কক্সবাজারের উখিয়া বৃহত্তর বালুখালী বাজার ও এর আশপাশের অন্তত আটটি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্টাইলে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, যুবদল নেতা দুই সহোদর সানোয়ার সিকদার ও আনোয়ার সিকদারের নেতৃত্বে ১৬ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই চাঁদাবাজিতে জড়িত। সংশ্লিষ্টরা সবাই স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মী হিসাবে পরিচয় দেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, এই সিন্ডিকেটের পেছনে উখিয়া উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সরাসরি মদদ রয়েছে।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে, চাঁদাবাজি বৈধতা পেতে চাঁদার টাকা থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি অঙ্ক জমা করা হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাতেও। এমনটাই জানিয়েছে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেওয়া যুবদল নেতা আনোয়ার সিকদার। রাজস্ব খাতে কিছু টাকা জমা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছে, সে অভিযুক্তদের কাউকে টাকা তোলার দায়িত্ব দেয়নি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে গড়ে ওঠা বৃহত্তর বালুখালী বাজারটি বর্তমানে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। বাজারটিতে দুই হাজারেরও বেশি দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারটি আইনি জটিলতায় গত এক বছরে সরকারিভাবে ইজারা হয়নি। বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারটি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কেন মাথাব্যথা তা জানি না। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় এই বাজারকে লাগামহীন দামে নিলামে তোলা হচ্ছে। ৫০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা কেউ ভাবে না। ভাবছিলাম, আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলে এসব বন্ধ হবে। কিন্তু এখন আরেক দল বিএনপি এসে আরও বেশি করছে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বালুখালী বাজারটি ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকারিভাবে নিলাম হয়। ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ইজারার সব টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা পড়ত। তখন নয়-ছয় হওয়ার সুযোগ ছিল না। সম্প্রতি বাজারটি ঘিরে সর্বত্রই বিস্তর চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বালুখালী বাজারে প্রতিদিন প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে খাস কালেকশন দাবি করে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো চাঁদা তোলা হচ্ছে। টাকা না দিতে চাইলে বিএনপি-যুবদল নেতারা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করছে চাঁদা দিতে। তাদের পেছনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা জড়িত থাকার কারণে ভয়ে কোথাও অভিযোগ করতে পারছেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা আরও জানান, খাস কালেকশনের নামে এ টাকা তোলা হলেও কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে তারা কখনো দেখেননি। এ টাকা কোথায় যাচ্ছে তাও কেউ জানেন না।
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা আনোয়ার সিকদার বলে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোকজন বালুখালী বাজার থেকে টাকা তুলত। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ১৬ জন টাকা তোলার দায়িত্ব পেয়েছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাতে এ টাকা প্রতিদিন জমা করি।
টাকা তোলার দায়িত্ব কে দিয়েছেন জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা ও ভূমি অফিসের তহশিলদার রাশেদা বেগম এ দায়িত্ব দিয়েছে বলে দাবি করে আনোয়ার। একপর্যায়ে সে (আনোয়ার) প্রতিবেদককে ম্যানেজ ও ঘুস দেওয়ার চেষ্টা করে।
ভূমি তহশিলদার রাশেদা বেগম বলে, আমি যুবদল বা বিএনপি নেতাদের কাউকে বালুখালী বাজার থেকে খাস কালেকশন বা টাকা তোলার দায়িত্ব দিইনি। আমরা নিজেরাই প্রশাসনের লোকজন দিয়ে এ টাকা তুলি।
বালুখালী বাজার নিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলে, আমি সবে নতুন এসেছি। মূলত বালুখালী বাজারটি আমি আসার আগেই খাস কালেকশন করা হচ্ছিল। দৈনিক ২১ হাজার টাকা করে রাজস্ব কোষাগারে জমা হচ্ছে।
বিএনপি বা যুবদল নেতারা ইচ্ছামতো তুলে এ টাকা কোষাগারে দিচ্ছে, নাকি তাদের টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলে, যেটুকু জানি, এ টাকা তোলার দায়িত্বে ভূমি (কর্মকর্তা) তহশিলদার রাশেদা বেগম রয়েছে। ইউএনও বলে, আমি শুনেছি বাজারের বাইরে গিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্পট ও গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আমি নিজে সরেজমিন গিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
তথ্যসূত্র:
১. রীতিমতো চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদাবাজি, বৈধতা পেতে রাজস্ব খাতও ম্যানেজ
– https://tinyurl.com/2pvtud52