উসমান বাতুরঃ আলতাই পর্বতমালার ঈগল

1
1711
উসমান বাতুরঃ আলতাই পর্বতমালার ঈগল

উসমান বাতুরকে গ্রেফতারের ৭০ বছর পার হলো কয়েকদিন পূর্বে। ১৯৫১ সালের ২৮ এপ্রিল, ঔপনিবেশিক রাশিয়া ও পূর্ব তূর্কিস্তানে স্বৈরাচারী কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা কাজাক মুসলিম বীর উসমান বাতুরকে চীনা প্রশাসন গ্রেফতার করে।

মুসলিম এই ঈগলের প্রকৃত নাম উসমান ইসলামগ্লু। অদম্য সাহসিতার দরুন মানুষ তাকে “উসমান বাতুর” বলেই ডাকতে বেশি ভালোবাসত! “বাতুর” শব্দের অর্থ “সাহসী / বীর”

কাজাকের আলতাই অঞ্চলের কোকতোগায় এর অন্তর্গত ওংদিরকারায় এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে ১৮৯৯ সালে উসমান বাতুর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কাজাখ আইতুভগান গোত্রের। তার পিতা ছিলেন ইসলাম বে। তার শৈশব কেটেছে দ্বীনি পড়ালেখা করে। যুবক বয়সে তিনি বোকে বাতুর নামের এক উস্তাদের কাছ থেকে গেরিলা যুদ্ধকৌশল আয়ত্ত করেন। পাশাপাশি তিনি ঘোড়সওয়ারি এবং মার্শাল আর্টেও নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। তিনি ছিলেন দক্ষ ঘোড়সওয়ার, অভিজ্ঞ শিকারি এবং সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে অভিজ্ঞ এক টগবগে তরুণ।

মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর উপর ঔপনিবেশিক রাশিয়া আর চীনের আগ্রাসন ছোটবেলা থেকেই উসমানের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে। তিনি বেশ কয়েকবার চীনা সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ছোটো-বড় আন্দোলনে অংশ নেন।মধ্য এশিয়ার বিস্তৃর্ণ আলতাই পর্বতমালা ও পূর্ব তূর্কিস্তানের মজলুম মুসলিমদের অধিকার আদায়ের লক্ষে ১৯১১ সালে শ্বেত ভল্লুক রাশিয়া আর চাইনিজদের বিরুদ্ধে তিনি পর্বতসম প্রতিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তার ৩ ছেলে শারদিমান, নিয়ামতউল্লাহ ও নবী তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ১৯৪১ সালে রুশ ভল্লুকদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ নেন। আলতাই পর্বতমালায় খনিজ সম্পদ লুট করতে আসা রুশদের উপর ১৯৪১ সালের ১০ মে ওসমান বাতুর তাঁর সাথীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেক রাশিয়ানদের সেদিন গুলি করে হত্যা করা হয়। একদিকে চীনা, অপরদিকে রাশিয়ানরা অনেক সামরিক চাপ প্রয়োগ করা স্বত্বেও উসমানদের আন্দোলনকে দমন করতে পারেনি। ১৯৪২ সালের মার্চ থেকে ১৯৪৩ এর এপ্রিলের মধ্যে উসমানের নেতৃত্বে চীনের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযান চালানো হয়, যার ফলে চীন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। না পেরে চীন উসমানের দ্বিতীয় স্ত্রী, ৩ পুত্র ও ৫ কন্যাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। এরপর তার একমাত্র ভাই দেলিলহান ইসলামোগ্লু কে ১৯৪২ সালে শহীদ করে দেয়।

১৯৪৩ সালের ২২ই জুলাই বুলগুনের একটি অনুষ্ঠানে উসমান বাতুরকে আলতাই কাজাকের মজলুম জনগণের শাসক হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তারপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। মুসলিম ভূমি উদ্ধারের অদম্য স্পৃহা তাকে প্রচন্ড আন্দোলিত করতে থাকে। মজলুমদের অধিকার ফিরিয়ে আনার বাসনায় ছুটে চলা দিগ্বিজয়ী উসমান ১৯৪৫ সালে হাতে গোনা কয়েকটি শহর ব্যতীত সমগ্র পূর্ব তূর্কিস্তানকে চাইনিজ দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে দখলদার চাইনিজরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। উসমান বাতুরের বিজয়াভিযান রুখতে তারা উক্ত অঞ্চলে সদলবলে অভিযান চালায়।

আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র আর অধিক সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আক্রমণের ফলে অবশেষে ১৯৫১ সালে চাইনিজরা কানাম্বালে উসমান বাতুরকে অবরুদ্ধ করতে সক্ষম হয়। তারা তাকে গ্রেফতার করে পূর্ব তূর্কিস্তানের উরুমকিতে নিয়ে আসে। পরদিন অর্থাৎ ২৯ শে এপ্রিল ১৯৫১ সালে দখলদার চীনা প্রশাসন উসমান বাতুরকে জনসম্মুখে গুলি করে শহীদ করে দেয়।

আর এর মাধ্যমেই একটি জাতির বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার সূর্য অস্তনমিত হয়ে আসে।

গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে সাহসী বীর উসমান বাতুরের মুখসৃত শেষ উক্তিটি নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহকে আজো প্রেরণা যোগায়ঃ-

“আমি মৃত্যুবরণ করতে পারি, কিন্তু জেনে রাখো! কিয়ামত অবধি আমার জাতি জিহাদ চালিয়ে যাবে।”

.
উল্লেখ্য পূর্ব তুর্কিস্থানের মুসলিমদের উপর কমিউনিস্ট চায়নার অত্যাচার নির্যাতন এখনো অব্যাহত রয়েছে। ইসলামের উপর ক্র্যাকডাওন চালাচ্ছে চীন সরকার। পূর্ব তুর্কিস্থানের জনসংখ্যা আড়াই কোটির মতো। এরমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মুসলিমকে চীন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আটকে রেখেছে। গণধর্ষণ, শুকূরের মাংস খেতে বাধ্য করা, মেডিকেল এক্সপেরিমেন্ট, অত্যাচার- নির্যাতন, আল্লাহকে গালি দিতে বাধ্য করা, ব্রেইনওয়াশ ইত্যাদি ক্যাম্পে বন্দী মুসলিমদের নিত্য সঙ্গী। শিশুদেরকে তাদের বাবা মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে নাস্তিক হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। রোযা রাখা, পর্দা করা, দাড়ি রাখা, কুরআনের কপি রাখা এমনকি সালাম দেবার মতো নিরীহ আমলও নিষিদ্ধ করেছে চীন সরকার। অসংখ্য মসজিদ ধ্বংস করছে, উইঘুরদের শরীর থেকে অঙ্গ কেটে নিয়ে বিক্রি করছে, উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করছে। উইঘুরদের বাড়িগুলোতে প্রায় ১০ লক্ষ এজেন্ট পাঠিয়েছে চীন সরকার। এরা উইঘুরদের সাথে আত্মীয় পরিচয়ে থাকে। রাতে উইঘুর নারীদেরকে বাধ্য করে এক বিছানায় থাকতে। চীন সরকার উইঘুর মুসলিমদের নাম নিশানা মুছে দিতে চাইছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সৌদি আরব, পাকিস্তানসহ অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ একাজে চীনকে সহায়তা করছে। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোও নীরবতা বজায় রেখেছে। পূর্ব তুর্কিস্থানের অসহায় মুসলিমরা উসমান বাতুরের মতো একজন বীরের পথ চেয়ে রয়েছে। উসমান বাতুরের আজ বড় বেশী প্রয়োজন।

১টি মন্তব্য

  1. এখানে afn রেডিও টুইটারে সংবাদ প্রকাশ কালে মনে হচ্ছে হাতে আঁকা ছবি ব্যবহার করেছে অথচ ক্যামেরা দিয়ে তোলা জায়েজ ছবি ব্যতিত( যে ছবি কাগজে বের করা হয়নি ) সব ছবি না জায়েজ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে অসুস্থ মুসলিম সাংবাদিককে হাসপাতাল বেডে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে অমানবিক নির্যাতন
পরবর্তী নিবন্ধভিক্টোরি ফোর্স-২ শিরোনামে সামরিক মহড়ার ভিডিও প্রকাশ করল তালিবান