
ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েলের নির্মম হামলা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতায় গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে পশ্চিম তীরে ১০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় গণহত্যার পাশাপাশি ইসরায়েল পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি করেছে।
এই বর্বরতা শুধু সেনাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আসা সশস্ত্র দখলদাররাও নির্বিচারে ফিলিস্তিনি গ্রামে হামলা চালাচ্ছে। তারা বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে, মানুষকে আক্রমণ করছে, জমি দখল করে নিচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করছে। দখলদারদের অনেককে আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে সশস্ত্র করে তোলা হয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর অংশ হিসেবে “একীভূত” করা হয়েছে। এতে করে দখলদার বাহিনী ও সন্ত্রাসী বসতি দখলদারদের মধ্যে পার্থক্য কার্যত উঠে গেছে।
ইসরায়েলি সরকার এই সহিংসতাকে একরকম বৈধতা দিয়ে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে—পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অঞ্চলটিকে স্থায়ীভাবে দখল করা। ২০২৪ সালে ইসরায়েল যতটা ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল করেছে, তা গত ২০ বছরের সম্মিলিত ভূমি দখলের চেয়েও বেশি। এই ভূমি দখলের নেতৃত্বে রয়েছে ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ, যে ২০২৩ সালে ‘সেটেলমেন্ট প্রশাসন’ নামে একটি নতুন দপ্তরের দায়িত্ব নেয়। সেই দপ্তরের মাধ্যমেই পশ্চিম তীরকে কার্যত দখল করে ইসরায়েলি আইন সেখানে চালু করার পাঁয়তারা চলছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে দখলদার বাহিনী পশ্চিম তীরে ৭০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এরপরের দুই মাসে নিহত হয় আরও অন্তত ৩৪ জন। অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে দখলদার বাহিনীর চলমান অভিযান ও অভিযান চলাকালীন বসতিতে চালানো গোলাবর্ষণে। তাদের দাবি, তারা ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ চালাচ্ছে, তবে বাস্তবে শিশু, নারীসহ বহু নিরস্ত্র নাগরিক এই হামলায় শহীদ হয়েছেন।
জেনিন, তুলকারেম, নুর শামস, ফারাআ ও নাবলুসের শরণার্থী শিবিরগুলোতে চালানো হয়েছে বড় পরিসরের সামরিক অভিযান। এই এলাকাগুলোতে গাজা স্টাইলে অবরোধ আরোপ, বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ও চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। অনেক জায়গায় পুরো পুরো এলাকা বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে ফিলিস্তিনিরা আর ফিরে আসতে না পারে।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত, বসতি দখলদাররা প্রায় ১,৮০০ টি হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনিদের ওপর। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই আরও অন্তত ৪১৪টি হামলার তথ্য পাওয়া গেছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এসব হামলার বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে পশ্চিম তীরের ‘এরিয়া সি’ অঞ্চলে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান। অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে, গবাদি পশু হত্যা করা হয়েছে এবং খোলা রাস্তায় নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা বলছে, তাদের আর কোনো প্রতিরক্ষা অবশিষ্ট নেই। প্রতিরোধ করতে গেলে দখলদার বাহিনী আরও ভয়াবহ হামলা চালাবে—এই ভয়ে তারা যেন নিজ ঘরেও নিরাপদ নয়। দখলদার ইহুদিবাদী ইসরায়েল এখন কেবল গাজা নয়, বরং গোটা ফিলিস্তিনেই এক গণনিধনযজ্ঞের আয়োজন করেছে।
তথ্যসূত্র:
1. Israel has killed 1,000 Palestinians in the West Bank since October 7, 2023
– https://tinyurl.com/3a4bwvvw