চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ জেলার তিন কোটি মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন মেশিন (পিসিআর) আছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে একটি আবার করোনা সংকট শুরুর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধার করে আনা। অথচ চট্টগ্রামে অব্যবহৃত পড়ে আছে ২১টি পিসিআর মেশিন। মেশিনগুলো কাজে লাগানো গেলে দীর্ঘ অপেক্ষা ছাড়াই ফল পাওয়া যেত করোনার নমুনা পরীক্ষার।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। সংস্থাটি প্রকাশিত সর্বশেষ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে এ ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করতে দেশগুলোকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১টি জেলার মধ্যে একমাত্র কক্সবাজারে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। বাকি জেলার মানুষের করোনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি)। আর এই একটি প্রতিষ্ঠান করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ করোনা পরীক্ষায় বিআইটিআইডিসহ চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পিসিআর মেশিনের স্বল্পতার কথা বলা হলেও চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে ২১টি পিসিআর মেশিনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মাত্র সাতজন ব্যক্তি যখন পুরো বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষায়
হিমশিম খাচ্ছেন, তখন হাতের কাছে থাকা প্রশিক্ষিত মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও জনশক্তিকে ব্যবহারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। খবর: আমাদের সময়
২১টি পিসিআর মেশিনের মধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) আছে ছয়টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে পাঁচটি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম শাখা, চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমিসহ বিভিন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ১০টির বেশি পিসিআর মেশিন রয়েছে। এছাড়া পিসিআর মেশিনে ভাইরাস পরীক্ষায় প্রশিক্ষিত জনবলও রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পিসিআর মেশিন ও প্রশিক্ষিত জনবল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষা সম্ভব।
বিআইটিআইডির ল্যাবপ্রধান ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক শাকিল আহমদ বলেন, চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে দৈনিক ২’শতের অধিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আমরা চাইলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ১২০টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারি না। এ কারণে প্রতিদিনই বিআইটিআইডিতে নমুনার স্তূপ জমা পড়ছে। বিকল্প ব্যবস্থা করা না গেলে রোগীদের ফল পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
সিভাসুর উপাচার্য ড. অধ্যাপক গৌতম বৌদ্ধ দাশ বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের নেতৃত্বে এখানে একটি ১০ সদস্যের দল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এ ল্যাবের ছয়টি মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ১৫০ নমুনা অনায়াসে পরীক্ষা করা সম্ভব। কিট, পিপিই, নমুনাসহ কারিগরি সহায়তা পেলে সরকার যখনই চাইবে, তখন থেকে নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে করোনা সামাজিক সংক্রমণ চলছে। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের লোকজনকে বেশি পরীক্ষা করছি, তাই তারা শনাক্তও বেশি হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, করোনা পরীক্ষা করার জন্য আরও পিসিআর মেশিন প্রয়োজন।