মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ভারতের প্রখ্যাত ইসলামপ্রচারক জাকির নায়েক বর্ণবাদী মন্তব্য করার জন্য ওই দেশের এক পার্লামেন্ট সদস্যের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন।
মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের শরিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন পার্টির (ডিএপি) সদস্য চার্লস স্যান্টিয়াগো গত মাসে ১০ জাতিগত ভারতীয়কে শ্রীলঙ্কার উগ্র তামিল সংগঠন এলটিটিইর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আটক করা নিয়ে মন্তব্য করার সময় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধেও বক্তব্য রেখেছিলেন। ওই সংগঠনটি ১০ বছর নিস্ক্রিয় থাকার পর হঠাৎ সক্রিয় দেখা যায়। ফোরামে আলোচনাকালে এমপি স্যান্টিয়াগো বলে, এই আটকের ঘটনার সাথে জাকির নায়েকের প্রতি করা রাজনৈতিক সমালোচনার সম্পর্ক থাকতে পারে।
স্যান্টিয়াগো বলে, এই গ্রেফতার আসলে মালয়েশিয়ার ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি একটি ‘হুঁশিয়ারি’ এবং সেইসাথে বর্ণবাদী অনৈক্য সৃষ্টিকারী জাকির নায়েকের সমালোচনাকারীদের শাস্তি দেয়ার একটি হাতিয়ার। স্যান্টিয়াগো জানিয়েছে, জাকির নায়েকের আইনজীবীদের পাঠানো মানহানির একটি নোটিশ তিনি পেয়েছে। তারা জানিয়েছেন, স্যান্টিয়াগোর মন্তব্য জাকির নায়েয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। জাকির নায়েক স্থায়ীভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। তিনি দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথেও সাক্ষাত করেন।
উল্লেখ্য, ভারতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদের মদতদানের অভিযোগের তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকটি দেশে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ তাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ভারতীয় দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। গত আগস্ট মাসে জাকির নায়েকের একটি মন্তব্য মালয়েশিয়ায় বেশ আলোচিত হয়। তিনি ওই সময় বলেছিলেন যে মালয়েশিয়ার জাতিগত ভারতীয় সম্প্রদায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি ‘অনুগত।‘ তিনি মোদিকে মুসলিমবিরোধী হিসেবে অভিহিত করেন।
জাকির নায়েকের এই মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য শুরুতে তার তীব্র সমালোচনা করলেও জোটের অন্যান্য শীর্ষ রাজনীতিবিদ তার সমর্থন করে বিবৃতিতে দেন এবং তাকে ‘ক্ষমা’ করার জন্য মালয়েশিবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। মালয়-মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তারা এ অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার ৬০ ভাগের বেশি লোক মুসলিম। জাকির নায়েক আরো কয়েকজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিযেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন পেনাঙ রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয় পি রামসামী, মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান, পরিষদ সদস্য সতিশ মুনিয়ান্ডি।
মালয়েশিয়ার মিডিয়া গত মাসে ১২ জনের একটি দলকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে দুজন ছিলেন ডিএপি পরিষদ সদস্য। তামিল টাইগারদের সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার সিকিউরিটি অফেন্সেস (স্পেশাল মেজার্স) আইনের অধীনে তদন্ত চলছে। এই আইনে যে কাউকে বিনা বিচারে ২৮ দিন আটক রাখা যায়।
খবরঃ নয়া দিগন্ত