শাইখ সামি আল-উরাইদি, তানযিমুল কায়েদার একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম। তিনি সিরিয়ার মুজাহিদ গ্রুপ হুররাস আদ-দ্বীনের একজন অন্যতম নেতা হিসেবেও পরিচিত। সামি আল-উরাইদি হাফিযাহুল্লাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “ওয়ান্টেড” লিস্টে আছেন এবং তার তথ্যের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি মুজাহিদিন কর্তৃক সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের উৎখাত এবং দামেস্ক বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়ে কয়েক পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন প্রখ্যাত এই আলেম।
বিবৃতিটি তিনি হামদ ও সালাতের পর একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিয়ে শুরু করেন। এরপর তিনি লিখেন;
নিঃসন্দেহে ইসলামি বিশ্বের উপর, বিশেষ করে দামেস্কের জনগণের উপর আল্লাহর মহান অনুগ্রহের মধ্যে একটি হল দামেস্কের তাগুত বাশার আল-আসাদের পতন, আলহামদুলিল্লাহ। তিনি বলেন, এই বিজয়ের মূহুর্তটি নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন আলোচনা ও মতানৈক্য তৈরি করছেন। কেউ কেউ বলতে চাচ্ছেন, আসাদ শাসনের পতন এবং দামেস্ক বিজয়ের পিছনে বাইরের হাত রয়েছে, বা একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শাসনের পতনে অবদান রেখেছে!
এরপর তিনি ৪টি ধাপে এই সংশয়গুলোর উপর একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
তিনি লিখেন, প্রথমত প্রত্যেক মুসলমান এই বিশ্বাস রাখেন যে, মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটে তার সবই একমাত্র আল্লাহ তাআ’লার হুকুম ও ইচ্ছায় ঘটে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। এর কোনোটি আল্লাহ তাআ’লার অনুগ্রহ, কোনোটি মুমিনদের জন্য পরিক্ষা। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আলি ইমরানের ২৬-২৭ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
আর বর্তমান সময়ে দামেস্কের তাগুত বাশার আল-আসাদের পতনের সবচেয়ে বড় কারণ হল: মুসলিম উম্মাহর ঐসমস্ত ধৈর্যশালী মুমিন, যারা যুগ যুগ ধরে তাদের জিহ্বা এবং জান-মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে এই শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন।
এই মহান বিজয় এক দিন এবং মাস বা গত কয়েক বছরের ফল নয়। বরং যুগ যুগ ধরে চলে আসা সত্য-মিথ্যার যুদ্ধের ফলাফল, যা আল্লাহ তাআ’লা তাঁর ধৈর্যশীল বান্দাদেরকে দিয়েছেন। আর এই বিজয়ের মূহুর্তে আমরা যদি এই শাসনের বিরুদ্ধে সর্বস্ব দিয়ে জিহাদ চালিয়ে যাওয়া পূর্ববর্তীদের ভুলে যাই, তবে এটা একটা বড় অন্যায় হবে।
কেননা বিজয়ের মহান এই ঘটনাগুলির পিছনে রয়েছে পূর্ববর্তীদের অসংখ্য প্রচেষ্টা, মহান ত্যাগ এবং তাদের উত্তরসূরীদের ধারাবাহিকতা। কখনও কখনও কেউ কেউ মনে করতে পারে যে, তাদের সেই কাজগুলি ছোট বা অকেজো। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা, ত্যাগ এবং কাজের ফলাফলই নির্বিশেষে বিজয় এবং বিজয়ের প্রাসাদের ইট গঠন করেছে।
এরপর শাইখ সামি আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ লিখেন, নিঃসন্দেহে এই বিজয়ের মাধ্যমে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চলমান সংগ্রামে আল্লাহর ওয়াদা সত্য হিসাবে আবারও প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ্ তায়া’লা এই সংগ্রামের মাধ্যমে তাঁর সুন্নাহ বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে সত্যের পথিকদেরকে তাদের সত্য দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ফাঁদ, প্রতারণা ও যুদ্ধ করেছে। এসময় তিনি কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে উদ্ধৃতি পেশ করেন, যেখানে আল্লাহ তাআ’লা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের বিভিন্ন ফাঁদ ও চক্রান্তের কথা স্পষ্ট করেন, এবং মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ তাআ’লা তাঁর প্রতিশ্রুতীর কথাও জানান।
এরপর তিনি লিখেন, এই শাসনের পতনের ফলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি আল্লাহর সুন্নাহের পরিধির বাইরে ঘটেনি। যারা দামেস্কে সত্য-মিথ্যার এই লড়াইয়ে সংঘটিত ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাদের কাছে শত্রুর ফাঁদ আর আল্লাহ তাআ’লা ওয়াদা এখন আর অস্পষ্ট নেই।
সর্বশেষ ধাপে শাইখ সামি আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ লিখেন, বাশার আল-আসাদ শাসনের পতনের মাধ্যমে দামেস্কের জনগণের প্রতি আল্লাহ তাআ’লা তাঁর অনুগ্রহ এবং মুমিন বান্দাদের রক্ষা করার সুন্নাত বাস্তবায়ন করেছেন। দামেস্কের জনগণ আল্লাহর এই নির্দেশনা উপলব্ধি করার পর, তারা বিজয়ের পরবর্তী এই সময়টাতে কী করবেন, সেটি এখন আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। আর এই পর্যায়টি দামেস্কের জনগণ এবং তাদের পরবর্তীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। তাই এখন আমাদের কর্তব্য হল আল্লাহর কাছে এমন কাজ নিয়ে হাজির হওয়া, যা তিনি পছন্দ করেন এবং যার আদেশ (শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা) তিনি দিয়েছেন। যাতে করে আল্লাহ তাআ’লা আমাদের উপর তাঁর রহমত, বরকত, সাহায্য এবং অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেন।
তথ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/mr35d4bz
গজওয়াতে তো দেখলাম না। তাহলে কেমন বিবৃতি দিলো যে অফিসিয়ালি আসছে না।
এটা কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি নয়, বরং উনার বক্তব্য। সকল বক্তব্যই অফিসিয়াল বিবৃতি আকারে আসবে এমন ভাবার কিছু নেই…