করোনা সন্দেহে চিকিৎসা দেয়নি কোনা হাসপাতাল, অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু

0
1078

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগী ভর্তি নিচ্ছে না অনেক হাসপাতাল। অনেক চিকিৎসক এ ধরনের রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অভিযোগ এনে পরিবারের শ্বাসকষ্টে ভোগা এক সদস্যের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করছেন তারেক রিপন নামে এক ব্যক্তি। খবর-যুগান্তর

মঙ্গলবার ফেসবুকে লেখা তারেক রিপনের সেই হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস পাঠকের উদ্দেশে দেয়া হলো – ‘আমার বোন জামাই, আমার দুলাভাই। তিনি ব্যবসা করতেন চাঁদপুরে। ১০ দিন আগে উনার জ্বর এবং সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। স্থানীয় ডাক্তার উনাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন এবং সেদিনই তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। কিন্ত স্থানীয় ডাক্তার কোনো রোগের কথা বলেননি। পারিবারিকভাবে আমরা সচেতন বলে প্রথমেই উনাকে নিয়ে গেলাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। রাত তখন ৮টা। সেখানকার ডাক্তার উনার ফাইল দেখতে চাইলেন এবং রোগীর স্বজনদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। ২ ঘন্টা পর ডিউটি অফিসার ফিরে এসে জানালে আমরা এ রোগী এখানে রাখতে পারব না। কারণ উনার নিউমনিয়ার লক্ষণ। বললেন বক্ষব্যধি হাসপাতালে নিয়ে যান। কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাদেরকে বের করে দেয়া হলো। দুলাভাই তখনও খুব শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তারপর সেখান থেকে তাকে বক্ষব্যধিতে নেয়া হল কিন্তু করোনা রোগী বলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করল না, বলল এ ধরনের রোগী তারা নিচ্ছে না। সেখান থেকে নেয়া হলো ইবনে সিনা হাসপাতালে। তারা কোনো কথাই শুনলেন না। সেখান থেকে তাকে নেয়া হলো রেনেসাঁ নামে একটি ক্লিনিকে। সেখানও তারা গ্রহণ করলেন না। শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট শুনেই সবাই অপারগতার কথা বলে বের করে দিচ্ছে। রাত তখন ৪টা। সবাই হতাশ হয়ে উনাকে বাসায় নিয়ে গেল।’

এরপর কোনো হাসপাতাল তারেক রিপনের বোনজামাইকে না রাখায় বাড়িতে নিয়ে নিজেরাই সেবা দিতে শুরু করেন।

তারেক রিপন লেখেন, ‘কোনো রকম রাত কাটানোর পর বাসায় একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার আর নেভ্যুলাইজারের ব্যবস্থা করি। ঘন্টা তিনেক পর দুপুর ১টার দিকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে কল করে উনাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইউনাটেড হাসপাতালে। আমরা মূলত নিউমোনিয়া গোপন করে হার্টের সমস্যা বলে এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলাম। না হলে হয়তো সেখানেও ঢুকতে পারতাম না। তার পর ডাক্তার উনার ফাইল দেখে বুঝতে পারলেন এবং করোনাভাইরাস ধারণা করলেন। বললেন, করোনা রিলেটেড হাসপাতালে চলে যেতে। ফলে সেখান থেকে বের হয়েই উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে। উনাকে রাখা হলো ২দিন। ৪৮ঘন্টা পর উনার রিপোর্ট আসলো নেগেটিভ, মানে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। তাকে রিলিজ দেয়া হলো। এ অবস্থা আমাদের যার যার অবস্থান থাকে সকল ধরনের কার্ডিয়াক এবং নিউমোনিয়া রিলেটড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক আবেদন করেও আমরা কারো মন গলাতে পারিনি। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল থেকে আবারো নিয়ে যাওয়া হলো বাসায়।’

