২৭ নভেম্বর থেকে শুরু করা অপারেশনে গত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদ সরকারকে উৎখাত করেন মুজাহিদিনরা, নিয়ন্ত্রণ নেন রাজধানী দামেস্কের। তখন অগণিত নিরপরাধ মানুষের খুনি বাশার আল-আসাদ সপরিবারে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যায়। রয়ে যায় তার অগণিত অপরাধের দলিল সিদনায়া কারাগারের মতো অসংখ্য বন্দীশালা, যেখানে মানবতাকে গলা টিপে হত্যা করে হয়েছে প্রায় ৬ দশক ধরে।
মুজাহিদিনরা আসাদ শাসনের উৎখাতের মাধ্যমে আলেপ্পো, হামা, হোমস, দারা এবং দামেস্কের মতো অনেক শহরে আসাদের এসব অন্ধকূপ থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্তি করেছেন। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যারা প্রায় ৪০ বছর ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। আর এমন অনেক গোপন কারাগার রয়েছে যেখানে বিজয়ের দ্বিতীয় দিনেও পৌঁছাতে পারেন নি মুজাহিদিনরা, বিশেষত সিদনায়া কারাগারে।
স্থানীয় সূত্রমতে রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত আসাদ সরকারের নির্যাতনের প্রতীক সিদনায়া কারাগারের বন্দীদের বাঁচানোর প্রচেষ্টা বিজয়ের দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। মুজাহিদিনরা মাটির উপরে সিদনায়ার ৩টি পৃথক ব্লকের সমস্ত ফ্লোরে প্রথম পৌঁছাতে সক্ষম হন এবং সমস্ত বন্দীদের মুক্ত করেন।
বর্তমানে মুজাহিদিনরা কারাগারটির ভূগর্ভস্থের আরও ৩টি তালা থেকে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর প্রতিটি তালায় ৪টি ব্লক, বেশ কিছু গোপন ওয়ার্ড এবং সেল রয়েছে। উদ্ধারকর্মীদের জন্য এই তলাগুলোতে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা আসাদ প্রশাসনের কারারক্ষীরা কারাগার থেকে পালানোর সময় গোপন কোড, ডিজিটাল সিস্টেম এবং দরজাগুলির চিহ্ন মুছে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনুসন্ধানী ও উদ্ধারকারী দলগুলো গোলকধাঁধার মতো নির্মিত কারাগারের বিশাল কমপ্লেক্সের ভূগর্ভস্থ দেয়াল এবং কংক্রিটের ব্লক ভেঙে এসব পয়েন্টে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। ভূগর্ভস্থ কম্পার্টমেন্ট থেকে শব্দ শোনার পর, উদ্ধারকারী দলগুলি ভূগর্ভস্থ ওয়ার্ড এবং সেলগুলিতে আটকা পড়া বন্দীদের মুক্ত করতে সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়াচ্ছেন। সেই সাথে বন্দীদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত ক্যামেরায় ধারণকৃত মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের অবস্থা, সিদনায়ায় আসাদের নির্মমতাকে বিশ্বের সামনে দলিল হিসাবে প্রকাশ করছে। কারাগারের অভ্যন্তরে রেকর্ড করা চিত্রগুলিতে এটি লক্ষণীয় যে, বন্দীদের বহু বছর ধরে খুব খারাপ অবস্থায় সেলগুলিতে রাখা হয়েছিল।
সিদনায়া থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত একজন বোন কারাগারগুলোতে মুসলিম মা-বোনদের শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি কি পরিমান ধর্ষণের করা হয়, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন: “আমাকে ১৯ বছর বয়সে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আজ আমার বয়স ৩২ বছর। বর্তমানে আমার ২, ৪ এবং ৬ বছর বয়সী ৩টি বাচ্চা আছে। আমি তাদের মা, কিন্তু আমি জানি না তাদের বাবা কে”।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭০-এর দশকে হাফেজ আসাদ সিদনায়া কারাগারটি নির্মাণ করে। এরপর থেকে এটি এমন একটি কেন্দ্র হয়ে উঠে, যেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের, বিশেষ করে ইসলামী নব জাগরণে উজ্জীবিত হাজার হাজার যুবককে বন্দী করা হয়েছিল, এবং তাদের অনেককে গণহত্যা করা হয়েছিল।
এমনকি গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকার পালানোর আগেও, কারাগারটিতে কয়েক ডজন বন্দীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২১ জনের মৃতদেহ হারাস্তা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।