সম্প্রতি ইমারতে ইসলামিয়ার প্রাদেশিক গভর্নরগণের সমন্বয়ে কাবুল প্রদেশে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে ইমারতে ইসলামিয়ার সর্বোচ্চ আমির মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা হাফিযাহুল্লাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁর বক্তব্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপদেশ এখানে তুলে ধরা হল।
১) গভর্নরদের প্রতি আমিরুল মুমিনীন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কেননা তারা দ্বীনকে পার্থিব বিষয়াদির উপর অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মাঝে ঈমানি চিন্তা-চেতনা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা তিনি তুলে ধরেন। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পাশাপাশি তার ইবাদতের দিকে মানুষকে আহ্বানের গুরুত্বও তিনি বর্ণনা করেন।
২) আমিরের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন মহান আল্লাহ তায়ালারই আদেশ। এটি পরোক্ষভাবে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আমিরুল মুমিনীন আনুগত্যের ব্যাপারে সচেতন থাকার প্রতি নসিহত করেন। তিনি আরও বলেন, একজন গভর্নরের উপর আনুগত্য ভঙ্গের অভিযোগ কখনও শোভা পায় না।
৩) সকলের উচিত ব্যক্তি পর্যায়ে অর্পিত নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি মনোযোগ দেয়া। আর অপরের কাজে নাক গলানো বা হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা। এভাবে পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি অর্জন করা সম্ভব। প্রত্যেকের উচিত অন্যের উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে না দেয়া, বরং নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।
৪) ইমারত বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য হল উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ করা, অনৈক্য থেকে বিরত রাখা। ঐক্যের মাধ্যমেই শক্তি সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ইবাদত পালন সহজ হয়। এছাড়া এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়।
৫) অধীনস্থদের কাজকে সহজতর ও সহযোগিতা করতে তিনি গভর্নরদের আদেশ দেন। পাশাপাশি তিনি পারস্পরিক সমন্বয় ও সহায়তার গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, তরুণ কর্মীদের উচিত তাদের নেতাদের আনুগত্য করা। আলেম ও মুজাহিদগণকে সম্মান করতেও তিনি কর্মকর্তাগণকে আহ্বান জানান।
৬) জনগণের প্রতি দ্বীন-দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে গভর্নরদের দায়িত্বের বিষয় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে তাদেরকে শরীয়াহ ও ইসলামী মূলনীতির বাস্তবায়ন প্রাধান্য দিতে হবে। ভাষা, জাতিগত বা আত্মীয়তার ভিত্তিতে কোনরূপ সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা বৈষম্য সৃষ্টি না করতে তিনি আদেশ দেন।
৭) কাউকে কোন কাজে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব বা ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ভিত্তি বানানো যাবে না। বরং কর্মীর দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের সুবিধা বিবেচনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শরীয়তের চেতনার ভিত্তিতে জনগণকে জামাআতবদ্ধ করতে হবে। এছাড়া জনগণের সেবা প্রদানে মনোনিবেশ করতে তিনি জোর দিতে বলেন।
৮) আমিরুল মুমিনীন বায়তুল মালের গুরুত্ব তুলে ধরেন। যেখানে বিধবা, এতিম, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্রদের হক রয়েছে। তিনি নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে বলেন, যা পূর্ববর্তী সরকারগুলোর কাছ থেকে জনগণ অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।
৯) অবৈধ দখল প্রতিরোধ করা এবং জনগণকে এই কাজ থেকে বিরত রাখতে গভর্নরদের প্রতি আহ্বান জানান আমিরুল মুমিনীন। এই উদ্দেশ্যে অবৈধ দখল প্রতিরোধ কমিশনকে সহযোগিতা করতে তিনি গভর্নরদের উৎসাহিত করেন।
১০) ঊর্ধ্বতন প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের নিয়ে সেমিনারের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সম্মানিত আমির। এতে কর্মকর্তা ও নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া নিশ্চিত হবে। বিনা ওজরে কাজে বিলম্ব করতে তিনি নিষেধ করেন। কেননা এতে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার সুযোগ তৈরি হবে। কর্মকর্তাদের ইসলামী আইন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা অপরিহার্য। তাদের মাঝে আইন ও সর্বোচ্চ আমিরের জারিকৃত ডিক্রিসমূহ সঠিক ভাবে অনুধাবন করা নিশ্চিত করতে গভর্নরদের জোরালোভাবে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আমির।
তথ্যসূত্র:
1. Key Points from the Speech of Esteemed Amir-ul-Momineen in Kabul Seminar
– https://tinyurl.com/57pwenxb