কুরবানির ঈদ ও আমাদের করণীয়

    0
    1075
    কুরবানির ঈদ ও আমাদের করণীয়

    পৃথিবী জুড়ে পালিত হলো ঈদ-উল-আযহা বা কুরবানির ঈদ। আমাদের মধ্যে যাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়েছিল, নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী পশু কুরবানির মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় করার চেষ্টা করেছি আমরা। আলহামদুলিল্লাহ। বোধ হয় অন্যান্য ইবাদাতের তুলনায় এই একটি ইবাদতে আমরা গাফলতি কম করে থাকি। ইখলাসের বিষয়টি আল্লাহর ওপরেই ন্যস্ত। তবে বাহ্যিক দিক বিবেচনায় আমরা এ উপসংহারে পৌঁছোতেই পারি।

    মূলত আমাদের প্রতিটি ইবাদাত কেবল কিছু আচারের সমষ্টিই নয়, যা আদায় হয়ে গেলেই তার ফলাফল বা প্রভাব নিঃশেষ হয়ে যায়। বরং প্রতিটি ইবাদাতের ফলাফল অনেক প্রসারিত। পরকালীন ফলাফল আমরা আলোচনায় আনছি না। দুনিয়াবি ফলাফল নিয়েই ভেবে দেখি।

    প্রতিটি ইবাদাতই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় রব্বুল আলামীনকে, বাড়িয়ে দেয় তাঁর প্রতি আরো ভক্তি-শ্রদ্ধা। একটি ইবাদাত অন্য আরেকটি ইবাদাতে উৎসাহিত করে। প্রতিটি ইবাদাত থেকে অর্জিত শিক্ষায় আমরা রাঙিয়ে তুলতে পারি আমাদের জীবন। ঠিক কুরবানির এ ওয়াজিব ইবাদাত থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি, অনুপ্রাণিত হতে পারি অন্য আরো কোনো ইবাদাতের প্রতি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

    হাজার-লক্ষ টাকা ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা কুরবানি দিয়ে থাকি৷ এ কুরবানি হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত। এ ইতিহাস আমরা সবাই জানি। রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজ ছেলেকে কুরবানি দিতে মনস্থির করেছিলেন তিনি। অতঃপর আল্লাহ তাঁর খলিলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং তাঁর পক্ষ থেকে ছেলে ইসমাইলের বদলে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের জীবনে এটি ছিল আরেকটি অগ্নি পরীক্ষা। এতেও তিনি উত্তীর্ণ হন।

    ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আমাদের জাতির পিতা। আমরা তাঁর মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুসরণ করতে আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং কেবল কুরবানির সুন্নাতই নয়, মিল্লাতে ইবরাহিমের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হতে হবে আমাদেরকে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে লক্ষ করে বলছেন,

    فَاتَّبِعُوۡا مِلَّۃَ اِبۡرٰہِیۡمَ حَنِیۡفًا ؕ وَ مَا کَانَ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ-

    অর্থ: অতএব তোমরা সুদৃঢ় মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুসরণ কর এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্গত ছিলেন না। [সূরা আলে ইমরান : ৯৫]

    সুতরাং আমাদেরকেও একনিষ্ঠভাবে মিল্লাতে ইবরাহিমের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। কাফের, মুশরিক, তাগুতের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাওহিদের দৃপ্ত ঘোষণা দিতে হবে। তখনই নেমে আসবে অত্যাচার-নির্যাতন। ঠিক সেই মূহুর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্যধারণ করতে হবে। সংখ্যায় কম থাকার কারণে আমাদের হীনম্মন্যতায় ভোগা চলবে না। মনে রাখতে হবে, ইবরাহিম আলাইহিস সালামও একাই ছিলেন এবং তাকে একাই একটি উম্মাহ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

    আমাদের কুরবানি কেবল আল্লাহর জন্য। আমাদের সলাত কেবল আল্লাহর জন্য। আমাদের সিয়াম কেবল আল্লাহর জন্য। আমাদের বেঁচে থাকাও কেবল আল্লাহর জন্য। আমাদের মরণ, তাও হবে কেবল আল্লাহর জন্য। আল্লাহ নিজেই কুরআনে বলে দিয়েছেন,

    قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ-

    অর্থ: তুমি বলে দাও, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য।

    আমরা যেমন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আর্থিক কুরবানি দিয়েছি, ঠিক তেমনি তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের আশায় দৈহিক কুরবানি দিতেও আমাদের প্রস্তুত হওয়া দরকার। আমাদের জীবন অতিবাহিত হবে আল্লাহর জন্য, আমরা হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করবো, তাও কেবল আল্লাহর জন্য। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মতো অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হলেও দ্বীন ছাড়বো না, ইনশাআল্লাহ। জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করবো দ্বীনের জন্য। দ্বীনের জন্যই এ জীবন বিলিয়ে দিব। দিবই বা না কেনো? মহান আল্লাহ তো জান্নাতের বিনিময়ে আমাদের জীবন কিনে নিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন,

    اِنَّ اللّٰہَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ وَ اَمۡوَالَہُمۡ بِاَنَّ لَہُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡہِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَہۡدِہٖ مِنَ اللّٰہِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِہٖ ؕ وَ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ-

    অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন সম্পদসমূহকে এর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং (কখনো নিজেরাও) নিহত হয়। এর কারণে (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুরআনে। নিজের অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ অপেক্ষা অধিক আর কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয় বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ। আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা। [সূরা তাওবা : ১১১]

    আল্লাহ আমাদের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। অতঃপর বিক্রেতা হিসেবে আমাদের কী করণীয়?

    – ‘তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং (কখনো নিজেরাও) নিহত হয়।’

    মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে কবুল করুন। দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ কুরবানি দেওয়ার তাওফিক দান করুন।


    লেখক: আবদুল্লাহ আবু উসামা

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলাম গ্রহণ করলেন বিশ্বখ্যাত ভারোত্তলক রেবেকা কোহা
    পরবর্তী নিবন্ধবাবরি মাসজিদের ভূমিতে রামমন্দির নির্মাণ: মুসলিমদের সুপ্ত চেতনায় স্ফূলিঙ্গের ছোঁয়া