জধানীর সদরঘাট থেকে আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ রুটে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাস চালান মো. শামীম। গত ২৬ মার্চ থেকে বাসের চাকা বন্ধ। শামীমের সংসারের চাকাও আর চলছে না। পরিবারের ছয় সদস্যের খাবার জোগাড় করছেন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে। বাসাভাড়া দিতে পারছেন না। শামীমের মতো দেশের ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিকের দিন কাটছে কষ্টে।
এদিকে কয়েক দিন বাদেই ঈদুল ফিতর। অন্যান্য বছর এ সময় ঈদ যাত্রা সামনে রেখে বাড়তি শ্রম ও সময় দিয়ে বেশি আয়ের প্রস্তুতি নিতেন পরিবহন শ্রমিকরা। এবার ঈদ যাত্রার প্রস্তুতি নেই। ঈদের আনন্দ দূরে থাক, প্রতিটি দিন পার করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এরই মধ্যে বেঁচে থাকার তাগিদে পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ বেছে নিয়েছে ভিন্ন পেশা।
করোনাভাইরাসের ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ চলমান সাধারণ ছুটিতে গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে। সীমিতভাবে কেবল পণ্যবাহী গাড়ি চলছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই সরকার দিনমজুরদের জন্য ৭৬০ কোটি টাকার সহায়তার ঘোষণা দেয়। তবে পরিবহন খাতের মালিক, শ্রমিক নেতাসহ সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন, এই সহায়তা পরিবহন শ্রমিকরা পাচ্ছেন না। কিভাবে তালিকা হচ্ছে তা-ও তাঁরা জানেন না।
গতকাল শনিবার বিকেলে শামীম কালের কণ্ঠকে বলন, ‘কোনো সরকারি সহায়তাও তো পাইলাম না। তালিকায় নামও উঠল না।’
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভংকর ঘোষ রাকেশ গতকাল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের আগে পরিবহন শ্রমিকরা বাড়তি আয়ের জন্য প্রস্তুতি নেন। বোনাস পান। এবার তাঁরা আগের মতো ঈদ উদ্যাপন করতে পারছেন না।
সংসার চলছে না বলে দূরপাল্লার বাস চালুর দাবিতে গত কয়েক দিনে পরিবহন শ্রমিকরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমেছেন। বেশ কিছু স্থানে ত্রাণের দাবিতে কর্মসূচি পালনও করেছেন তাঁরা।
শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, পরিবহন খাতে বছরে দুই হাজার কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। তার একটি অংশ দিয়ে গড়ে তোলা হয় পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল। সেই তহবিল থেকে এই দুঃসময়ে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে কল্যাণ তহবিলের অর্থ খরচ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ত্রাণ পাওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কাছে। ৭০ লাখ সড়ক পরিবহন শ্রমিককে বাঁচাতে আমরা বাস টার্মিনালের কাছে ওএমএসের চাল বিক্রি করার অনুরোধ করেছি।’ তবে কোনো আবেদনেই কিছু হচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়ি চলছে না বলে পরিবহন মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন না। ঈদের বোনাসও দেবেন না। উল্টো তাঁরা বলছেন, গাড়ি বসিয়ে রাখায় গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে, গ্যারেজ ভাড়া দিতে হচ্ছে। গাড়ি পাহারার জন্য নিয়োজিত পরিবহন শ্রমিকদের শুধু খোরাকি দেওয়া হচ্ছে। গড়ে একটি গাড়ির পাহারায় আছেন একজন শ্রমিক।
সূত্র: কালের কন্ঠ