সাম্প্রতিক ইউরোপের খ্রিস্টান প্রধান দেশ সুইডেন একাধিকবার পবিত্র আল-কুরআন পুড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় দেশটির নাগরিক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত প্রকাশ্যে পবিত্র আল-কোরআনকে পুড়িয়ে ইসলাম বিদ্বেষ জানান দিয়েছে। গত কিছুদিন পূর্বে ঈদুল আজহার সময় ফের কুরআন পুড়ালে মুসলিম বিশ্ব প্রতিবাদ, বিক্ষোভে ফেটে পরে। ওআইসিভুক্ত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এরফলে গত ১১ জুলাই জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় (ইউএনএইচআরসি) এক জরুরি আলোচনা শুরু হয়। সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও গোঁড়ামির ওপর একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে সংস্থাটি। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোর ভোট নেয়া হয়। ৪৭ সদস্য রাষ্ট্র বিশিষ্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ২৮ টি রাষ্ট্র এই নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে এবং ১২ টি রাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দেয়। বাকি ৭টি রাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদানকারী দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাউই, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, নেপাল ও প্যারাগুয়ে।
অন্যদিকে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো ও রোমানিয়া।
পক্ষে-বিপক্ষে ভোটের পর প্রস্তাবটি পাস হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বিরোধিতা করে বলেছে, এ প্রস্তাবটি মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দিক দিয়ে তাদের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
পশ্চিমা বিশ্ব ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাত্বক কর্মকান্ডকে বাক-স্বাধীনতা বলে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সন্ত্রাসবাদ বা বিশ্বের জন্য হুমকি বলে আখ্যা দেয়। কথিত এই হুমকি মোকাবেলায় ইরাক-আফগানে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করতেও কুন্ঠাবোধ করে না তারা।
এমনিভাবে তাদের মত ও আদর্শের বিরুদ্ধে যাওয়ায় গত ৭৩ বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষ হত্যা করেছে অ্যামেরিকা। এমনকি তাদের দেশেও যারা বিশ্ববাসীর সামনে তাদের তথ্য সন্ত্রাসের মুখোশ খুলে দিয়েছে, তাদেরকেও ছাড় দেয় হয় না। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক সদস্য এডওয়ার্ড স্নোডেনের কথা বলা যেতে পারে। তিনি ফাঁস করে দিয়েছেন যে প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। আর এরপরই তার ওপর নেমে আসে চরম নির্যাতন, দেশছাড়া হতে বাধ্য হন তিনি।
আজকের দিনে পশ্চিমা দেশগুলোতে বহু মসজিদ ও ইসলামি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং নিয়মিতই মসজিদগুলোতে ইবাদত করতে দেয়া হয় কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই। কিন্তু যখনই পবিত্র কুরআনের বিধান বা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়, তখনই দুর্নীতি আর জুলুম-লুটপাটের উপর গড়ে উঠা ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার মসনদ হুমকি অনুভব করে। আর একারণেই হয়তো তারা কুরআনের প্রতি এতো বিদ্বেষ লালন করে; কথিত বাকস্বাধীনতার মোড়কে যে বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটে কুরআন পুড়িয়ে বা কুরআন পুড়ানোর অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে।
তথ্যসূত্র:
——
1. UN motion after Sweden Quran burning: How did your country vote?
– https://tinyurl.com/2cv2x7wm
1. European states vote against Quran burning UN resolution
– https://tinyurl.com/ys3ymm37
3. ৭৩ বছরে ৩ কোটি মানুষ হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র
– https://tinyurl.com/yrdphsrv