ট্রাম্পের অস্ত্র ফেরতের দাবির বিরুদ্ধে সাবেক আফগান সেনাদের প্রতিবাদ

0
120

কাবুলে গত ৯ মার্চ এক প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আফগানিস্তানের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও জেনারেলরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, আফগান সরকারের পতনের সময়, অর্থাৎ ইমারতে ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে, তৎকালীন সরকার আফগানিস্তানের যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, সামরিক যান, অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তর করেছিল। তারা এই ঘটনাকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাবেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানকে আহ্বান জানান, যেন এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ ‘অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম’ অবিলম্বে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের মতে, এই সম্পদ কোনো সরকারের নয়, বরং এটি আফগান জনগণের অধিকার।

সাবেক জেনারেলরা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে লক্ষ লক্ষ পুরনো অস্ত্র ধ্বংস করেছে এবং অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, যা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত নিন্দনীয়। তারা এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তারা আরও জানান, যারা আফগানিস্তানের বাইরে থেকে দেশটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে, তারা সফল হবে না। এ সময় তারা স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমরা সরকারের পাশে আছি এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাকে সমর্থন করবো।’

এই সময় প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তারা প্রাক্তন কর্মকর্তাদের ওপর ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃক কথিত নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, ‘আফগানিস্তানে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বা কর্মীদের ওপর কোনো নির্যাতন চলছে না।’ বরং তারা জানান, কারাগার ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এবং তাদের সকল দাবি ও পরামর্শ বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আফগান জেনারেলস অ্যান্ড অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান, জেনারেল শাওর গুল পশতুন, আফগানিস্তানে মার্কিন হস্তক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দখলদারিত্বের সময় যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের উন্নত সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে এবং আফগান সেনাবাহিনীকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পুরনো ও অপ্রচলিত অস্ত্র দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ডিসআর্মামেন্ট, ডিমোবিলাইজেশন, অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন’ নামের কর্মসূচির মাধ্যমে আফগানিস্তানের আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে, যা এ অঞ্চলে নজিরবিহীন।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে, সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

প্রথমত, তারা বলেন যে, আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে অটল। কোনো পক্ষকে আফগান ভূখণ্ড প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে না।

দ্বিতীয়ত, ইমারতে ইসলামিয়া আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে একই নীতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলেন, যদি কেউ এই আইন লঙ্ঘন করে, তবে তাকে দখলদার হিসেবে গণ্য করা হবে।

তৃতীয়ত, সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে আফগানিস্তানের সামরিক সরঞ্জাম প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তর করেছেন, তাদের কর্মকাণ্ডকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করে দেশটির বিশাল ক্ষতি করেছে। এ জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

পঞ্চমত, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত চাওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অবশেষে, আফগান জেনারেল ও অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, যারা দেশ ছেড়ে গেছেন, তারা যেন নির্ভয়ে ফিরে আসেন। সরকার তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।


তথ্যসূত্র:
1. Overview of the former soldiers and generals’ press briefing!
– https://tinyurl.com/5a77ebza

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিরিয়ায় রাতের আঁধারে ব্যাপক বিমান হামলা দখলদার ইসরায়েলের
পরবর্তী নিবন্ধআল-আকসা মসজিদ থেকে লাউডস্পিকার জব্দ করল দখলদার ইসরায়েল