কাশ্মীরে জিহাদি মেরুকরণের অন্যতম নায়ক কমান্ডার জাকির মুসা রহিমাহুল্লাহর জীবনী নিয়ে ১ম পর্বে ছিলো- কীভাবে তিনি কাশ্মীর জিহাদকে পাকিস্তানি এজেন্সিগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত করে সত্যিকারের দ্বীন কায়েমের জিহাদে কাশ্মীরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
আজ দ্বিতীয় ও শেষ পড়বে তাঁর জীবনাদর্শ, সংগ্রাম, কাশ্মীর জিহাদের গতিপথ নির্ধারণে তাঁর ভূমিকা, তাঁর শাহাদাত ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকছে।
জাকির মূসার আদর্শ
জাকির মূসা রহিমাহুল্লাহ-এর ব্যাপারে উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ বলেন, “জাকির মূসা রহিমাহুল্লাহ ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি স্রোতের তোড়ে ভেসে যাবার মতো লোক ছিলেন না যে, ঐসব বিশ্বাসঘাতক এজেন্সিগুলো কাশ্মীরের মোবারক আন্দোলনকে নিয়ে খেল তামাশা করবে, আর তিনি চুপটি করে বসে বসে তামাশা দেখবেন। তিনি হাওয়ার অনুকূলে এমন একটি কদম উঠানোকেও আপন ঈমানের জন্য লাঞ্ছনাকর মনে করতেন, যেক্ষেত্রে মানযিলে মাকসুদে পৌঁছানোর ব্যাপারে তাঁর নিশ্চিত বিশ্বাস না হতো। তিনি কাশ্মীর জিহাদের উত্থান-পতন, উন্নতি, অগ্রগতির কারণগুলো বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, এই পাকিস্তানি গুপ্ত এজেন্সিগুলো এই জিহাদকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এর অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং পাকিস্তানের এই জেনারেলরা মজলুম কাশ্মীরী জনগণের আজিমুশশান কুরবানীকে শুধুমাত্র নিজেদের নিকৃষ্ট মুনাফার খাতিরে ব্যবহার করছে। শহীদ আফজাল গুরু, গাজিবাবা শহীদদের মতো দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের চিন্তা-চেতনা দ্বারাও জাকির মূসার জিহাদী চিন্তা-চেতনা শক্তিশালী হয়েছে।
ইসলামী ইমারাহ আফগানিস্তান থেকে নিয়ে ইয়েমেন, মালি ও সোমালিয়ার উত্তপ্ত রণাঙ্গন থেকে উত্থিত আওয়াজ তাকে জিহাদী আন্দোলনের সঠিক গতিপথ বুঝতে সাহায্য করেছে। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে শরিয়াহর মৌলিক-শিক্ষা গ্রহণ করতে তাঁর সময় লাগেনি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তাকেই বলে- যার মাকসাদ হবে আল্লাহর ইবাদাত, ইকামাতে দ্বীন, শরীয়াতে ইলাহীর বাস্তবায়ন ও মজলুম জনতার সাহায্য সহযোগিতা করা। তাঁর জন্য এই ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছা খুব কঠিন হয়নি যে, আসল স্বাধীনতা কাকে বলে, আর নামকাওয়াস্তে সেই স্বাধীনতার বাস্তবতা কী- যার নাম করে সাহায্যের মিথ্যা অঙ্গীকার করা হয়। তাঁর এই দৃঢ়বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, কাশ্মীরের জিহাদ যদি পাকিস্তানের গুপ্ত এজেন্সিগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে কোরবানীর এই ধারাবাহিকতা হাজার বছর চলতে থাকলেও সেই স্বাধীনতা অর্জিত হবে না, যার স্বপ্ন কাশ্মীরের মুসলিমদের চোখে সর্বদা বিরাজমান।”
কমান্ডার জাকির মূসার নিজের লেখাতেও ওঠে এসেছে তাঁর আদর্শ ও আদর্শ-পুরুষদের কথা। তিনি বলেছেন, “যারা ইসলামের নামে জাতীয়তাবাদের মূর্তি তৈরি করেছে, দেশকে খোদা বানিয়েছে আর মদ্যপ জেনারেলদের বানিয়েছে ফেরেশতা, তাদের আর সামেরি’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়?”
এরপর তিনি উপমহাদেশের শহীদী কাফেলার অন্যতম পথিকৃৎ শহীদ আফজাল গুরু রহিমাহুল্লাহকে উদ্ধৃত করে বলেন, “আমাদের প্রিয় এবং সম্মানিত মুজাহিদ নেতা শহীদ আফজাল গুরু রহিমাহুল্লাহ তাঁর তিহার জেলে বসে লেখা বই ‘আয়না’ গ্রন্থে এই মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলেছেন আর এদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। শহীদ আফজাল গুরু ছিলেন শরীয়াহ ও শহীদি নীতির অগ্রগামী পথিক, যাঁর পতাকা আমরা তুলেছি। তিনি পরিষ্কার ভাষায় লিখেছেন যে, ‘পাকিস্তানি সেনাদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণে জিহাদের ফল নষ্ট হবে ও বিফলে যাবে’। তিনি লিখেছেন যে, ‘কাশ্মীর সমস্যার সমাধান রয়েছে শহীদ আশফাকের সামরিক পদ্ধতিতে’।
তিনি তাঁর বইয়ে আরও লিখেছেন, ‘একমাত্র পাকিস্তানি সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পলিসির হাত থেকে কাশ্মীরের জিহাদের নিয়ন্ত্রণকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে-ই পাকিস্তানি ও কাশ্মীরি মুজাহিদদের রক্ত আর ত্যাগ বজায় রাখা যাবে। জিহাদের আশা ও ভরসা আইএসআই ও পাকিস্তানি শাসকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া জিহাদের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই না, কেননা এই শাসকগোষ্ঠী সত্যিকার অর্থে আমেরিকার গোলাম।”
এরপর জাকির মূসা রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমরাও এই একই মানহাজ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি আর এটা আমাদের সংকল্প যে আমরা আইএসআই (পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা)-এর প্রভাব থেকে কাশ্মীরের জিহাদী কর্মকাণ্ডকে মুক্ত করব আর শহীদ আফজাল গুরু রহিমাহুল্লাহ-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।”
কাশ্মীরি মুসলিমদের ভালোবাসা ও বিরোধীদের ষড়যন্ত্র
আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ দুটি স্লোগানকে ধারণ করে এবং এর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। একটি হলো, ‘কাশ্মীর হবে দারুল ইসলাম’ এবং অন্যটি হলো ‘হয় শরীয়াত নয় শাহাদাত’। এই স্লোগান দুটি আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান করে। এই বার্তাগুলো কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। জনপ্রিয়তা বেড়েছে আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের। আর কমান্ডার জাকির মূসা পরিণত হন কাশ্মীরিদের অঘোষিত প্রধান নেতায়। কাশ্মীরিদের আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর নাম উচ্চারিত হতে থাকে। এমনকি খেলার মাঠেও কাশ্মীরিদের মুখে শোনা যায় জাকির মূসার নামে স্লোগান, ‘মূসা, মূসা, জাকির মূসা।’
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে একবার জাকির মূসাকে ঘিরে ফেলেছিল ভারতীয় বাহিনী। কিন্তু কাশ্মীরের জনগণ জাকির মূসার প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসেন। ভারতীয় বাহিনীর উপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে জাকির মূসাকে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।
