আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রণে সোমালিয়ার প্রায় ৩,৮২,৫৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা

0
654

দক্ষিণ সোমালিয়ায় পশ্চিমা সমর্থিত মোগাদিশু প্রশাসনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংকট দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা রাজধানী মোগাদিশুর চারপাশে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করছেন।

২০০৬ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান জোট এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো সম্মিলিতভাবে সোমালিয়ায় আশ-শাবাবের অগ্রগতি রুখতে মোগাদিশু প্রশাসনকে সমর্থন এবং সাহায্য করে আসছে। সঠিক পরিসংখ্যান আরও কয়েকগুণ বেশি হলেও অনুমান করা হয় যে, এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই মোগাদিশু সরকারকে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই যুদ্ধে অন্তত ২ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। আর জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদাররাও এই যুদ্ধে মোগাদিশু বাহিনীকে সামরিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সরবরাহ করতে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে। বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক এই সমর্থন এবং সাহায্য সত্ত্বেও, মোগাদিশু সরকার আজ আশ-শাবাবের মোকাবেলায় অকার্যকর।

ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোর এই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সত্ত্বেও, আশ-শাবাব আজ একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ফলে দলটির মুজাহিদিনরা মোগাদিশু সরকারের চাইতেও বর্তমানে কয়েকগুণ বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেই সাথে রাজধানী মোগাদিশু সহ সোমালিয়া জুড়ে বড়ধরণের অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, আশ-শাবাব মোগাদিশুতে প্রবেশের মূল সরবরাহ রুটগুলিতে, বিশেষ করে মোগাদিশু-বালাদ সড়ক এবং মোগাদিশু-আফগোই সড়কে অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। শাবাবের অ্যাম্বুশ এবং হিট-এন্ড-রান কৌশলের আক্রমণগুলো মোগাদিশু বাহিনীকে প্রভাবিত ও ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে, ফলে শাবাবকে তাড়া করার জন্য নিয়োগ করা মোগাদিশু সরকারের বিশাল বাহিনী বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

একই সাথে, আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা শাবেলী নদীর তীরবর্তী কৌশলগত ৩ সেতুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে জাবিদ এবং বারিরে সেতু, যা পূর্বে ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে মোগাদিশু বাহিনীর দখলে ছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের ফলে আশ-শাবাব সহজেই যোদ্ধা এবং সরবরাহ স্থানান্তর করতে সক্ষম হচ্ছে, যা রাজধানীর উপকন্ঠের শহর এবং গ্রামগুলোকে অবরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

পুরোপুরিভাবে ৪৫% ভূখণ্ড এবং ১৫% প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এলাকা শাবাব নিয়ন্ত্রিত

ডেইলি ইউরো টাইমস-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সোমালিয়ার মূল ভূখণ্ডের ৬,৩৭,৬৫৭ বর্গকিলোমিটার ভূমির ৪৫% ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা। দেশের বাকি ৩৮% এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে স্বায়ত্তশাসিত ৩টি আঞ্চলিক সরকার। এর বাহিরে মাত্র ১৭% এলাকা আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে মোগাদিশু সরকার, যার মধ্যে বর্তমানে ১৫% ভূখণ্ডই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও যুদ্ধক্ষেত্র। মোগাদিশু সরকার এবং আশ-শাবাবের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই এলাকাগুলোতে নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলের যুদ্ধ তীব্রতর করার মাধ্যমে আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা মোগাদিশু-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতেও মোগাদিশু সরকার তার মিথ্যা প্রচারণা ও বিজয়ের দাবি করে যাচ্ছে। সেখানে আশ-শাবাব প্রশাসন রাজধানী মোগাদিশুকে ঘিরে রেখে প্রচারণামূলক ভিডিও চালাচ্ছেন। এসব ভিডিওতে রাজধানীর উপকন্ঠে আশ-শাবাব যোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণ, চেকপয়েন্ট স্থাপন এবং স্থানীয় জনগণের সাথে যোগাযোগের তথ্যচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, যা আশ-শাবাবের আত্মবিশ্বাস এবং স্থানীয় সমর্থন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধউইঘুর মুসলিমদের রোজায় চীনের কড়াকড়ি, প্রশাসনের কাছে পাঠাতে হচ্ছে খাবার খাওয়ার ভিডিও
পরবর্তী নিবন্ধসোমালিয়া || প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আদেল জেলা থেকে পালিয়েছে প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