তারেক রিপন লেখেন, ‘বিগত ৫ দিন তিনি বিন্দুমাত্র ঘুমাতে পারেননি। ইতিমধ্যে উনার হাত পা ফুলে গেছে, ডায়বেটিস চরম হাই, ফুসফুসে পানি জমে গেছে। ৭ দিনের মাথায় অনেককে দিয়ে তদবির করে ভর্তি করানে হলো হার্ট ইনস্টিটিউটে। সেখানে নেই কোনো ডাক্তার। চরম বহেল। যেখানে উনার দরকার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা, অক্সিজেন সেখানে চরম ঢিলেঢালা অবস্থা। নেই কোনো ডাক্তার। সবাই নাকি ছুটিতে। ২ দিন থাকার পর হঠাৎ ডাক্তার বললেন আপনারা রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে যান। এ চিকিৎসায় সময় লাগবে। তার চেয়ে বাসায় থাকা ভালো। আমরা অনেক বলে কয়েও আর হাসপাতালে থাকার অনুমতি পেলাম না। না জানলাম উনার কি সমস্যা না জানলাম উনার চিকিৎসা পদ্ধতি। বাসায় নিয়ে আসা হলো নবম দিনের মাথায়। একদিন রাত ২ টায় চরম শ্বাস কষ্টশুরু হলে দুলাভাইয়ের। আবারও ব্যর্থ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্স কল করে হার্ট ইনস্টিটিউটের দিকে রওনা হলাম। সেখানে পৌঁছে জানলাম তিনি আর নেই। সবাইকে সব ধরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার আর কোনো শ্বাসকষ্টও হচ্ছে না। তিনি মারা গেছেন। হা, ফাইনালি তিনি মারা গেছেন। এজন্য ফাইনালি বললাম, কারণ গত ১০দিন মানসিকভাবে তিনি প্রতিদিনই মারা গেছেন।’

তারেক রিপন লেখেন, ‘একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন বা সন্তান কেউ অসুস্থ আর আপনারা তাকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল দৌড়ে বেড়াচ্ছেন অথচ কেউ আপনাদের ভর্তি করাচ্ছে না। তাহলে ঐ অসুস্থ মানুষটি কি জীবিত অবস্থায় মরে যাননি? আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো। যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আমরা সমর্থবান। কিন্ত কোনো হাসপাতালের বারান্দাতেই তো আমরা পৌঁছাতে পারলাম না। বলতে পারেন বিনা চিকিৎসায় একজন লোক মারা গেল। আমার দুলাভাই এর যদি বিন্দু মাত্র চিকিৎসার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারতাম তিনি মারা যেতেন না।’

এরপর তারেক রিপন কতগুলো প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে কি আর বলার বাকি রাখে, দেশের স্বাস্থ্যসেবা কতটা নাজুক? যেখানে কোনো চিকিৎসাই নেই সেখানে কার করোনা বা কার করোনা না কিভাবে বুঝবেন? বাংলাদেশে যদি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণেই থাকে তবে হাসপাতালগুলো কেনো অন্য রোগের রোগী নিবে না। যদি হাসপাতালগুলো দেশের এ চরম দূর্যোগের সময় মানুষকে চিকিৎসা সেবা নাই দিতে পারে তবে তাদের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না? এখন না হোক, পরিস্থিতি ভালো হলে কি এর বিচার আমরা পাবো? এতোগুলো হাসপাতালের বারান্দায় বারান্দায় গিয়েও যখন আমরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হলাম তখন আমরা কোন উন্নয়নের পথ হাঁটছি? এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর পরিবারের সদস্যকে সারাজীবনের জন্যে হারালো হয়তো কষ্টটা বুঝবেন কোনোদিন, যেটা কখনোই আমার কামনা না। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন।’

আমার বোন জামাই, আমার দুলাভাই। তিনি ব্যবসা করতেন চাঁদপুরে। ১০ দিন আগে উনার জ্বর এবং সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। লোকাল ডাক্তার…

Posted by Tareq Ripon on Mánudagur, 30. mars 2020

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতির সাথে নতুন ধোঁকাবাজি, আইইডিসিআরের একক কর্তৃত্বে নিষ্ক্রিয় ৭ ল্যাব
পরবর্তী নিবন্ধদিনে দিনে বাড়ছে পরিক্ষাহীন করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা!