“লিয়াকত আলী গুলি করেছিলেন সিনহা মোহাম্মাদ রাশেদ খানকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। এ সময় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে পা দিয়ে সিনহার গলায় চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।” – এভাবেই সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাড়িয়ে মেজর সিনহার হত্যার লোমহর্ষণ বর্ণনা আদালতের সামনে তুলে ধরেন সিফাত।
ঘটনার সময় সিনহার সাথেই ছিলেন তার সহকর্মী সাহেদুল ইসলাম সিফাত, তিনি সিনহা হত্যা-মামলারও দুই নম্বর সাক্ষী।
মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তিনি আদালতকে বলেছেন, “লিয়াকত ফোনে বলেছে— ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ আরেক ফোনে তিনি বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারে ধরে ফেলেছি।’ সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং মাথা চেপে ধরেন। এর পর পুলিশ এলে লিয়াকত নির্দেশ দেন আশপাশের মানুষকে ভয় দেখাতে, যাতে কেউ সিনহাকে সাহায্য করতে না পারে, ছবি বা ভিডিও করতে না পারে।”
সাক্ষ্যে তিনি আরও বলেন, “কিছুক্ষণ পর প্রদীপ আসে, কাকে যেন ফোন করে, লিয়াকতের সঙ্গে কথা বলেন, সিনহার দিকে এগিয়ে যান, তার বাম পাঁজরে সজোরে লাথি মারেন। এরপর তিনি জুতা দিয়ে বাম গলায় চাপ দেন, তখন সিনহা নাড়াচাড়া করে ও কাঁপতে থাকে। একপর্যায়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে প্রদীপ গলা থেকে পা সরিয়ে নেন। এসময় রুবেল সাগরকে বলেন, গাড়ি থেকে ইয়াবা, গাঁজা নিয়ে আসতে হবে। রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে আসামিরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুটি মিথ্যা মামলা করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। প্রদীপের প্ররোচনায় ও ফোনে নির্দেশিত হয়ে লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেন।”
উল্লেখ্য, হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী প্রদীপের বিরুদ্ধে কক্সবাজার ও টেকনাফে ইয়াবা ও সন্ত্রাসবিরোধী বিভিন্ন মামলায় নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার, গুম ও চাঁদা দাবি সহ চাঁদা না পেয়ে প্রায় দুই শতাধিক নিরীহ মুসলিমকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। মূলত টেকনাফ এলাকার মাদকবাণিজ্য প্রদীপ একাই নিয়ন্ত্রণ করতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেত্রী নাজনিন সারোয়ার কাবেরি। বহু নিরীহ মুসলিমকে নির্যাতন, হত্যা এমনকি নির্যাতিতের পরিবারের মহিলাদেরকে তার সাথে অনৈতিক কাজে বাধ্য ও তাদেরকে ধর্ষণ করেছে প্রদীপ। আর প্রদীপের মাদকবাণিজ্য ও নানান কুকীর্তির তথ্যপ্রমাণ মেজর সিনহার কাছে চলে এসাতেই প্রদীপ তাকে হত্যা করেছে বলে জানান কাবেরি।
এছাড়াও এমন জঘন্য সন্ত্রাসী প্রদীপের হয়ে মামলা লড়ার জন্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্তকে ধিক্কার জানিয়েছেন এই আওয়ামীলীগ নেত্রী।
নানান টালবাহানা আর ঠুনকো অজুহাত তুলে রানা দাশ গুপ্ত মামলার কাজ বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলেও জানা যায় বাদীপক্ষের আইনজীবীর নিকট থেকে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে একটি অনলাইন টকশো-তে উপস্থিত হয়ে মামলার সাক্ষীদেরকে একটি মহল ভয়ভীতি দেখিয়ে সাক্ষ্যদানে বিরত রাখার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছিলেন মামলার বাদী শারমিন।
আদালতের বাইরে শারমিন তাই কাতর কণ্ঠে আকুতি জানান, “সিনহা হত্যার বিচারের রায়ের দিকে সারা বাংলার মানুষ তাকিয়ে আছে। আমি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”