সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশ দখল করে গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। এখন প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী যুব শ্রমিক লীগের এক নেতা। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, মাঠের ভেতর এ পার্কিং তৈরি করায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পার্কিংয়ের কারণে মাঠের মাটি উঠে কয়েক স্তর ধুলাবালুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক লীগের এই নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সন্ত্রাসী যুব শ্রমিক লীগের এই নেতার নাম মো. পারভেজ, তিনি সংগঠনটির রমনা থানা কমিটির সহসভাপতি। তাঁর দাবি, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই তিনি এই পার্কিং বসিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেছেন, তাঁরা ভয়ভীতির মধ্যে আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পার্কিংয়ের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। শ্রমিক লীগের নেতা মাঠের একাংশ দখলে নিয়ে পার্কিংয়ের নামে চাঁদাবাজি করছেন। সিদ্ধেশ্বরীর এই এলাকায় অনেকগুলো বহুতল মার্কেট রয়েছে। কিন্তু এসব মার্কেটে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আশপাশের রাস্তা ও বিভিন্ন গলিতে গাড়ি পার্কিং করেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পারভেজ গত নভেম্বরে বিদ্যালয় মাঠের একাংশে গাড়ি পার্কিং করার আবেদন করলেও তাঁকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গতকাল বেলা তিনটায় সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্ধেশ্বরী সড়ক থেকে প্রায় তিন ফুট উঁচু সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ। এই মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে ২৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করা রয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই এ পার্কিংয়ে গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। এতে মাঠে প্রচুর পরিমাণ ধুলাবালু উড়ছে। এসব গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে টোল আদায় করছেন আর এম কমিউনিকেশনের কর্মী আবদুল লতিফ। তিনি জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই মাঠে শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা হয়। পার্কিং ফি বাবদ প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। এই হিসাবে দিনে পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়, যা মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
খবরঃ প্রথম আলো
সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ ও পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে পৃথক দুটি বড় চায়ের দোকানও গড়ে উঠেছে। দোকানের বর্জ্য মাঠের ওপর ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই পার্কিংয়ের উত্তর পাশে বড় জাল টানিয়ে ফুটবল-ক্রিকেট খেলছে শিশু-কিশোরেরা। এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. মাসুদ বলে, কিছুক্ষণ পরপরই মাঠের প্রধান ফটক দিয়ে গাড়ি আসা-যাওয়া করে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। অবিলম্বে মাঠ থেকে এই পার্কিং সরিয়ে নেওয়া দরকার।
সিদ্ধেশ্বরী রোডের বাসিন্দা কামাল আহমেদ বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠটি ভাড়া নিয়েছিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানতমা কনস্ট্রাকশন। তখন তারা মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের নির্মাণসামগ্রী রেখেছিল। এই সুযোগে মাঠের এক কোণে অবৈধভাবে কার্যালয় তৈরি করেছিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ। আরেক পাশে পানির পাম্প বসিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে মাঠটিতে খেলাধুলা বন্ধ ছিল। পরে পানির পাম্পটি রেখে বাকি স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হয়। এর পাশাপাশি মাঠটিও সংস্কার করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন আবার মাঠটি দখলের পাঁয়তারা করছে ক্ষমতাসীন দলের চক্র।
আর এম কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারী মো. পারভেজ বলেন, এ এলাকায় পার্কিং–সংকট রয়েছে। তাই তিনি মাঠের এক কোণে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এ জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি।