১৭। মোল্লা আব্দুল হক ওয়াসিক:
তাঁর পিতার নাম মোল্লা মুহাম্মদ সালীম। গজনী প্রদেশের খুগিয়ানি জেলার অন্তর্গত ঘারিব কালা গ্ৰামে জন্মগ্ৰহণ করেন। তিনি তাঁর পিতার কাছে এবং দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। দেশের ঐতিহাসিক পুল-এ-খিশতী মসজিদে বিখ্যাত আলেম কুরনহ আখুন্দজাদার কাছে বেশ কিছু গ্ৰন্থ অধ্যয়ন করেছেন।
তিনি একজন হাফেজে কুরআন। আরবীসহ তিনটি ভাষায় তিনি কথা বলতে পারেন।
হরকতে তালেবানে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। তিনি ইসলামী ইমারাহর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিমরোজ প্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক হিসেবে এবং কান্দাহারের পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাবুল বিজয়ের পর তথ্য মহাপরিচালক, ডেপুটি অফ অপারেশন্স হিসেবে এবং কান্দাহার প্রদেশের তথ্য বিভাগের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মোল্লা আব্দুল হক ওয়াসিক তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী পরিচালিত কাবুল নিরাপত্তা কমিশন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিচালিত পলিটিকেল কমিশনের সদস্য ছিলেন।
আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা শুরু হওয়ার পর মোল্লা ওয়াসিক বন্দি হন। তাঁকে গুয়ান্তানামো বে-তে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি ১২ বছর বন্দি জীবন কাটান। তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে এক বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে তাঁকে ও তাঁর আরো চার সঙ্গীকে ০১/০৬/২০১৪ সালে কাতারে আনা হয়।
২০১৮ সনে তাঁকে পলিটিকেল অফিসের সদস্য করা হয়। ২০১৯ সনে তাঁকে আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত টিমের সদস্য করা হয়। তিনি বর্তমানে পলিটিকেল অফিসের ইউরোপিয়ান ডিপার্টমেন্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি সংলাপ দলের সদস্য।
১৮। মৌলভি মুহাম্মাদ নবী উমরী:
তাঁর পিতার নাম হাজী মুহাম্মাদ উমর। ১৯৭১ ইং সনে খোস্ত প্রদেশের ইসমাইল খেল জেলার অন্তর্গত শামশি খেল গ্ৰামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক পড়াশোনা দেশেই সমাপ্ত করেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করার পর তিনি পাকিস্তানে হিজরত করেন। দারুল হিজরাহে অবশিষ্ট পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।
বেফাকুল মাদারিস থেকে ডিগ্ৰি অর্জনের পর পাঁচ বছর তিনি শিক্ষকতা করেন। তিনি একজন হাফেজে কুরআন। মৌলভী উমরী পশতু ,দারি,ও আরবি ভাষায় কথা বলতে পারেন।
মরহুম নেতৃস্থানীয় মুজাহিদ জালালুদ্দিন হাক্কানির অধীনে তিনি তাঁর রাজনৈতিক ও সামরিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি সাবেক সোভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঁচ পাঁচবার আহত হয়েছেন। কমিউনিস্টদের পতনের পর বুরহানুদ্দীন রাব্বানীর প্রেসিডেন্সির সময় আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ কমিটিতে তিনি নিজ জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৯২ সনে মুজাহিদীন সরকারের শাসনামলে তিনি দুই বছর খুসত প্রদেশের সহকারী পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাবুল বিজয়ের পূর্বে তালেবানের পক্ষ হয়ে জাবুল প্রদেশের পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাবুল বিজয়ের পর তাঁকে সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর প্রধান করা হয়।
আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের হামলা শুরু হওয়ার পর ২০০২ সালে তিনি বন্দি হন। ১২ বছর তিনি গুয়ান্তানামো বে কারাগারে কাটান। তালেবান ও আমেরিকার মধ্যকার এক বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে ২০১৪ সালের পহেলা জুনে তাঁকে তাঁর চার সঙ্গীসহ কাতারে আনা হয়।
২০১৮ সালে তাঁকে ইসলামী ইমারাহর পলিটিকেল অফিসের সদস্য করা হয়। ২০১৯ সালে আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত টিমের সদস্য করা হয়। উমরী বর্তমানে পলিটিকেল অফিসের জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাথে মৈত্রী বিষয়ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োজিত আছেন এবং তিনি সংলাপ দলের সদস্য।
১৯। মুহাম্মদ সোহাইল শাহীন:
তিনি গোলাম মুহাম্মাদ আহমদজাইর পুত্র। পাকতিয়া প্রদেশের আহমদাবাদ জেলার অধিবাসী। তিনি কাবুল ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী; সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছেন। তিনি ইউনিভার্সিটিতে ধর্মীয় শিক্ষাও অর্জন করেছেন।
পূর্বে জিহাদ চলাকালে তিনি সাংস্কৃতিক সংগ্ৰামে সক্রিয় থেকেছেন। বিভিন্ন ম্যাগাজিনে এ সংক্রান্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ইংরেজিতে লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে অসাধারণ প্রতিভা। পশতু ভাষায় লেখালেখিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। মাতৃভাষার পাশাপাশি দারি, আরবি, ইংলিশ ও উর্দুতে তিনি কথা বলতে পারেন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জিহাদ চলাকালে তিনি মৌলভী নাসরুল্লাহ মানসূরের সাথে ছিলেন। হরকতে ইনকিলাবে ইসলামী কর্তৃক প্রকাশিত খুদ্দাম আল ফুরকান ম্যাগাজিন এবং দ্য ভয়েস অফ মুজাহিদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। মুজাহিদগণের সাত দলীয় জোট প্রকাশিত দ্য জিহাদ রেইজ (Ray’s) ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন মৌলভি নাসরুল্লাহ মানসূর নেতৃত্বাধীন হরকতে ইসলামীর পলিটিকেল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান।
ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে তিনি দ্য কাবুল টাইমসের সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে ইসলামী ইমারাহর মিশনের সহকারী প্রধান করা হয়। আরো পরে তাঁকে ইসলামাবাদে আফগান দূতাবাস মিশনের সহকারী প্রধান করা হয়।
দেশে মার্কিন হামলা শুরু হওয়ার পর তিনি ইসলামী ইমারাহর সংস্কৃতি কমিশনে সক্রিয় থাকেন এবং আল-ইমারাহ ইংলিশ ওয়েব সাইটের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বর্তমানে ইসলামী ইমারাহর মুখপাত্র হওয়ার পাশাপাশি পলিটিকেল অফিসের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি সংলাপ দলের সদস্য।
২০। মুহাম্মদ আনাস হাক্কানী:
তিনি নেতৃস্থানীয় মুজাহিদ মরহুম জালালুদ্দিন হাক্কানির কনিষ্ঠ পুত্র। পাকতিয়া প্রদেশের গারদা সেরাই জেলার অন্তর্গত কান্দাউ গ্ৰামে তাঁর জন্ম। ১৯৯৪ সনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। স্কুলে পড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেছেন। মাতৃভাষা পশতু ছাড়াও দারি, উর্দু ও আরবিতে কথা বলতে পারেন। তিনি শর্ট কোর্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সাক্ষাতে কাতার যাওয়ার পর তিনি আমেরিকার হাতে বন্দী হন। তখনো তিনি একাডেমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করেননি।
বাগরাম কারাগারে তাঁকে পাঁচ বছর বন্দি করে রাখা হয়। তালেবানের হাতে আটক থাকা দুইজন বিদেশি শিক্ষকের মুক্তির বিনিময়ে ২০১৯ সালে তাঁকে ও তাঁর দুই সঙ্গীকে কাতারে এনে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত দলে তাঁকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে আনাস হাক্কানী পলিটিকেল অফিসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের সদস্য এবং সংলাপ দলের সদস্য।
২১। ড. মুহাম্মদ নাঈম:
তিনি মরহুম ড. আঘা জানের পুত্র। ১৩৫৩ হিজরি সোলার সনে মাইদান ওয়ারদাক প্রদেশের এরাবান ভেলি অফ চক জেলার বাহাদুর খান গ্ৰামে তাঁর জন্ম।
১৩৫৯ হিজরি সোলার সনে তাঁর পিতা রাশিয়ান কমিউনিস্টদের হাতে শহীদ হন। তিনি তাঁর চাচা মরহুম মোল্লা আমির জানের কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি তাঁর কাছে দারি ভাষায় রচিত বেশকিছু ধর্মীয় বই পড়েন। কাবুলের স্পিন কালা স্কুলে আধুনিক শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি বাকি পড়াশোনা আরাবান হাইস্কুল ও একই এলাকার শাহাদাত মাদ্রাসায় সমাপন করেন। সেখানে তিনি পবিত্র কুরআনও হিফজ করেন। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে ১৩৭৯ সালে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে পাড়ি জমান। পেশোয়ারে আরবি ভাষা ও ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি তাঁর মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণপদক লাভ করেন। একই বছর পিএইচডি করার জন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন।
২০০৫ সালে তিনি তাঁর পড়াশোনা সমাপ্ত করেন এবং কোর্স পূর্ণ করেন। ২০১০ সালে তিনি তাঁর ডিজার্টেশন (গবেষণা মূলক দীর্ঘ প্রবন্ধ,যা পিএইচডি ডিগ্ৰি অর্জনের জন্য প্রস্তুত করা হয়) সমাপ্ত করেন। অবশ্য তাঁর প্রবন্ধের বিচার বিশ্লেষণ বা নিরীক্ষণ এখনো ঝুলে আছে।
শুরু থেকেই তিনি আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনা করে আসছিলেন; বিশেষত ছুটির দিনগুলোতে। ২০০৬ সাল থেকে তিনি হাক্কানিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। হাদীস সাবজেক্টে নয়শত ছাত্রের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
২০০৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ইসলামাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন।
২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত পেশোয়ারে আরবি ভাষা ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।
আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা শুরু হওয়ার পর তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ইসলামী ইমারাহর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক, জিহাদী ও রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে জড়িত ছিলেন। ২০১০ থেকে নিয়ে তিনি ইসলামি ইমারাহর পলিটিকেল অফিসে কর্মরত আছেন। তিনি সংলাপ দলের সদস্য।
আগের পর্বগুলো দেখুন-
পর্ব-১: https://alfirdaws.org/2020/10/23/43549/
পর্ব-২: https://alfirdaws.org/2020/10/27/43670/
পর্ব-৩: https://alfirdaws.org/2020/10/29/43760/
পর্ব-৪: https://alfirdaws.org/2020/11/01/43844/