকা

0
165
উৎপাদনে খরচ ১০ টাকা, তবু আলুর দাম ৬০-৭০ টাকা

দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ টন। আর সদ্য বিদায় নেয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে আলু উৎপাদন হয়েছে চাহিদার চেয়ে অন্তত প্রায় ৩০ লাখ টন বেশি। আর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এসব আলু উৎপাদনে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে মাত্র ১০ টাকা ৫১ পয়সা। যদিও রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। রাজধানীর বাহিরে বিভিন্ন জায়গায় ৭০ টাকা দরেও আলু বিক্রি হয়েছে।

দেশে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মূল্য অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাওয়া পণ্যগুলোর অন্যতম আলু। গত অর্থবছরেও পণ্যটির মূল্যে দেখা গেছে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা। নানা পদক্ষেপেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় এক পর্যায়ে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ আমদানি উন্মুক্ত আছে এখনো। এরপরও বাজারে পণ্যটির দাম এখন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০-২৫ টাকা বেশি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আলুর মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা অবিশ্বাস্য রকম বেশি। তাদের ভাষ্যমতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য সঠিক হলে উৎপাদনের পর ১০-১৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ার পরও দেশে উদ্বৃত্ত আলু থাকার কথা। আবার আমদানিতেও বাধা নেই। সে হিসেবে দামও কম হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা দরে। আর খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে আলুর কেজিপ্রতি উৎপাদন ব্যয় ছিল ১০ টাকা ৫১ পয়সা। গত অর্থবছরের উৎপাদন ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ না হলেও সেখানে এ ব্যয়ে খুব একটা হেরফের হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রতি একর জমিতে আলু উৎপাদনে গড়ে খরচ পড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকার কিছু বেশি। জমি তৈরি, সার, বীজ, মজুরি, সেচ, কীটনাশক, জমির লিজ ব্যয় এবং ঋণের সুদসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এ ব্যয় করা হয়। আর একরপ্রতি গড় উৎপাদন হয় ১০ হাজার ৮৯২ কেজি। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ দাঁড়ায় সাড়ে ১০ টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খরচ ছিল কেজিতে ১০ টাকা ২৭ পয়সা।

কৃষি ও খাদ্যপণ্যের বাজার পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যমতে, আলুর উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত মূল্যের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। এক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দরের এ পরিস্থিতি হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। আবার কেউ কেউ বলছেন, উৎপাদনের সরকারি তথ্য নিয়েও বড় ধরনের সংশয় রয়েছে। সঠিক তথ্য না থাকায় সার্বিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়ছে, যা আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।

সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্ডিকেট হয়ে গেছে হয়তো। চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হলে আলু কোথায় যায়? তার মানে পুরোপুরি বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। ডিম ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও আমরা একই সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নয়তো সরকারিভাবে জানানো হোক, কী কারণে দাম বাড়ছে?’

স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের দিক থেকে চালের পরই আলুর অবস্থান। বর্তমানে বৈশ্বিক আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছর স্বল্প পরিসরে আলু রফতানি করছিল বাংলাদেশ। তবে এখন রফতানির পরিবর্তে উল্টো আলু আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে সরকার।


তথ্যসূত্র:
১. চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি, উৎপাদন খরচ মাত্র ১০ টাকা তবু আলুর কেজি ৬০ টাকা
– https://tinyurl.com/4nysedyr

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৪৪৫ হিজরিতে সাহেল অঞ্চলে আল-কায়েদার ৫২৫ অভিযান: অন্তত ২৪৪২ জান্তা সেনা নিহত
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন পরবর্তী মব লিঞ্চিং এর জোয়ারঃ উগ্রবাদী হিন্দুদের লক্ষবস্তুতে ভারতীয় মুসলিমরা