কমান্ডার জাকির মূসার তাওহিদবাদী আদর্শ এবং তাঁর এমন জনপ্রিয়তা পাকিস্তানপন্থী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর পছন্দ হয়নি। বিশেষত হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার জাকির মূসার বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করে। কাশ্মীরের সপোরে হিজবুল মুজাহিদিন বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার ছাপিয়ে জাকির মূসাকে ভারতের দালাল আখ্যায়িত করে এবং তাঁকে হত্যা করার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে। হিজবুল মুজাহিদিনের এমন প্রোপাগান্ডার জবাবে কমান্ডার জাকির মূসা বলেন, “সম্প্রতি আমার ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের উপর অনেক অভিযোগ করা হয়েছে। আমি ও আমার সাথীরা এই অভিযোগের জবাব রক্ত দিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ।”
কমান্ডার জাকির মূসা ও তাঁর সাথীরা কথা রেখেছেন। মুশরিক ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বীরদর্পে অনেকেই শাহাদাতের অমীয় সুধা পানে ধন্য হয়েছেন (ইনশাআল্লাহ)। আর বাকিরা শাহাদাতের প্রতীক্ষায় আছেন। কমান্ডার জাকির মূসা শাহাদাত বরণ করলেও তাঁর আদর্শের মৃত্যু ঘটেনি। বরং তিনি যে বার্তা দিয়েছিলেন, তাঁর শাহাদাতের পরে সেটি বহুগুণ বেশি ছড়িয়েছে।
জাকির মূসার শাহাদাত
১৪৪০ হিজরীর ১৭ই রমযান (মে, ২০১৯) । কাশ্মীরের ট্রাল এলাকার দাদসারা গ্রামে একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন কমান্ডার জাকির মূসা। তাঁর অবস্থানের ব্যাপারে জেনে যায় মুশরিক ভারতীয় বাহিনী। এক মহাবীরের বিপরীতে হাজার হাজার হিন্দুত্ববাদী মুশরিক সৈন্য জমায়েত হয়। ১১ ঘণ্টা যাবৎ অভিযান পরিচালনা করে মুশরিক সৈন্যরা। এসময় কাশ্মীরের রাস্তায় রাস্তায় শত শত মুশরিক সৈন্য অবস্থান নেয়। ইন্টারনেট সেবাও বাধাগ্রস্ত করে রাখে। যেন কমান্ডার জাকির মূসাকে ঘিরে রাখার সংবাদ কাশ্মীরি মুসলিমরা জানতে না পারেন, যেন কাশ্মীরের মুসলিমরা তাদের আমীরের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসতে না পারেন।
কিন্তু যাঁকে কাশ্মীরের প্রতিটি ধূলিকণা চেনে, যাঁর জন্য কাশ্মীরের আকাশ-বাতাস কাঁদে, যাঁর ভালোবাসা হৃদয়ে গেঁথে রেখেছে কাশ্মীরিরা, তাঁর বিপদের খবর চাপা থাকবে তা কি হয়?! কমান্ডার জাকির মূসার বিরুদ্ধে মুশরিক ভারতীয় বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়ে কাশ্মীরের আকাশে-বাতাসে। আর কমান্ডার জাকির মূসার উপর গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে, এই খবর শোনার পরও কি চুপ থাকতে পারেন কাশ্মীরি মুসলিমরা? মুশরিক সৈন্যদের গুলির ভয়ে ঘরে বসে থাকতে পারেন? এর আগে শহীদ কমান্ডার বুরহান ওয়ানি রহিমাহুল্লাহ-এর শাহাদাতের পর কাশ্মীরি মুসলিমরা রাজপথে প্রতিবাদে ফেটে পড়লে, মুশরিক সৈন্যরা তাঁদের চোখে-মুখে-বুকে গুলি করে শতাধিক মুসলিমকে শহীদ করে, অন্ধ করে দেয় আরও শত শত মুসলিমকে। এখন কমান্ডার জাকির মূসার প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসলেও একই পরিণতি হবে তাদের—এই বিষয়টি তারা ভালোভাবেই জানেন। কিন্তু যাদের সোনার টুকরা মহাবীর সন্তান মুশরিক বাহিনীর মুখোমুখি, তাদের কাছে নিজের জানের মায়া আর কতটুকু গুরুত্ব রাখে!? বীরজাতি কাশ্মীরি মুসলিমরা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসেন। কমান্ডার জাকির মূসাকে যেখানে ঘিরে রাখা হয়েছে, সেখানে ছুটে আসতে চেষ্টা করেন তাঁরা।
রাস্তায় রাস্তায় শত শত মুশরিক সৈন্য থাকায়, তাদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে কাশ্মীরি মুসলিমদের। হিন্দুত্ববাদী মুশরিক সৈন্যদের উপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। ভারতবিরোধী স্লোগানে মুখরিত তখন কাশ্মীর উপত্যকা। বিভিন্ন জায়গায় মুশরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত কাশ্মীরি মুসলিমরা। ওদিকে হাজারো মুশরিক সৈন্যের বিরুদ্ধে কার্যত একাই লড়াই করছেন কমান্ডার জাকির মূসা। সবার মাঝেই উৎকণ্ঠা।
