আফগান সংলাপ: ইসলামী ইমারাতের সংলাপ-দলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (৫)

3
1138
আফগান সংলাপ: ইসলামী ইমারাতের সংলাপ-দলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (৫)

১১। মোল্লা শিরিন আখুন্দ:

মোল্লা শিরিন আখুন্দ নামেই তিনি পরিচিত। তবে তাঁর প্রকৃত নাম মোল্লা আবদুল্লাহ হানাফী। তাঁর পিতার নাম হাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি কান্দাহার প্রদেশের জারি জেলার সানজারি গ্রামের অধিবাসী। পরিবারের বড়দের কাছে তিনি প্রথম পাঁচ বছর পড়াশোনা করেন। তার পরিবার শিক্ষিত পরিবার হিসেবে পরিচিত। তিনি দেশের বড় বড় আলেমদের কাছে বিভিন্ন বিরতিতে হাদীস পর্যন্ত পড়েন।
শিক্ষা জীবনে পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। তার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তিনি ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি। জিহাদী তৎপরতা ও দায়-দায়িত্বের কারণে তাঁর পক্ষে একাডেমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

আফগানিস্তানে যখন রাশিয়া হামলা চালায় তখন তিনি একাডেমিক পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমত একজন সাধারণ মুজাহিদ হিসেবে জারি জেলার মাউন্ট তরতাক থেকে জিহাদ শুরু করেন।
ইসলামী ইমারাহর অগ্রগতির সময় তিনি একজন সাধারণ যোদ্ধা হিসেবে হরকতে তালেবানে যোগ দেন। সেসময় ইমারাহর মুজাহিদ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি নিজের পারিবারিক কাজকর্মও করতেন। মরহুম আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর মুজাহিদের বাড়িতে বোমা হামলা হওয়ার পর তাকে আমীরুল মু’মিনীনের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

২০০১ সালে মার্কিন হামলা শুরু হলে তিনি গ্রুপ লিডার হিসেবে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। তারপর কান্দাহারের প্রাদেশিক কমিশনের প্রধান, তারপর পশ্চিমাঞ্চলীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান এবং এরপর উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে ইসলামী ইমারাহর ইন্টেলিজেন্স কমিশনে কাজ করেছেন, তারপর কান্দাহারের গভর্নর, এরপর জেনারেল মিলিটারি অফিসার এবং তারপর দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহে মার্টায়ারডম ব্যাটালিয়নের ( ইস্তেশহাদী বা ফেদাঈ গ্রুপ) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমান আমীরুল মু’মিনীনের আদেশে সম্প্রতি তাঁকে নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য করা হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি সংলাপ দলের সদস্য। আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল জিহাদী খেদমত কবুল করুন। অতীতে যেসকল প্রতিকূলতার মুখোমুখি তাঁকে হতে হয়েছে তাঁর জন্য উত্তম বিনিময় দান করুন এবং তাঁর ওপর ন্যস্ত সকল দায়-দায়িত্ব সফলতার সাথে আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক দান করুন।

১২। শায়খুল হাদীস মৌলভি মুহাম্মদ কাসিম রাসিখ:

শায়খ মৌলভী মুহাম্মদ কাসিম রাসিখের পিতার নাম মোল্লা জুমা নযর। ১৩৫০ হিজরি সোলার সনে জাওজান প্রদেশের ফয়েজাবাদ জেলার অন্তর্গত আনপিকাল গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি জেনারেল ও ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষা দেশেই সমাপ্ত করেন। তারপর উচ্চ শিক্ষার জন্য দারুল হিজরাহে (পাকিস্তান) চলে যান। ১৪১৬ হিজরি সনে মাজহারুল উলুম দারুল উলুম সোয়াবিতে হাদীস অধ্যয়ন করেন।
মাতৃভাষা ছাড়াও পশতু, দারি ও আরবিতে কথা বলতে পারেন।

তিনি তুর্কমেন উপজাতির প্রভাবশালী ব্যক্তি। হাদীস বিশারদ এবং হাদিসের উঁচুস্তরের শিক্ষক। শায়খ কাসিম রাসিখ দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় স্কুলে পনের বছরেরও বেশি সময় ধরে শরিয়াহ ও আরবি ব্যাকরণ পাঠদান করছেন। তিনি দারুল হিজরাহে (পাকিস্তানে) ১০ বছর অবস্থান করেছেন। সেখানে দারুল হাদিসে‌ পাঠদান করতেন।

২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ইসলামী ইমারাহ আফগানিস্তানের দাওয়াহ কমিশনের সদস্য ছিলেন। জাওজান প্রদেশের দাওয়াহ কমিশনের প্রধান ছিলেন।
২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বিশটি প্রদেশে মিলিটারি হাইকোর্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বর্তমানে ইসলামী ইমারাহর নেতৃত্ব পরিষদ ও সংলাপ দলের সদস্য।

১৩। মৌলভী ফরিদুদ্দিন‌ মাহমুদ:

মৌলভি ফরিদুদ্দিন মাহমুদের পিতার নাম মৌলভী মুহাম্মদ আলম। তিনি পাকতিয়া প্রদেশের রাজধানী শারানায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজ পিতা ও দেশের আলেমদের কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন পাকিস্তানের কুহাট ও মর্দানে। ১৩৯৬ হিজরি সনের শাবান মাসে দারুল উলুম হাক্কানিয়া খাত্তাক থেকে উচ্চ ডিগ্ৰি অর্জন করেন।
দাউদ খানের আমলে ১৩৯৫ হিজরি সনে প্রয়াত জালালুদ্দিন হাক্কানি ও মৌলভি নাসরুল্লাহ মানসূরের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। মুজাহিদদের বিজয়ের পর তিনি পাকতিয়া প্রদেশের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান।

ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে কাবুলের একাডেমি অফ সায়েন্সের মানবিক বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মার্কিন আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর মৌলভী ফরিদুদ্দিন‌ শিক্ষা কমিশন ও আপিল আদালতের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি বর্তমানে ইসলামী ইমারাহর সংলাপ দলের সদস্য।

[চলবে ইনশাআল্লাহ…]

আগের পর্বগুলো দেখুন-

পর্ব-১: https://alfirdaws.org/2020/10/23/43549/

পর্ব-২: https://alfirdaws.org/2020/10/27/43670/

পর্ব-৩: https://alfirdaws.org/2020/10/29/43760/

পর্ব-৪: https://alfirdaws.org/2020/11/01/43844/

3 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস সাপ্তাহিকী || সংখ্যা : ৪১|| নভেম্বর ১ম সপ্তাহ, ২০২০ ঈসায়ী
পরবর্তী নিবন্ধউত্তর প্রদেশে মসজিদের অভ্যন্তরে হনুমান চল্লিশা পাঠ করলো বিজেপি নেতা