সম্প্রতি রমজান মাসের শেষ দিকে ফিলিস্তিনের শেখ জাররাহ এলাকার চারটি মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ করার ইসরাঈলী চক্রান্তের প্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামেন ফিলিস্তিনের মুসলিমরা। আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন তারা।
আন্দোলনরত ফিলিস্তিনি মুসলিমদের মতে, ‘আগ্রাসী ইহুদিরা এভাবেই ধীরে ধীরে সমগ্র ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উচ্ছেদ করবে। আজ যদি প্রতিবাদ না করি, তবে যে আমরা বেঁচে যাবো, এমন নয়। বরং কাল একইভাবে আমাদেরকেও উচ্ছেদ করা হবে।’
আল-আকসা প্রাঙ্গণে মুসলিমরা সালাত আদায়রত অবস্থায় তাদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায় সন্ত্রাসী ইহুদিরা। তারা বিমান হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনের অনেকগুলো বহুদল ভবন গুড়িয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৮ শিশুসহ অন্তত ১৯২জন মুসলিমকে হত্যা করেছে, আহত করেছে আরো সহস্রাধিক জনকে। বিপরীতে ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নিজেদের স্বল্প সামর্থ্যানুযায়ী আগ্রাসী ইহুদিদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন। ইট-পাথর আর রকেট ছুড়ে আগ্রাসী ইহুদি বাহিনীকে জবাব দিচ্ছেন। এতে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ১০জন নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
মুসলিমদের এই প্রতিরোধ যুদ্ধকে বরাবরের মতোই সন্ত্রাস এবং ইহুদিদের আগ্রাসনকে প্রতিরক্ষা বলে অভিহিত করার চেষ্টা করেছে ইহুদি আগ্রাসনের রক্ষক আন্তর্জাতিক কুফফারগোষ্ঠীর মোড়ল আমেরিকা। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছে, ‘ইসরায়েলের অধিকার আছে নিজেদেরকে প্রতিরক্ষা করার।’
ইসরায়েলের নিজেকে প্রতিরক্ষা করার অধিকার থাকার এই বক্তব্য বাইডেনের নয়, এটা বরং ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ইসরায়েলী আগ্রাসনের বৈধতা প্রমাণের জন্য ইসরায়েলীদের প্রচারিত একটি মৌলিক নীতি। The Israel Project নামে একটি ‘ভাষা ডিকশনারি’তে মিডিয়ায় কীভাবে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় কথা বলা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইসরায়েলের মিডিয়া প্রতিনিধিত্বকারী এবং মুখপাত্ররা এই নীতির আলোকেই কথা বলে থাকে। সেই বইটিতে ‘GAZA: ISRAEL’S RIGHT TO SELF DEFENSE & DEFENSIBLE BORDERS’ শিরোনামের অধ্যায়ে দুটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে,
এক. রকেট হামলা থেকে আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের আছে।
দুই. ইসরায়েলের সুরক্ষিত সীমান্তের অধিকার আছে।
এই দুটি মূল বিষয়কে সামনে রেখে তারা বিভিন্ন জরিপে আমেরিকান লোকদের মতামত বুঝতে চেয়েছে। যেমন:
‘ইসরায়েলের উচিত ১৯৬৭ সালে দখলে নেওয়া সকল ভূমি ফেরত দেওয়া।’
‘ইসরায়েলের উচিত তার এয়ারপোর্টের আশপাশের পাহাড়গুলো বিদ্যমান রাখা, যেন সন্ত্রাসীরা তাদের বিমানগুলোতে রকেট হামলা না করতে পারে।’
এ দুটি বার্তাকে সামনে রেখে একটি জরিপ করেছে। এই জরিপের উদ্দেশ্য এটা জানা যে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের যে ভূমিগুলো দখল করেছে, সেগুলো নিজেদের দখলে রাখার ব্যাপারে আমেরিকানদের মতামত কী। মিডিয়ায় কীভাবে বক্তব্য দিলে মানুষের সমর্থন আদায় করা যাবে।
জরিপের মধ্যে প্রথমটির ব্যাপারে ৫৮% আমেরিকান দৃঢ়ভাবে মত দিয়েছে। অর্থাৎ তাদের মতে, ইসরায়েলের উচিত ১৯৬৭ সালে দখল করা সকল ভূমি ফেরত দেওয়া। আবার দ্বিতীয় বার্তায় কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলার পর একই লোকদের ৫২% মত দিয়েছে যে, ইসরায়েলের উচিত তার বিমানগুলো রক্ষার জন্য ঐ সকল ভূমিগুলোর কিছু দখলে রাখা। তো এই মতামত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইসরায়েলীরা শব্দের কৌশলগত ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের দখলদারিত্বের ব্যাপারে আমেরিকানদের সমর্থন অর্জন করতে পারে। এরপর তারা আমেরিকানদের আরো বেশি সমর্থন আদায়ের জন্য আরো উত্তম শব্দাবলি ব্যবহার করার চেষ্টা করে। যেমন:
‘ইসরায়েলের উচিত নয় শান্তির নামে আরো ভূমি উৎসর্গ করা। কারণ, তারা বার বার এভাবে ভূমি দিয়েছে, কিন্তু বিপরীতে পেয়েছে আরো যুদ্ধ।’
এই বার্তার জরিপে আবার ৭১% আমেরিকান একমত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮% দৃঢ়ভাবে এই বার্তার সাথে একমত। তার মানে, ইসরায়েলীরা ১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনের যে ভূমিগুলো দখল করেছিল, সেগুলো নিজেদের দখলে রাখার ক্ষেত্রে তিনটি বার্তার মধ্যে এই বার্তাটিতে সর্বাধিক আমেরিকানকে তারা একমত করতে পেরেছে। অথচ, তিনটি বার্তার ফলাফল একই, কেবল শব্দের কৌশলগত ব্যবহারটা ভিন্ন ছিল।
এভাবে শব্দের কৌশলগত ব্যবহারে সম্ভবত অনেক মুসলিমও বিভ্রান্ত হবেন। যেমন: ইসরায়েলের অধিকার আছে নিজেকে প্রতিরক্ষা করার; এই বার্তার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেকে একটি বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি নিতে চায়। কারণ আপনি যদি মনে করে নেন, ইসরায়েলের নিজেকে প্রতিরক্ষার অধিকার আছে, তার মানেই হলো ফিলিস্তিনের যে ভূমিগুলো তারা দখল করে নিয়েছে, সেগুলোতে রাষ্ট্র হিসেবে থাকার অধিকার তাদের আছে।
এখন এই বার্তার জবাবে অনেক মুসলিমকে বলতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিদেরও অধিকার আছে নিজেদের প্রতিরক্ষা করার। কিন্তু এই বার্তা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার আদায়ের বার্তা বহন করে না। কারণ, এই বার্তার মানে হলো যদি ইহুদিরা এখন হামলা চালানো বন্ধ করে দেয়, তবে আপনারও কর্তব্য হামলা বন্ধ করা। কারণ, আপনার প্রতিরক্ষার প্রশ্ন আসবে যখন আপনাকে আঘাত করা হবে। যেহেতু ওরা আপনাকে আঘাত করবে না, তাই আপনিও প্রতিরক্ষার কথা বলে আঘাত করতে পারবেন না। অথচ, ফিলিস্তিনিদের অধিকাংশ ভূখণ্ডই ইহুদিদের দখলে। এই অবস্থায় ইহুদিরা হামলা না করলেও তাদের তত ক্ষতি নেই (যদিও তারা এটা করবে না, বরং হামলা চালাবেই); কিন্তু মুসলিমরা যদি ইহুদিদের মতো প্রতিরক্ষার অধিকারের কথা বলে নিজেদের ভূমি পুনরুদ্ধারের কথা না তোলে, তবে সেটা তাদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার দেবে না। তাই মুসলিমদেরকে বলতে হবে, ‘মুসলিমদের নিজভূমি পুনরুদ্ধারের অধিকার আছে।’
কারণ, বর্তমান অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলসহ পুরো ভূখণ্ডটাই মুসলিমদের। মুসলিমরা নিজেদের অধিকার তখনই ফিরে পাবে, যখন পুরো ভূখণ্ডটি মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাই, ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি জায়গাও ইসরায়েলের দখলদারিত্বে থাকা অবস্থায় কোনো শান্তি আলোচনাই প্রকৃতপক্ষে ‘শান্তি আলোচনা’ নয়, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইনসাফ নয়। এসবের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাধানও হবে না। ফিলিস্তিন সমস্যার একমাত্র সমাধান অব্যাহতভাবে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে সমগ্র ভূখণ্ডটি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য ইসরায়েলে আঘাত হানার পাশাপাশি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জায়োনিস্ট ও তাদের রক্ষকদের স্বার্থে আঘাত হানতে হবে। তাদেরকে যেকোনোভাবে সম্ভব, দুর্বল করতে হবে।
লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দি, নির্বাহী সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
সুন্দর উপস্থাপনা, জাযাকাল্লাহু খায়রান। আল্লাহ তায়ালা আপাদের আরও জ্ঞান, প্রজ্ঞা,কৌশল দান করুন। আমীন।
আপনারা কখন বর্তমান মুসলিম শাসকদের কে বিশ্বাস করবেননা তারা কাফেরদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে তারা যেমনি ভাবে কাফেরদের কে মুসলিম ভূখণ্ডে আগ্রাশন চালাতে সাহায্য করে তেমনি ভাবে কাফেরদের হয়ে মুসলিমদের দমিয়ে রাখে
একদম সঠিক বলেছেন তাদের কখনো বিশ্বাস করা উচিত নয় তারা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারেন কিন্তু তারা হয়ে উটেছে সকুলার
ফিলিস্তিনি মুসলিমদের সাহাজ্জে আলকায়দার ভূমিকা কি আছে জান্তে পারলে আনন্দিত হতাম৷
Jina
আল কায়দায় তাদের ১ম শত্রু হিসেবে আমেরিকাকে চিহ্নিত করার মূল কারনই আল আকসার দখলদারিত্ব মুক্ত।
আল কায়েদা দেখল যে ইসরাইলকে অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে আমেরিকা তাই ইসরাইলকে ধ্বংস করতে হলে আমেরিকাকে দুর্বল করতে হবে তাই আল কায়েদা তাদেরকেই প্রধান টার্গেট করেছে।
আর এছাড়া আল কায়েদার মুজাহিদদের ২০০৯ সালে ইবনে তাইমিয়া রাহি: মাসজিদে হত্যা করেছিল হামাস।
তাই তারা সেখানে সরাসরি কাজে না থাকলেও আল কায়েদার মানহান অনুস্মরণ করে এমন দল সেখানে আছে আলহামদুলিল্লাহ।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত পড়শুনা করতে পারেন
১/ একটি কৌশলগত পর্যালোচনা
২/ ফিলিস্তিন একটি নিবে যাওয়া প্রদিপ (নাম টা হয়ত এমন ইন শা আল্লাহ)
ভুলে গেলে চলবে না, মুসলিমদের ভূমি সমগ্র পৃথিবী। কাফেরের দখলে এক ইঞ্চি ভূমি থাকাকেও আমরা মেনে নিবো না। পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি ভূমি আমাদের করায়ত্তে থাকতে হবে।