দাদসারা গ্রামের বাসিন্দা আশিক আহমাদ বলেন, “গতকাল (ঘটনার দিন) সন্ধ্যায় যখন আমরা বন্দুকযুদ্ধের কথা জানতে পারি, তখন শত শত মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে ছুটতে শুরু করে। কিন্তু (হিন্দুত্ববাদী) সেনারা তাদেরকে বাঁধা দেয়। গুলিবর্ষণ চলায় আমরা সারা রাত ঘুমাইনি। ভোর পর্যন্ত গোলাবর্ষণের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। লোকজন সবাই রাস্তায় ছিলেন।”
হিন্দুত্ববাদী সেনাদের বাঁধার কারণে কাশ্মীরি মুসলিমরা কমান্ডার জাকির মূসার কাছে পৌঁছাতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টায় শুরু হওয়া এই লড়াই প্রায় ১১ ঘণ্টাব্যাপী চলতে থাকে। এর মাঝে অবরুদ্ধ অবস্থাতেই ভিডিও বার্তা দেন মহাবীর কমান্ডার জাকির মূসা। এটিই ছিল তাঁর শেষ বার্তা। শাহাদাতের পূর্ব-মুহূর্তে তিনি কাশ্মীরের স্বাধীনতা অর্জনের পথ কী হওয়া উচিত, তা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন।
কী ছিল তাঁর শেষ বার্তায়?
কেউ যদি জানে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুবরণ করবেন, সাধারণত এই সময়ে তিনি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটিই মানুষকে জানাতে চাইবেন।
আমীর জাকির মূসা রহিমাহুল্লাহকে যখন মুশরিক সৈন্যরা ঘিরে রাখে, গোলাবর্ষণ করতে থাকে একের পর এক; তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যেকোনো সময় তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে। রবের সাক্ষাতে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এমন মুহূর্তে তিনি মুসলিম উম্মাহকে ভিডিওর মাধ্যমে একটি বার্তা দেন। নিজের জীবন যে পথে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বার্তাতে সেই পথের পথিক হওয়ার আহ্বানই জানিয়েছেন তিনি। এজন্যই তাঁর সংক্ষিপ্ত বার্তা শুরুই করেছেন, তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি দিয়ে। আমীর জাকির মূসা রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমার বার্তাটি সকলের কাছে পৌঁছে দেন, বিশেষভাবে আমার কাশ্মীরি মানুষের কাছে। জিহাদই আমাদের লড়াইয়ের একমাত্র সমাধান এবং অন্যান্য পন্থা যেমন হরতাল ও অন্য পথ ভুল।”
নিজের জীবনের সংকটপূর্ণ মুহূর্তেও তিনি কাশ্মীরের মানুষের মুক্তি-সংগ্রামের সঠিক পথ জানিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। এটাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেছেন। এরপর তিনি নিজের জন্য দোয়া চেয়েছেন। তাঁর শাহাদাতের কবুলিয়্যাতের জন্য দোয়া চেয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন, জান্নাতে তাঁর মর্যাদাকে সমুন্নত করুন, যেভাবে তিনি নিজের জীবন দিয়ে কাশ্মীরে জিহাদকে সমুন্নত করেছেন।
কমান্ডারকে বিদায়
২৪শে মে, ২০১৯ (রমযান, ১৪৪০ হিজরী); কাশ্মীরের ট্রাল এলাকার দাদসারা গ্রামে কমান্ডার জাকির মূসা হিন্দুত্ববাদী সেনাদের সাথে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার লড়াইয়ে শাহাদাতবরণ করলেন। তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ বের করে আনা হলো। হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন কাশ্মীরজুড়ে কারফিউ জারি করলো, বন্ধ করে দিলো স্কুল-কলেজ, ছিনিয়ে নিলো ইন্টারনেট পরিষেবা। কিন্তু তাঁর জানাযায় জনতার ঢলকে রুখে দিতে পারেনি তারা। তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এলেন হাজার হাজার মানুষ; সংখ্যাটা প্রায় অর্ধ লক্ষ।
আমীর জাকির মূসা: মুসলিম তরুণের আদর্শ
