ঘাটাইলের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া প্রধান সড়কটির নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে দুর্ভোগে উপজেলাবাসী। শহরজুড়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা, রাস্তার (বিটুমিন) ইট, বালু, সিমেন্ট ও পিচের ঢালাই তুলে ফেলায় ব্যাপক ধুলোর ঝড় এবং নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনাসহ ত্রিভুজ সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন ঘাটাইলবাসী। লোক সংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে অত্র উপজেলাটি ঘনবসতি হওয়ার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকার সন্ধানে শহরে আসতে হয়। ধুলোর ঝড় মাথায় নিয়ে শহরে প্রবেশ করলে পড়তে হয় নতুন এক বিড়ম্বনায়। শহরের রাস্তাটা বর্তমানে এতই নাজেহাল যে, হাঁটু পর্যন্ত পানি মাড়িয়ে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। রাস্তার দুই ধারে জলাবদ্ধতার কারণে দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ফুটপাতের দোকানিরা ও টং দোকানের স্বল্প আয়ের মানুষরা না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে। এতে একদিকে যেমন ঠাণ্ডা কাশি ও শ্বাস কষ্ট রোগ দেখা দিচ্ছে অপরদিকে করোনা সন্দেহে হাসপাতাল ও ওষুধের দোকানে গিয়েও চিকিৎসা নিতে পারছে না।
মানবজমিন বরাতে জানা যায় এখানে তার উপর নিত্যদিনের সড়ক দুর্ঘটনা লেগেই আছে। আর এ সবের জন্য বহুল প্রত্যাশিত এলেঙ্গা-জামালপুর মহাসড়ক নির্মাণ কাজের ধীরগতিকেই দায়ি করছেন ভুক্তভোগী এসব মানুষ। নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে ঘাটাইল হয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলায় সড়কপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। জানা যায়, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে ঘাটাইল মধুপুর হয়ে জামালপুর পর্যন্ত ৭৭ কি.মি. সড়ক উন্নয়নে কাজ চলছে। এজন্য বরাদ্দ প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা। ৫টি প্যাকেজে আগামী ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। সড়কের ১ থেকে ৩নং প্যাকেজে কাজ করছেন ঢাকার ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। আর ৪ ও ৫নং প্যাকেজে কাজ পেয়েছেন জামিল অ্যান্ড কোম্পানি। কাজের গতি খুবই হতাশাজনক। বিশেষ করে ঘাটাইল পৌর শহরে ১ কিলোমিটার এবং মধুপুর পৌরশহরের মালাউড়ি থেকে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কে দেড় ফিট উঁচু রিজিট পেভমেন্ট ঢালাই হওয়ার কথা। এক বছরে ঠিকাদার এসব স্থানে সড়কের দুইপাশ খোঁড়াখুঁড়ির পর মাত্র ১৫০ গজ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে। পেভমেন্টে নিয়মিত পানি না দেয়ার কারণে তা ফেটে চৌচির হচ্ছে। সরজমিনে দেখা যায়, সড়কের এক পাশ যানবাহন চালু রেখে অপরপাশে পেভমেন্ট ঢালাইয়ের কাজ করায় ভাঙ্গাচোরা সরু অংশ দিয়ে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর জেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। ব্যাপক যানবাহনের চাপে সড়কের অনেক অংশ দেবে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো যানবাহন কাদায় আটকে ফেঁসে যায়। তখন দুদিকে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রশস্তকরণের জন্য আবার সড়কের কোথাও কোথাও দুপাশের মাটি খুঁড়ে ৫/৬ ফুট গর্ত করে রাখা হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়িতে সরু সড়কে দুটি বড় যানবাহন ক্রস করতে পারে না। এ কারণে ঘাটাইল পৌরবাসী রোদে, ধুলা, বৃষ্টিতে কাদা ও প্রাত্যহিক যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। সড়কের উন্নয়নকাজের মধ্যে ঘাটাইল উপজেলা সদরের পৌর এলাকার হাসপাতাল মোড় থেকে বীরঘাটাইল পর্যন্ত অংশের এক কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ চলছে ঢালাইয়ের মাধ্যমে। এ কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। পাশাপাশি রোদে ও ধুলার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী, পথচারী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতে কাদার সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। সড়কের এক পাশ যান চলাচলের উপযোগী না করে অপরিকল্পিতভাবে অন্য অংশের কাজ শুরু করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পৌর এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের প্রায় সব ড্রেনের মুখ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া পানি জমে থাকায় সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে যানবাহন আটকে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। হাঁটু পানি ভেঙে সড়ক পারাপার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যানবাহনের চাকার মাধ্যমে পথচারীদের গায়ে লাগছে ময়লা পানি। বিষয়টি নিয়ে একের পর এক গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কর্তৃপক্ষের কোন দায়িত্ব বা টনক নড়েনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, সড়কের কাজের ধীরগতির কারণে ব্যবসায়ীরা চরম বেকায়দায় রয়েছে। ধুলা-কাদার মধ্যে ঠিকমতো তারা ব্যবসা করতে পারছে না, অধিকাংশ দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে।