পশ্চিমা ক্রুসেডারদের আগ্রাসনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রগুলোর লাখো মানুষ নিজ দেশে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে জীবন বাঁচাতে ইউরোপে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। এসকল ভোগবাদী দেশে মানবাধিকারের প্রকৃত চর্চা না থাকায় তারা নানামুখী অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতন ও ক্রমান্বয়ে আগ্রাসন অব্যাহত রাখার কারণে আবারো ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
শরণার্থীর চাপে আধুনিক ইউরোপের মানবতার ধ্বজাধারী উদারবাদীদের মুখোশ খসে তাদের কুৎসিত চেহারাটাও বেরিয়ে এসেছে। নতুন করে সিরিয়ার ইদলিবে আগ্রাসনের কারণে তুরস্কের সীমান্তে ক্রমেই বাড়ছে শরণার্থীর চাপ। এদিকে কয়েক দিন আগে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয় ৪০ লাখের অধিক শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া তুরস্ক। ফলে ফের শরণার্থী সঙ্কটের মুখে পড়েছে ইউরোপ।
সীমান্ত খুলে দেয়ার পরেই গ্রিস দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে শরণার্থীরা। এ সময় গ্রিস প্রসাশন এসব শরণার্থীদের সাথে খুবই নৃশংস-অমানবিক আচরণ করে। ইউরোপীয় দেশগুলো শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য আঘাত করা হচ্ছে ও তাদের নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনা মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাকে পদদলিত করছে। ইউরোপীয়দের এমন আচরণে স্তব্ধ পুরো বিশ্ব।
ইউরোপ অভিমুখী শরণার্থীদের সাথে অমানবিক ও পাশবিক আচরণ করছে গ্রিসের পুলিশ ও কোস্টগার্ড। কখনো অভিবাসী বোঝাই নৌকা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। কখনো কখনো শরনার্থীদের এই প্রচন্ড শীতে শরীরের কাপড় এমনকি পরনের প্যান্ট খোলে চালাচ্ছে শারীরিক নির্যাতন। আবার কখনো নৌকাগুলো ডুবিয়ে নৌকাডুবিয়ে দেবার মতো নিশংস ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমগুলোতে এমনই কিছু লোমহর্ষক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওয়ে দেখা যায়, গ্রিক উপকূলের কাছে সাগরের মধ্যে শরণার্থীবোঝাই একটি ডিঙ্গিনৌকা ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। এ সময় নৌকা লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তেও দেখা যায়। যদিও গুলি নৌকায় না লেগে কাছাকাছি পানিতে পড়ে।
ইউরোপের অনেক জাতিরাষ্ট্রই এখন মুখের ওপরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। শরণার্থীদের চাপে তাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, এই ছুতো দেখিয়ে তারা চায় না কোনো শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করুক। অথচ তারা নিজেদের মানবাধিকারের দর্পণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় বিশ্ববাসীর কাছে। মুসলিম দেশসমূহে আগ্রাসন চালিয়ে শরনার্থী সংকট তারাই সৃষ্টি করেছে। মুসলিম দেশগুলোর মূল সমস্যার পেছনে ইউরোপীয়রাই দায়ী। তারা এক দিকে আফ্রো-এশিয়ার এসব দেশগুলোতে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে, আবার তারাই নিজেদের মুখে মানবাধিকার ও উন্নয়নের বুলি আওড়াতে ব্যস্ত থাকে। তাদের আধিপত্যের লড়াইয়ে বলি হয় নিরীহ আদম সন্তানেরা। নিজ দেশ হারিয়ে তারা আজ পরবাসী। জীবন বাঁচাতে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছে। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় নিজের প্রাণ বাজি রাখে একটু শান্তিতে বাঁচার আশায়। একটু বাঁচার জন্য ছুটে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে । আর এই নিষ্পেষিত মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু কেড়ে নিতে উদ্যত হচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলো ।