ফরিদপুরের একসময়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে সে। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিতও ছিল। পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এলে তার নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে পালিয়ে আছে সে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছে সাবেক আওয়ামী এমপি নিক্সন চৌধুরী। তার নিজের ও পরিবারের নামে হাজার বিঘার বেশি ভূমির মালিকানা রয়েছে। রয়েছে ঢাকার পূর্বাচল, আদাবর, গুলশান ও বনানীতে প্লট ও ফ্ল্যাট। সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় রয়েছে বাড়ি। ফরিদপুরে নিজের বাড়িতে বানিয়েছে আস্ত একটা চিড়িয়াখানাও।
নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আলোচিত নিক্সন চৌধুরীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুদক চিঠি দিয়েছে। ইতোমধ্যে স্ত্রীসহ তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে সে ইতোমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছে। আমাদের অনুসন্ধান থেমে নেই। দুদকের দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর-৪ আসনের তিন বারের আওয়ামী সাংসদ নিক্সন চৌধুরী প্রথমে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নে ব্রাক্ষণপাড়া মৌজার চর অঞ্চলে ৩৮ শতাংশ জমি ক্রয় করে বাড়ি করে। স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে সে নিজ এলাকায় বাড়তি সুবিধা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
অভিযোগ রয়েছে, আড়িয়াল খাঁ নদ ও পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে নিক্সন চৌধুরী। আশপাশের জমির মালিকদের ডেকে বাড়িতে এনে জোর করে ভাঙ্গার সদরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। এভাবে প্রায় ১১শ বিঘা জমি নিজের স্ত্রী ও সন্তান এবং ভাইয়ের নামে দলিল করে নিয়েছে সে।
নিক্সন চৌধুরী সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজ বাড়িতে কয়েক একর জায়গার ওপর চিড়িয়াখানা ও বাগান বাড়ি করেছে। এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। কিছু নিজের নামে আর কিছু স্ত্রী, সন্তান ও ভাইয়ের নামে গড়েছে। আয়কর ফাইল অনুসারে নিক্সন চৌধুরীর নামে ১২-১৪ কোটি টাকা এবং স্ত্রী তারিন হোসেনের নামে ১৭-১৮ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী নিক্সনের নামে ২ হাজার ৪২ শতাংশ কৃষিজমির মালিকানা রয়েছে। যেখানে ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালের হলফনামায় তার মালিকানাধীন কৃষিজমির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ।
তথ্যসূত্র:
১. হাজার বিঘা জমি, তিন দেশে বাড়ি নিক্সন চৌধুরীর
– https://tinyurl.com/ms9cej3c