৬০ বছর বয়সী সাদের আলির ১২ সদস্যের যৌথ পরিবার নিয়ে জন্ম থেকেই আসামের ধুবরি জেলার রামরাইকুটি গ্রামে বাস করেন। এ গ্রামটি ভারত ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং আসাম-পশ্চিমবঙ্গ আন্তঃরাজ্য সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
সাদের আলী এবং তার বড় ভাই, ৬৬ বছর বয়সী মুজাম শেখ, কৃষি কাজ করেন। যখন বীজ বপন বা ফসল কাটার মৌসুম থাকে না, তখন তারা দিন মুজুরি করেন। তারা “দেশী” মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। তাদের পূর্বপুরুষরা যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করায় আসামের “আদিবাসী” হিসাবে তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিল সরকার।
কিন্তু হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ভারত থেকে সকল মুসলিম নিশ্চিন্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। ফলশ্রুতিতে শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ায় আসামের “দেশি” মুসলিমদেরকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই সাদা পোশাকে দুজন লোক তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে জানায়, তারা স্থানীয় আগমনি থানা থেকে এসেছে। সন্দেহভাজন বিদেশী হিসাবে সাদের আলীর পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই চার জন হচ্ছেন – সাদের আলী ও তার স্ত্রী মোলিনা বিবি এবং মুজাম শেখ ও তার স্ত্রী সালেহা বিবি। অথচ তারা আজন্ম এই এলাকাতেই বসবাস করছেন। তাদের পূর্বপুরুষরাও এখানকার অধিবাসী ছিলেন।
তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ধুবরি শহরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে যেতে হয়। (বিতর্কিত বিদেশীদের জাতীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধা-বিচারিক সংস্থা।)
সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মীদের বক্তব্য শুনে অবাক হয়ে কাঁদতে কাঁদতে আলী বললেন, “এটা লজ্জার বিষয়। আমরা ভারতীয় এবং এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আমার বাবার ১৯৪৭ সালের একটি স্কুল সার্টিফিকেট রয়েছে। তিনি ১৯৫০ এর দশকে সরকারী অফিসে কাজ করেছিলেন। তার নাম ১৯৫১ সালের এনআরসিতে রয়েছে। তিনি ১৯৫৮ সালে ভোটও দিয়েছিলেন।”
এনআরসি বা ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন হল আসামে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের একটি তালিকা। এটি প্রথম ১৯৫১ সালে সংকলিত হয়। তারপর গত ২০১৯ সালে তা আপডেট করা হয়।
সাদের আলী বলেন, “আমরা জন্মের পর থেকেই এখানে বসবাস করছি। আমার বাবা একটি সরকারী অফিসে কাজ করতেন। মাসে ৭-১০ রুপি বেতন পেতেন। এখন তার ছেলেদের তাদের জাতীয়তা প্রমাণের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের টাকা নেই। সরকার কোনো ভাবেই আমাদের সাহায্য করে না। তার পরিবর্তে আমাদের জাতীয়তা প্রমাণ করতে বলে আমাদেরকে কষ্ট দেয়।”
শুধু সাদের আলীর পরিবারের এই দুর্দশা তা নয়। আগমনি থানার একজন সীমান্ত পুলিশ কর্মকর্তার মতে, এ বছর তার সীমানার অধীনে বসবাসকারী অন্তত ১৫০ টি পরিবারকে এমন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই দেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের।
আসামের স্থানীয় হিসাবে বিবেচিত দেশি মুসলমানদের বংশ ধারা ঐতিহাসিক কামরূপ রাজ্য পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়। তাদের পূর্বপূরুষরা ১৩ শতকের দিকে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
আসামের সকল থানায় সীমান্ত পুলিশ ইউনিট রয়েছে। এছাড়া সীমান্ত গ্রামে বসানো হয়েছে ওয়াচ পোস্ট। সীমান্ত পুলিশ এসব মামলা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। যদি ট্রাইব্যুনাল তদন্তাধীন ব্যক্তিদের বিদেশী বলে মনে করে, তবে তাদের আসামের ডিটেনশন কেন্দ্রে রাখা হতে পারে বা বাংলাদেশে নির্বাসিত করা হতে পারে। বাংলাদেশ খুব কমই তাদেরকে নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করে। তাই আসামে ঘোষিত বিদেশিদের অনেককেই ডিটেনশন কেন্দ্রে বছরের পর বছর মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
ভয়ের বিষয় হলো, আসামে মুসলিম জনসংখ্যা হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি। হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস মোদি সরকার ধীরে ধীরে এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে ভারত থেকে বিতাড়িত করার কুট কৌশল অবলম্বন করছে।
তথ্যসূত্র:
——–
1. They were officially declared ‘indigenous’ to Assam. Then they were asked to prove their citizenship (Scroll)
– https://tinyurl.com/yckzfh6z