প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বলে বাংলাদেশ সরকার দাবি করলেও সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) অব্যাহতভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করে চলেছে।
ভারতের এই ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে শঙ্কা নিয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটর-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম (মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ)-এর জাতীয় কনভেনার কিরীটী রায়।
তিনি বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার ব্যাপারে ভারত সরকারের মনোভাব নিয়ে তাদের মধ্যে কোন প্রীতি নেই।
রায় বলেন, সরকার মনে করে বাংলাদেশীরা হলো মুসলমান, তারা লুঙ্গি পরে, ইসলামে বিশ্বাসী, গরুর গোস্ত খায়, তাই তারা আমাদের শত্রু।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্লজ্জ উক্তিগুলোর প্রতি ইংগিত করেন রায়। অমিত শাহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের কঠোর মনোভাবের কথা বলেন, তাদেরকে বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে অভিহিত করেন। শাহ এদেরকে প্রায়ই ‘উইপোকা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সীমান্ত হত্যার ঘোর বিরোধী কিরীটী রায় বলেন যে, সবদিক দিয়েই হত্যাকাণ্ড বেড়ে গেছে। ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও মাসুম যৌথভাবে ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সীমান্ত হত্যা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
মোদি সরকারের আমলে এই হত্যাকাণ্ড বাড়লেও প্রকৃত সংখ্যা জানা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে বলে রায় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আগে হত্যাকাণ্ড ঘটলে, লাশ পাওয়া যেতো। এখন লাশ পাওয়া যায় না। তারা [বিএসএফ] লাশগুলো পদ্মা, ইছামতি বা অন্যকোন নদীতে ফেলে দেয়। অথবা পুঁতে ফেলে। কোন প্রমাণ রাখে না। শুধু মুর্শিদাবাদে এ ধরনের ৩১২টি ঘটনার কথা জেনেছি।
তার ও তার সংগঠনের তৎপরতা সম্পর্কে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন: আমরা উত্তর ২৪ পরগনা ও কুচবিহার জেলা থেকে ঘটনাগুলো সংগ্রহ করেছি। প্রত্যেকবার আমরা বিএসএফ, রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি কি ঘটেছে, কিন্তু কোন টনক নড়েনি। এ পর্যন্ত কেউ কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।
রায় জোর দিয়ে বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা নিম্ন আদালত থেকে কোন ন্যায্য রায় পাইনি। আদালত হলো প্রশাসন ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এগুলো স্বাধীন নয়।
উচ্চ আদালতের কি অবস্থা?
তিনি বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টকে প্রভাবিত করতে পারে না। কিন্তু এগুলোর ব্যাপারেও তিনি আশাবাদী নন। কারণ হিসেবে তিনি অযোধ্যা রায়ের কথা বলেন।
ফেলানী মামলা প্রসঙ্গ তোলেন কিরীটী রায়। বিএসএফ ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি এই বাংলাদেশী কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করে।
রায় মনে করার চেষ্টা করেন: পরদিনই তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার বিচারে বিএসএফ কিছুই করেনি। তাদেরই লোকজন দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ফলে ফলাফল শূন্য।
তিনি বলেন, দু:খজনক হলো বাংলাদেশ বা ভারত কোন সরকারের মধ্যেই সীমান্তের দু’পাশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটছে না। বাংলাদেশের জনগণ চায় বিএসএফের এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে শক্ত কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Allah save us