করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে এসে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্লান্ত অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সাঈদ রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বাইরে দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মাঝখানে বসে পড়েন। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হয়ে দুপুরের দিকে তাকে ফিরে যেতে হয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় বেশ কয়েকটি ক্লিনিক তার জ্বর, সর্দি এবং ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করেনি।
জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনে দেশে নতুন ছয়টি আরটি-পিসিআর ল্যাব যুক্ত হয়েছে। এতে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও উল্টো জুনের শেষ সাত দিনের চেয়ে কমেছে ১৫ হাজার ৪২৯টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৩ হাজার ১৭৩টি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে নতুন একটি ল্যাব। এ নিয়ে মোট ল্যাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ ।
আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, এই সাত দিনে করোনা পরীক্ষায় সংযুক্ত হয়েছে নতুন ছয়টি ল্যাব। গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৬৮টি ল্যাবের পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হলেও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত একটি করে, ৫ জুলাই দুটি ও আজ একটি নতুন ল্যাব যুক্ত হয়েছে।
সে অনুযায়ী দেশে বর্তমানে করোনা পরীক্ষায় মোট আরটি-পিসিআর ল্যাবের সংখ্যা ৭৪টি।
ল্যাবের সংখ্যা বাড়লেও গত সাত দিনে কমেছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা।
গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত ফলাফলে ১৬ হাজার ৮৯৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বলে জানানো হয়। আজ জানানো হয়েছে, মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৯১টি।
১ জুলাই দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ৮৭৫টি নমুনা। আজ জানানো হয়েছে ১৩ হাজার ১৭৩টি পরীক্ষার ফলাফল। অর্থাৎ, ১ জুলাইয়ের তুলনায় আজ পরীক্ষা কম হয়েছে চার হাজার ৭০২টি।
চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষা হয়েছে ২ জুলাই। সে দিন মোট ১৮ হাজার ৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও, ৩ জুলাই ১৪ হাজার ৬৫০টি, ৪ জুলাই ১৪ হাজার ৭২৭টি, ৫ জুলাই ১৩ হাজার ৯৮৮টি ও ৬ জুলাই ১৪ হাজার ২৪৫টি নমুনা পরীক্ষার তথ্য জানানো হয়।
সব মিলিয়ে জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনে মোট পরীক্ষা হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ২০টি। যা জুনের শেষ সাত দিনের চেয়ে ১৫ হাজার ৪২৯টি কম।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে ধীরে ধীরে দেশে বাড়তে থাকে করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্তর সংখ্যাও।
২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তিন হাজার ৬৫টি। এরপর থেকে ক্রমাগত পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে এপ্রিলে ৬২ হাজার ৮২৬টি, মে মাসে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৩৯টি ও জুনে চার লাখ ৫৭ হাজার ৫৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
জুনের শেষ সাত দিনে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা: ২৪ জুন ১৬ হাজার ৪৩৩টি, ২৫ জুন ১৭ হাজার ৯৯৯টি, ২৬ জুন ১৮ হাজার ৪৯৮টি, ২৭ জুন ১৫ হাজার ১৫৭টি, ২৮ জুন ১৮ হাজার ৯৯টি, ২৯ জুন ১৭ হাজার ৮৩৭টি ও ৩০ জুন ১৮ হাজার ৪২৬টি— মোট এক লাখ ২২ হাজার ৪৪৯।
সব মিলিয়ে সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত আট লাখ ৭৩ হাজার ৪৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জন। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজার ১০২ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ১৫১ জন। তবে বিভিন্ন বেসরকারি রিপোর্টে সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশ তফাৎ দেখা গেছে ইতোমধ্যেই। দ্য ডেইলি স্টার