ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের চাপে কর্নাটকে হিজাব নিষিদ্ধ করা নিয়ে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রদেশের একটি কলেজে নিষিদ্ধ হল হিজাব। গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের দাতিয়া জেলার এক সরকারি কলেজে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহিলা মোর্চা‘দুর্গা বাহিনী’র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী ‘দুর্গা বাহিনী’র দাবি, কলেজ ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে আসতে পারবেন না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হল নয়া বিতর্ক।
গত সোমবার দুই কলেজছাত্রী হিজাব পরে ক্লাসে ঢোকার পর আন্দোলন শুরু করে হিন্দুত্ববাদী ‘দুর্গা বাহিনী’। তাদের দাবি, কলেজ ক্যাম্পাসে হিজাব নিষিদ্ধ করতে হবে। তার পরেই কলেজ কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে সাতনার একটি কলেজে হিজাব পরে আসার ‘কারণে’ এক ছাত্রীকে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিতে বলে প্রিন্সিপাল।
এ নিষেধাজ্ঞাকে মুসলিমদের কোণঠাসা করার উপায় হিসেবেই মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। কারণ হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ মুসলিম।
উত্তরপ্রদেশে, দেশের উত্তরে এবং নয়াদিল্লির সীমান্তবর্তী, দুই ডজনেরও বেশি হিন্দুত্ববাদী যুবকের একটি দল সোমবার আলিগড় জেলার ধর্ম সমাজ কলেজে পৌঁছে এবং এর আধিকারিকদের কাছে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছে যাতে হিজাবের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তাদের গলায় ছিল গেরুয়া শাল যা বিজেপি সমর্থিত হিন্দুরা পরে থাকে। কলেজের প্রধান প্রক্টর মুকেশ ভরদ্বাজ বলেছে, তিনি লোকেদের চিনতে পারেননি।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হিন্দুত্ববাদী একদল যুবক বলছে আমরা আদালতের মাধ্যমে হিজাব নিষিদ্ধ করাবো। পরে মাইকে আযান দেওয়া নিষেধ করাবো। নামায পড়া নিষেধ করাবো। এভাবেই মুসলিমদের কোণঠাসা করতে থাকবো।
তারা আরো বলেছে, সেদিন মুসলিম ছাত্রী মুসকান গেরুয়া হিন্দু যুবকদের সামনে আল্লাহু আকবার তাকবীর দিয়ে জীবন নিয়ে ফিরে গেছে এটাই বেশি। উচিৎ ছিল সেখানেই শেষ করে দেওয়া। তারা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর মুসলিম হামলা চালায় বলে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভারতে মুসলিমদের উপর চলমান হামলাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
উত্তরপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল থেকে হিন্দুত্ববাদী সন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথ শাসন করে। যেখানে বর্তমানে বিধানসভা নির্বাচন চলছে এবং হিন্দু-মুসলিম বিরোধ প্রায়ই রাজ্যে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এর আগে গত সোমবার হাইকোর্ট স্কুল ও কলেজগুলোতে হিজাব বা অন্য কোনো ধর্মীয় পোশাকের অনুমতি না দেয়ার অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছে। সেই অন্তর্বর্তী আদেশ এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট।
এদিকে, হিজাব নিয়ে রাজ্যের কিছু অংশে অপ্রীতিকর ঘটনার পর গত বুধবার থেকে বন্ধ থাকার পর সোমবার কর্ণাটকের উচ্চ বিদ্যালয়গুলো আবার চালু হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে উদুপি, দক্ষিণ কন্নড় এবং বেঙ্গালুরু জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
উদুপি জেলায় সোমবার শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর যে, উচ্চ বিদ্যালয়গুলো আবার খুলেছে। হিজাব পরে স্কুল ক্যাম্পাসে আসা মুসলিম মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে প্রবেশের আগেই তা খোলতে বাধ্য করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এদিন নির্ধারিত পরীক্ষা চলেছে। উদুপি শহরে এবং স্কুলের কাছাকাছি পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। যেন কেউ হিজাব খুলতে না চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
উদুপি জেলা প্রশাসন সোমবার থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার সমস্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ মিটার ব্যাসার্ধে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
সোমবার থেকে স্কুল পুনরায় খোলা হলেও কিছু ছাত্রীকে হিজাব খুলতে বাধ্য করে স্কুলে ঢোকার দৃশ্য সামনে আসতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, জনবহুল রাস্তার মাঝেই হিন্দু শিক্ষিকারা ছাত্রীদের হিজাব খুলতে বাধ্য করছে। ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সোমবার শিক্ষার্থীরা যুক্তি দিয়েছিল যে তাদের এটি করতে নিষেধ করার মতো কোনো আইন নেই। তাদের পক্ষ থেকে শীর্ষ আইনজীবী দেবদত্ত কামাত জানিয়েছিলেন যে, হিজাব পরার অধিকার সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধীনে সুরক্ষিত। কিন্তু শুধু মুসলিম বিদ্বেষের কারণে তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে মুসলিম নারীদের হিজাব খুলতে বাধ্য করছে।
তথ্যসূত্র:
—–
The move to ban Muslim girls and women from wearing the hijab at school has now sprewfrom Karnataka to Madhya Pradesh to Uttar Pradesh,
১/ ভিডিও লিঙ্ক: https://tinyurl.com/25mfsyrw
২/উত্তর প্রদেশে পৌঁছেছে হিজাব বিরোধ
https://tinyurl.com/yz7486ue