স্বচ্ছল পরিবারের আদুরে সন্তান জাকির রশিদ ভাট অল্প বয়সেই নিজের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে নাম লিখিয়েছিলেন কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামে। একের পর এক আত্মত্যাগের নজরানা পেশ করে তিনি হয়ে ওঠেন কাশ্মীরি মুসলিমদের নয়নমনি। যেই বয়সটাতে আজ অধিকাংশ যুবক প্রেম, ঘুরাঘুরি, আড্ডাবাজি আর ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেই বয়সেই সুদর্শন যুবক জাকির মূসা হয়ে ওঠলেন ইসলামবিরোধী শক্তির জানের দুশমন। নিজেকে সঁপে দিলেন আল্লাহর পথে। সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে কাশ্মীরে ইসলাম প্রতিষ্ঠার যেই বার্তা তিনি দিয়েছেন, তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে সেই বার্তা আরও ছড়িয়ে পড়েছে।
জাকির মূসার শাহাদাতবরণের পর বেশ কিছু বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তবুও তাঁর প্রতি ভালোবাসা কমেনি মুসলিমদের। এখনও কাশ্মীরিদের হৃদয়ে জাগ্রত তিনি। ইউটিউব বা অনলাইনে এখনও বিভিন্ন ভিডিওতে তাঁর প্রতি ভালোবাসার কথা জানান মানুষ। এমনই একজনের মন্তব্য হলো, “মূসা ভাই, তোমার রক্তের বদলায় ইনকিলাব আসবে।”
এভাবেই শহীদ কমান্ডার জাকির মূসা মুসলিম তরুণদের আদর্শ হয়ে জীবিত থাকবেন সর্বদা। তারুণ্যের শক্তিকে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে ব্যয় করার উজ্জল দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, মুসলিম যুবকদের আসলে কেমন হওয়া উচিত।
আল্লাহ আমীর জাকির মূসার প্রতি রহম করুন, তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন। মুসলিম তরুণদেরকে তাঁর আদর্শে আদর্শবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন
তথ্যসূত্র:
১. জাকির মূসা রহ. এক সংকল্প, এক বিপ্লব! – উস্তাদ উসামা মাহমুদ (হাফিজাহুল্লাহ)
– https://tinyurl.com/ywasmhvd
২. শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্তে কমান্ডার শায়খ জাকির মূসা রহিমাহুল্লাহ এর দেওয়া বার্তা!
– https://tinyurl.com/f3df2xb6
৩. আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর বিধান – আমির জাকির মূসা হাফিজাহুল্লাহ
– https://tinyurl.com/2dh7wwd3
৪. কাশ্মীর এক দিন ইসলামের ভূমি হবে! -কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ
– https://tinyurl.com/2akdfjj8
৫. Zakir Musa: Thousands mourn India’s ‘most wanted’ militant
– https://tinyurl.com/3acdtanm
৬. Zakir Rashid Bhat, Retrieved from Wikipedia
– https://tinyurl.com/25cweksu
৭. From engineering dropout to militant: Story of Hizbul terrorist who quit outfit
– https://tinyurl.com/yjkr574h
৮. Zakir Musa: Tensions in Kashmir after killing of top rebel
– https://tinyurl.com/3ech38dp
৯. Explained: What killing of Zakir Musa means for militancy in Valley
– https://tinyurl.com/pmmkkwa2
১০. Kashmir Beyond Cliches I: Meet Zakir Musa, A Boy Born Into Wealth, Aspiring To Be Osama Bin Laden Of Kashmir
– https://tinyurl.com/3bj5wxy4
১১. Zakir Musa and Kashmir: Beyond Al-Qaeda
– https://tinyurl.com/4pw2tnpn
১২. From Trendy Teenager to Militant Commander: The Beginning and End of Zakir Musa
– https://tinyurl.com/4v7pw58d
১৩. Thousands attend funeral prayers of top militant commander Zakir Musa in Noorpora Tral.
– https://tinyurl.com/48j7hzxy
১৪. Zakir Musa Slogan during cricket tournament in kashmir
– https://tinyurl.com/47znyruc
আল্লাহ আমাকে ওনার মত করে কবুল করুক।আমিন