নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের সংরক্ষিত এক নারী কাউন্সিলরের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ। সোমবার দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৮নং ওয়ার্ডের বৌ-বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। তবে ছাত্রলীগের কর্মীরা বলছে, কাউন্সিলর দিনা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে থানায় উভয় পক্ষই পৃথক দুটি অভিযোগ দিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরে এবং বিকেলে আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলনে করেছে ওই নারী কাউন্সিলর ও স্থানীয় ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার দুপুরে নাসিক ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা গোদনাইল এলাকাস্থ তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তার আপন খালা রাশিদা করোনার এই পরিস্থিতিতে তার বাড়ির এক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমার খালার ভাড়াটিয়া আমান কর্মহীন হয়ে পড়ায় তিন মাসের বাসা ভাড়া পরিশোধ করেনি। ১৩ জুন রাতে ভাড়াটিয়া আমান আমার অফিসে এসে এ ব্যাপারটি আমাকে জানায়।
এদিকে সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় আমার খালা ও তার ছেলে রুবেল কিছু বহিরাগত ছেলেদের নিয়ে ভাড়াটিয়া আমানকে বাসা ছেড়ে দিতে এবং বাড়ি ভাড়ার জন্য হুমকি প্রদান করতে থাকে। বিষয়টি আমি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার খালা এবং খালাতো ভাইকে বুঝিয়ে আমার অফিসে চলে আসি। আমি রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় আমার খালা রাশিদা ও খালাতো ভাই রুবেল, রাকিব, অনিক, নাজমুল, বিজুসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন আমার অফিসে এসে আমাকে গালাগালি করে আমার ওপর হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে তারা আমার চুলে ধরে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এসময় সঙ্গে থাকা আমার স্বামী এবং ছোট ভাইকেও তারা কিল-ঘুষি এবং লাথি মেরে শারীরিক নির্যাতন করে। একই সময় তারা আমার হাতে থাকা স্বর্ণের বালা এবং স্বর্ণের আংটি এবং আমাদের তিনজনের কাছে থাকা তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এসময় আমাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। যারা তার ওপর হামলা চালিয়েছে তারা ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে কাউন্সিলর দিনা।
এদিকে দিনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তার খালা রাশিদা বেগম। মঙ্গলবার (১৬ জুন) বিকেলে নাসিক ৮নং ওয়ার্ডের পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে আয়োজিত পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর দিনার খালার সঙ্গে উপস্থিত ছিল ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানায়, আমি ব্যক্তিগত কারণে দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে ভাড়া থেকেছি। কিন্তু সম্প্রতি আমি আমার বাড়িতে চলে আসবো। এজন্য আমার বাড়ির ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলি এবং তার তিন মাসের বাড়ি ভাড়া মওকুফও করে দেই। কিন্তু কাউন্সিলর দিনা ও তার ভাই দিপু আমার ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়তে নিষেধ করেন। আমি আমার ভাড়াটিয়াকে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করি।
এমন সময় দিনা ও তার ভাইসহ প্রায় ২০/২৫ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমার ছেলেকে মারধরের হুমকি দেয়। আমি দিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে সে আমাকে মারধর শুরু করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আমি সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসি। সংবাদ সম্মেলনে রাশিদা বেগমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলো ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক তামিম ইসলাম জয়, নাসিক ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল। কালের কন্ঠ
তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার চুরির যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্রলীগ নেতা তামিম জয় জানান, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমরা এ ধরনের কোনো কাজ করি নাই। বরং আমরা তাদের খালা ভাগ্নীর মধ্যে বিবাদ মিটাতে সেখানে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে রাকিব নামে আমাদের ছাত্রলীগের এক নেতা রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তার সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।