তেঁতুলিয়ায় ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড

0
599

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আজ রোববার সকাল নয়টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি শীত মৌসুমে এটা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা গত শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

তীব্র শীতে নাকাল হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক এই জেলার মানুষ। হাড়কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে দেশের সর্ব উত্তরের এই জনপদের বাসিন্দারা। হিমালয়ের খুব কাছাকাছি জেলা হওয়ায় পঞ্চগড়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমালয়ের হিম বায়ু প্রবেশ করায় তাপমাত্রা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

গত শীত মৌসুমে (২ জানুয়ারি ২০১৯) তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল। এ ছাড়া গত বছর এই দিনে (২৯ ডিসেম্বর ২০১৮) তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় দেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করলেও আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পঞ্চগড়ে দেখা গেছে সূর্যের মুখ। লোকজনকে দেখা গেছে রোদে বের হয়ে কিছুটা উষ্ণতা নিতে। তবে উত্তরের হিমেল বাতাসের দাপটে সূর্যের এই মিষ্টি রোদ খুব বেশি আরামদায়ক হতে পারছে না।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদেরা জানান, তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, আর ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

তেঁতুলিয়ায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় অনেকেই শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন খড়কুটো জ্বালিয়ে। এ ছাড়া শীতের তীব্রতার কারণে ঠিকমতো কাজও করতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ।

জেলার সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের আমলাহার এলাকার নির্মাণশ্রমিক মো. মজনু মিয়া আজ সকালে বলেন, তাঁরা শ্রমিকেরা প্রতিদিন সকালে পঞ্চগড় শহরের সিনেমা রোডে জড়ো হন। সেখান থেকে বিভিন্ন নির্মাণকাজের ঠিকাদার ও হেডমিস্ত্রিরা তাঁদের দিন হাজিরা হিসেবে নিয়ে যান। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় কেউ কাজই করাতে চাইছেন না। তাঁরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে হাত-পা পানিতে সামান্য ভিজলেই জমে আসে।

পঞ্চগড় শহরের রিকশাচালক শাজাহান আলী বলেন, ‘সকালে হালকা রোদ দেখে বের হয়েছি। এখন তো ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা কুঁকড়ে যাচ্ছে। ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো গাড়ি চালাতে (রিকশা) পারছি না। বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে নাক দিয়ে পানি আসে। রাতে সর্দি-কাশি শুরু হয়। তার পরও সংসার চালানের জন্য তো গাড়ি চালাতেই হবে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তেঁতুলিয়া হিমালয়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল বাতাস সরাসরি এখানে আসছে। এতে তেঁতুলিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনের বেলা সূর্যের সঙ্গে রোদের দেখা মিললেও উত্তরের হিম বায়ুতে সেই রোদের উষ্ণতা থাকছে না। তিনি বলেন, আকাশ মেঘমুক্ত হলে দিনে রোদের দেখা মিলছে, আর রাতে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। নতুন বছরে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা ক্রমাগত কমতে পারে বলে তিনি জানান।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সেটি কমে হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্যপ্রবাহ দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। আজ রাতের বেলায় তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। তবে কাল সোমবার রাত থেকে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের মতোই নাজুক
পরবর্তী নিবন্ধ২০১৯ সালে ২১০ আমেরিকানের মৃত্যু হলো নিজেদের হাতেই