কয়েক বছর বন্দী থাকার পর আমেরিকা ও ফ্রান্সের দুই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে আল-কায়েদার পশ্চিম আফ্রিকা শাখা জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন (জেএনআইএম)।
আঞ্চলিক সূত্র থেকে জানা যায়, জেএনআইএম প্রশাসন গত ২০ মার্চ জেফ উডক এবং অলিভিয়ার ডুবোইস নামের ২ বন্দীকে মুক্তি দিয়েছেন। তারা আমেরিকান ও ফ্রেঞ্চ নাগরিক বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সূত্রমতে, জেফ উডক ৬ বছরের অধিক সময় ধরে এবং ডুবোইস প্রায় ২ বছর যাবত জেএনআইএম মুজাহিদদের হাতে বন্দী ছিল। দীর্ঘ সময় ধরেই তাদের মুক্তির বিষয়ে মুজাহিদদের সাথে সমোঝতায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিল পশ্চিমারা।
গত ২০ মার্চ, এই দুই বন্দীকে নাইজেরিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে জেএনআইএম প্রশাসন। এরপর তাদেরকে নাইজারে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে বিমানযোগে ফ্রান্স ও আমেরিকায় ফেরত পাঠানো হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্দীদ্বয়কে মুক্তির জন্য মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে নাইজেরিয়া।
বন্দী জেফ উডক প্রথমে ২০১৬ সালে নাইজারে অবস্থিত তার নিজ বাসস্থান থেকে আইএস এর স্থানীয় সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হয়। এরপর ২০২১ সালের কোনো এক সময় সে জেএনআইএম এর হস্তগত হয়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে সে জেএনআইএম এর কাছে হস্তগত হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু এখনও জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ঐ বছর সীমান্ত সংঘটিত কোনো এক যুদ্ধে হয়তো সে মুজাহিদদের কাছে হস্তগত হয়েছে।
অপর বন্দী অলিভিয়ার ডুবোইস ফ্রান্সের একজন সাংবাদিক। তাকে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মালির উত্তরাঞ্চলীয় গাও শহর থেকে জেএনআইএম মুজাহিদগণ গ্রেফতার করেন। সাংবাদিকতার আড়ালে ফ্রান্সের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিসহ কিছু সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে বন্দী করেন মুজাহিদগণ।
পশ্চিমাদের সাথে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর অবশেষে মুজাহিদগণ উভয় বন্দীকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে বন্দীদ্বয়কে কীসের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
বিগত বছরগুলোতেও দীর্ঘ আলোচনার পর বেশ কিছু পশ্চিমা বন্দীকে মুক্তি দিয়েছিলেন মুজাহিদগণ। তাদের মুক্তির বিনিময়ে জেএনআইএম প্রশাসন শত শত কারাবন্দী মুজাহিদকে মুক্ত করেছেন এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ আদায় করেছেন। এই দুজনের আগে, সর্বশেষ বন্দী বিনিময়ের সময়ও পশ্চিমাদের থেকে প্রায় দশ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ আদায় করেছিলেন মুজাহিদগণ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখনো জেএনআইএম প্রশাসনের হাতে গুরুত্বপূর্ণ ৬ পশ্চিমা নাগরিকসহ শত্রু শিবিরের অসংখ্য সদস্য আটক রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এসব বন্দীদের মুক্তির জন্যও পশ্চিমারা ও তাদের তাঁবেদার সরকারগুলো মুজাহিদদের সাথে আলোচনার টেবিলে বসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সাল থেকেই জেএনআইএম মুজাহিদগণ পশ্চিম আফ্রিকার পুতুল সরকারকে হটিয়ে একটি ইসলামি ইমারাহ কায়েম করার কাজ করে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, যুদ্ধের পাশাপাশি এই অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করতেও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন মুজাহিদগণ। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন গোত্রীয় নেতা, প্রতিরোধ বাহিনীর কমান্ডার ও উপজাতি নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন দলটির নেতৃস্থানীয় আলেম ও সামরিক কমান্ডারগণ।
এসব পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে, গত বছরের শেষ দিকে এক সাথে মালির ১২টি উপজাতি আল-কায়েদার হাতে বায়াত দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আজওয়াদ বিদ্রোহীদের অনেক স্থানীয় কমান্ডার ও নেতারাও গোপনে আল-কায়েদাকে বায়াত দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সার্বিক দৃষ্টিতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, আফগান তালিবান ও পূর্ব আফ্রিকার হারাকাতুশ শাবাবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পশ্চিম আফ্রিকায়ও একটি গেরিলা প্রতিরোধ বাহিনী থেকে নিজেদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সক্ষম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশাসন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চাচ্ছে জেএনআইএম।
সীরাত থেকেও আমরা একই শিক্ষা পাই – নিজেদের সামরিক ও প্রতিরোধ সক্ষমতা একটা পর্যায়ে পৌঁছালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মদীনায় নিজেদের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছেন।