চীনে এ বছরও উইঘুরদের মদ খাইয়ে রোজা ভাঙতে বাধ্য করা হচ্ছে

0
1943
চীনে এ বছরও উইঘুরদের মদ খাইয়ে রোজা ভাঙতে বাধ্য করা হচ্ছে

চীনা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলিতে উইঘুর মুসলিমরা রোজা রাখছেন কিনা, তা নিশ্চিত করতে মদ পান করতে বাধ্য করা হচ্ছে। গত ২৯ এপ্রিল বার্তা সংস্থা “DOAM” এর এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় চীনের উইঘুরে প্রায় ৩০ লাখ মুসলিম বন্দী শিবিরে আটক রয়েছে। বন্দী এইসব উইঘুর মুসলিমরা মদ ও শুকরের মাংস খেয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে তারা রোজা রাখছেনা।

বন্দী শিবিরে চীনা কর্তৃপক্ষ ইসলাম ও মুসলিমদের নিন্দা করতে ও চীনা সংস্কৃতি ও নাস্তিকতা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। সেখানে যারা ইসলাম ত্যাগ করে কমিউনিস্ট আদর্শ গ্রহণ করে, তারা তাদেরকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়। আর যারা কমিউনিস্ট আদর্শ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাদেরকে বর্বর অত্যাচার ও শাস্তি দেওয়া হয়।

প্রায়ই চীনা হানরা উইঘুর নারীদের বিনা টাকায় কাজ করতে বাধ্য করে। উইঘুর মুসলিম মেয়েদেরকে নাস্তিক চাইনিজদের সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। উইঘুর পুরুষদেরকে কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পে আটকে রেখে সেই মুসলিমদের স্ত্রী -কন্যা ও বাচ্চাদের সাথে একই বিছানায় শুয়ে থাকে নিকৃষ্ট চাইনিজরা।

চীনের মুসলিমদের রোজা রাখার পাশাপাশি দাড়ি রাখা, নারীদের মাথায় কাপড় দেয়া, নিয়মিত নামাজ আদায় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাসহ ধর্মীয় বিষয়গুলোকে চীন কর্তৃপক্ষ চরমপন্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক রিপোর্ট প্রকাশ করে।

উইঘুর বুলেটিনে কাজ করা উইঘুর মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট অ্যালিপ এরকিন জানান, কয়েক দশক ধরে স্কুল এবং সরকারি দফতরগুলোতেও রমজান মাসে রোজা রাখার বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করে আসছে চীনা কর্তৃপক্ষ।

আর গত চার বছরে মুসলিমদেরকে ইসলামি ঐতিহ্য থেকে দূরে রাখতে তাদের বাড়িতে গণ-নজরদারি ও আটকের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অ্যালিপ এরকিনের মতে বর্তমানে জিনজিয়াং প্রদেশের বিভিন্ন কারাগারে ১২ লাখেরও বেশি মুসলিম আটক রয়েছে।

শুধু তাই নয়, গত বছর দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে যে, ২০১৬ সালের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত তিন বছরে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ৩১টি মসজিদ ধ্বংস করেছে দেশটির প্রসাশন। তাছাড়া এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইসলামী স্থাপনাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

বন্দী নারীদের হাত-পা বেঁধে উঁচু চেয়ারে বসিয়ে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয়, এমন মারাত্মক ওষুধ খাওয়ানো হয় যার ফলে নারীদের প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয় বা কারো মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

আব্দুর রহমান হাসান নামের এক ব্যবসায়ী চীন সরকারকে অনুরোধ করেন তার মা ও ২২ বছর বয়সী স্ত্রীকে যেনো তারা গুলি করে মেরে ফেলে।

কারণ রিএডুকেশন ক্যাম্পের শাস্তি তারা সহ্য করতে পারবেনা। এই অত্যাচারের শিকার হয়ে অনেক পরিবারই তাদের কমিউনিস্ট আদর্শ গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উইঘুররা।

মুসলমানদেরকে জোর করে শূকরের মাংস খাওয়ানো হয়, মদ পান করানো হয়, কমিউনিস্ট দলের নেতাদের ছবি বাড়িতে টানিয়ে রাখাসহ ছেলেদের দাড়ি না রাখা এবং মেয়েদেরকে শর্ট ড্রেস পড়তে বাধ্য করা হয়।

এক ব্যক্তি লম্বা দাড়ি রাখায় চীনের আদালত তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে, শুধু তাই নয় তার স্ত্রীকেও বোরকা পরিধান করায় ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সেখানে মুসলিম নারীদের ঢোলা জামা পড়াও নিষিদ্ধ। সকল মসজিদগুলোতে চীনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাশ্মীর | মুজাহিদদের উদ্দেশ্যে শাইখ খালেদ ইব্রাহীম হাফিজাহুল্লাহ্ এর চিঠির উদ্ধৃতাংশ, এজিএইচ।
পরবর্তী নিবন্ধচীনের উইঘুর মুসলিমরা যেসব নির্যাতন ভোগ করছে