ভারত | এবার শতবর্ষী মসজিদ গুঁড়িয়ে দিল হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন

0
1129
ভারত | এবার শতবর্ষী মসজিদ গুঁড়িয়ে দিল হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকিতে হিন্দুত্ববাদী মালাউন যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন শতবর্ষী আরো একটি প্রাচীন মসজিদ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা গার্ডিয়ান জানায়, উত্তর প্রদেশের স্থানীয় প্রশাসন রাজ্যের উচ্চ আদালতের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে শতবর্ষের পুরাতন গরীব নেওয়াজ আল মারুফ মসজিদ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদটি উওর প্রদেশের রাম সানেহি ঘাটে প্রায় একশো বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল।

জানা যায়, গত ১৭ মে সোমবার, ভারতের মালাউন পুলিশ ও কথিত নিরাপত্তা কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে এলাকার লোকেদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে বুলডোজার নিয়ে এসে মসজিদটি গুড়িয়ে দেয়। এরপর মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাশের নদীতে ফেলে দেয়। ঐ সময় মসজিদ এলাকার এক মাইলের মধ্যে মুসলিমদের প্রবেশ রোধ করতে মালাউন বাহিনী কড়া পাহারায় মোতায়েন করে শত শত সদস্যকে।

মসজিদ কমিটির সম্মানিত সদস্য মাওলানা আব্দুল মোস্তফা গার্ডিয়ানকে জানান, “মসজিদটি একশো বছরের পুরনো এবং হাজার হাজার মুসলিম প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের লক্ষে নিয়মিত মসজিদটিতে আসতেন।”

অপর এক বিবৃতিতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রেহমানী বলেন, “আইনগত কোন সমর্থন ছাড়াই এই মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।”

উত্তর প্রদেশের আইন বিভাগের ছাত্র ও বিশিষ্ট সমাজ কর্মী সৈয়দ ফারুক আহমদ আল জাজিরাকে জানান,”হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন গত এক মাস ধরে মসজিদটিতে নামাজ পড়তে বাঁধা দিয়ে আসছিল।”

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,”হিন্দুত্ববাদী যোগী প্রশাসন ১৯ শে মার্চ মসজিদের প্রবেশ পথে মুসল্লীদের বাঁধা দেয়ার জন্য একটি দেয়াল নির্মাণ শুরু করে। যারা প্রতিবাদ করে তাদেরকে প্রহার করা হয়, এমনকি অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে।”

আহমদ জানান,”যারা তাদের বিরোধিতা করেছিল, তাদেরকে পিটিয়ে গ্রেফতার করা হয়। মুসলিমদের ভয় দেখানোর জন্য গ্রেফতারকৃতদের নামে বিভিন্ন ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে। তারা প্রায় ৩০ জন মুসলিমকে গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় মুসলিমদের অনেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের হেনস্থা থেকে বাঁচতে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন।”

আহমদ আরো বলেন,” লোকেরা মসজিদ ভাঙ্গার সময় ভয়ে এমনকি জানালা পর্যন্ত খুলেনি। তারা এতোটাই ভীত-সন্তস্ত্র ছিলো যে, কেউ “টু” শব্দও করেনি।”

দ্যা গার্ডিয়ান জানায়, এই ধ্বংসাভিযান ২৪ শে এপ্রিলে জারি হওয়া উচ্চ আদালতের আদেশের লঙ্ঘন ছিল, যেটিতে বলা হয়েছিল ৩১ শে মে অবধি মসজিদটিকে উচ্ছেদ বা ধ্বংস করা থেকে রক্ষা করা হবে।

কিন্তু স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন মসজিদটির উপস্থিতি চ্যালেঞ্জ করে ১৫ ই মার্চ মসজিদ কমিটির নিকট কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। নোটিশে কীভাবে মসজিদের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে এবং এটি একটি অবৈধ কাঠামো উল্লেখ করে ভেঙ্গে ফেলার ইচ্ছা পোষণ করা হয়।

আহমদ জানান,”কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখিত জমির প্লট নাম্বার মসজিদের অন্তর্গত নয়। তিনি দাবি করেন, মসজিদটি সড়ক থেকে ১০০ ফুটেরও অধিক দূরে অবস্থিত এবং কোন যানজটকেও ব্যহত করেনি।”

নোটিশের জবাবে মসজিদ কমিটি একটি বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া প্রেরণ করে, যেখানে নথিপত্রে দেখানো হয় ১৯৫৯ সাল থেকেই মসজিদটিতে সরকারি বিধিমালা মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তাদের প্রতিউত্তর আমলে নেয়নি।

বরাবাঁকি জেলার প্রধান নেতা মাওলানা আব্দুল মোস্তফা জানান,”বরাবাঁকিতে গরীব নেওয়াজ আল মারুফ মসজিদ ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়। অত্র এলাকার মুসলিমরা মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলায় খুবই মর্মাহত হয়েছেন।”

তিনি আল জাজিরাকে আরো বলেন,”মসজিদটি রাজস্ব বোর্ডের রেকর্ডে আছে। এটি সম্পূর্ণই বৈধ ছিল। মুসলিমরা যুগযুগ ধরে মসজিদটিতে নামাজ আদায় করে আসছিলেন। এটি ভেঙ্গে ফেলা মুসলিমদের উপর স্পষ্ট অত্যাচার।
আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। যারা মসজিদটি ভেঙ্গেছে তাদের জবাবদিহি করা উচিত।”

Pics-Art-05-20-08-44-42

IMG-20210520-084229-584
IMG-20210520-084231-445
IMG-20210520-084227-516

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুনের পর আউয়ালকে ফোন, ‘স্যার, ফিনিশ’
পরবর্তী নিবন্ধসোমালিয়া | মুজাহিদদের তীব্র হামলায় ১৬ মুরতাদ সৈন্য নিহত