বাক্-স্বাধীনতা নির্ধারিত হয় একেক সমাজে একেক রকমের মতামতের দ্বারা। একটি ইসলামী সমাজে বাক্-স্বাধীনতা নির্ধারিত হয় ইসলামী বিধি-নিষেধ ও মূল্যবোধের অধীনে। এই অনুসারে একজন ব্যক্তি কেবল তখনই তার মতামত প্রকাশ করতে পারে, যখন তা ইসলামী মূল্যবোধ, জাতীয় স্বার্থ এবং ঐক্য রক্ষার্থে হয়। আর একই সাথে যা এসব বিষয়াদির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
আফগানিস্তান একটি ইসলামী দেশ। এখানে রয়েছে প্রায় ৯৯ শতাংশ মুসলিম। আর এদেশে রয়েছে পূর্ণ ইসলামী ব্যবস্থা। আফগানিস্তানে বাক্-স্বাধীনতা গৃহীত হয় ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে। এমন কোন মন্তব্য আফগানিস্তান গ্রহণ করে না, যাতে করে ক্ষতি হয় দেশটির জাতীয় স্বার্থ এবং ঐক্যের এবং অসম্মানিত হয় মানুষের মর্যাদার।
আফগানিস্তানে পশ্চিমা আগ্রাসন এবং এখানে তাদের পুতুল শাসক আসার পর পর থেকেই শুরু হয় প্রতারণামূলক কথিত বাক্-স্বাধীনতা। এদেশীয় কিছু মহল বাক্-স্বাধীনতাকে কিছু বিদেশী চক্রের সহায়তায় এমনভাবে ক্যালিব্রেট করেছে, যার দরুন এখন সবাই যা খুশি তাই বলতে পারে। এটি বাক্-স্বাধীনতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। বাক্-স্বাধীনতাকে তারা এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, যেখানে তারা লক্ষ্য করে না- মানুষের মর্যাদার প্রতি ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি এবং সম্মান করে না আফগানিস্তানের ও ইসলামের সংস্কৃতির প্রতি। বরং তারা আফগানিস্তানের সর্বাত্মক সংস্কার ও সম্মানের নামে ছড়িয়ে দেয় দুর্নীতি। এমনকি তারা জাতিগত ঐক্যকে খর্ব এবং আফগান ও ইসলামী মূল্যবোধকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করার পাশাপাশি, নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে পাশ্চাত্যদের অশ্লীল আদর্শ দ্বারা। আর যদি কেউ এতে তাদের বিরোধিতা করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তার আওয়াজ তুলেছে- তবে তারা তাকে হুমকি দিয়েছে, কারারুদ্ধ করেছে এবং নির্মমভাবে শহীদ করেছে। মোটকথা, আফগানিস্তানে বাক্ স্বাধীনতার আড়ালে আমাদের মিডিয়া এবং এর প্রচারকরা মূলত পাশ্চাত্যদের আদর্শ, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে প্রচারের সেবায়ই লিপ্ত থেকেছে।
আজ ২০ বছরের যুদ্ধের পর ইসলামী ইমারাত সমগ্র দেশের শাসক হয়ে উঠতে পেরেছে। আর এখন আমাদের একটি পূর্ণ শরিয়াহ্ ব্যবস্থা রয়েছে এবং এর জন্যে শুকরিয়া সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে। তবুও, কিছু তথাকথিত পশ্চিমা ও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারার বুদ্ধিজীবীরা মিথ্যা বাক্-স্বাধীনতার অজুহাতে এদেশে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এবং তারা তরুণদের পরামর্শ দিচ্ছে তাদের মূল সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার। তারা মূলধারার প্রচার মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া উভয় জায়গাতেই বিদ্রোহের আওয়াজ তোলার মাধ্যমে একটি বিশুদ্ধ ইসলামী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জনগণকে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করছে। এর জন্য তারা কখনও মানুষদের অসম্মান করছে, কখনও জাতীয় মূল্যবোধ নষ্ট করছে, কখনও জাতীয় ঐক্য ক্ষুণ্ন করছে। কখনও আবার মুসলিম নারীদের জন্য পশ্চিমাদের কথিত ‘নারী অধিকারের’ দাবি করছে, এবং কখনও কুসংস্কার ও জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। আর এসব কাজেই পশ্চিমারা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থায়ন করছে।
এসব কিছুরই মূল উদ্দেশ্য হলো আফগানিস্তানের ইসলামী ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করা এবং দেশের মানুষকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা। আর এর সব কিছুই তারা করছে বাক্-স্বাধীনতার অপব্যবহারের মাধ্যমে।
একইভাবে কিছু লোক বাক্-স্বাধীনতার শ্লোগানের আড়ালে মুক্ত করতে চায় বড় বড় অপরাধীদের। এবং মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয় তাদের ইসলামী মূল্যবোধ ও আফগান সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এর সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করার। সুতরাং তারা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি করতে চায় এবং আমাদেরকে আমাদের মূল উদ্দেশ্য পূরণ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। কারণ এটি এখন সুস্পষ্ট যে, কিছু অপরাধী নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য তাদের মিথ্যা বাক্-স্বাধীনতা ভাড়া করেছে। আর যখনই কেউ তাদের অন্যায় বা অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে, তখনই তারা তাদের মুখ বন্ধ করে দেবার প্রয়াস চালিয়েছে। কিন্তু যখন তাদের অপরাধের সুষ্ঠু অনুসন্ধান করা হয়েছে তখন উন্মোচিত হয়েছে তাদের অপরাধের একটি ভয়ংকর গল্প।
সুতরাং, মিথ্যা বাক্-স্বাধীনতার আড়ালে কারোরই কোন অপরাধীকে সমর্থন করা উচিত নয়। এটি একই সাথে ব্যক্তি ও জাতীয় মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর। কারণ বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি আইনে জাতীয় স্বার্থ এবং মূল্যবোধ রক্ষার উপর ভিত্তি করে সেখানের বাক্ স্বাধীনতার জন্য সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এবং যে কেউ এই সীমা অতিক্রম করেছে, তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
তালিবানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে গৃহীত ও অনূদিত।
মূল আর্টিকেল : Fraudulent Freedom of Speech or Quitting a Culprit…?
লিংক : https://tinyurl.com/yckxhxzm
মূল লেখক : ইনায়েতুল্লাহ খামুশ
অনুবাদক : আবু-উবায়দা