মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে আগামীকাল রোববার বেলা দুইটা থেকে আবারও আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে খুলনা অঞ্চলের পাটকলশ্রমিকেরা। আগের মতোই খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কে ওই কর্মসূচি পালন করবেন খুলনার পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকেরা। অন্য পাটকলগুলোর শ্রমিকেরা অনশন করবেন তাঁদের নিজ নিজ গেটে।
২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় বিজেএমসির চেয়ারম্যান এবং পাট মন্ত্রণালয়ে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় আবারও আমরণ অনশন করার হুমকি দিয়েছিলেন শ্রমিকনেতারা। খুলনায় ফিরে মিলগেটে সভা করে আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে অনশনের ঘোষণা দেন তাঁরা।
এর আগে একই দাবিতে ১০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে নিজ নিজ মিলগেটের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শ্রমিকেরা। তীব্র শীতের মধ্যে টানা চার দিন ওই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। কর্মসূচি চলাকালে এক শ্রমিকের মৃত্যুসহ দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, ‘দাবি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করতে চাইছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য বারবার তারা সময় চাইছে। কিন্তু শ্রমিকদের পক্ষে ওই সময় দেওয়া সম্ভব নয়। শ্রমিকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই আমরণ অনশনের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন জানান, সকাল ১০টায় নিজ নিজ মিল গেটে শ্রমিকেরা সভা করেছেন। সেখানে যেকোনো মূল্য আমরণ অনশন সফল করতে শপথ নিয়েছে তাঁরা। শ্রমিকেরা দেখছেন, আন্দোলন ছাড়া দাবি পূরণের আর কোনো উপায় নেই। এ জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করবেন।
খুলনা অঞ্চলে মোট রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে দুটি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দুটি জুট মিল হলো কার্পেটিং ও জেজেআই।
প্রথম আলোর সুত্রে জানা যায়, এর আগে গত ২৩ নভেম্বর মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাটকলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থা বাতিল, পাট খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা। বিক্ষোভ মিছিল, ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ১০ ডিসেম্বর বেলা তিনটা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যান তাঁরা।
১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের মিথ্যা আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিনের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকেরা। দিবাগত রাত একটার দিক থেকে একে একে খুলনার বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে যান।
ওই রাতে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কথিত শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি ১৫ ডিসেম্বর শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সভাকক্ষে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে সভা করার কথা জানান। ওই সভা থেকে ভালো ফলাফল আসতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকনেতাদের অনশন তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেন। ওই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকেরা। পরবর্তী সময়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধে আরও ১০ দিন সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা আমরণ অনশনের কর্মসূচিতে অনড় থাকেন।
যতদিন এই জালিম শাসকরা পরিবর্তন না হবে, ততদিন পর্যন্ত এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবেনা!!