এক সময় তার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীও সমর্থকরা। সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। সহ্য করতে হয়েছে জুলম আর নির্যাতন। তাই লেখাপড়াও শেষ করতে পারেননি। মিছিলের অগ্রভাগে থেকে এভাবেই শ্লোগান দিয়ে রাজপথ কাঁপাতেন মো. সেলিম খন্দকার।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি দীর্ঘ বছর এ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। বর্তমানে সব কিছু যেন তার জীবনে অতীত হয়ে আছে। জীবন জীবিকার তাগিদে তিনি এখন দিনমজুরের কাজ করে দিনাতিপাত করছেন।
সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা সেলিম খন্দকার সীমান্তবর্তী মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা গ্রামের কৃষক নূরুল হক খন্দকার ওরফে দারগা আলীর ছেলে। তিনি ১৯৯০ সালের পরে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে যোগ দেন। তৎকালীন সময়ে সীমান্ত এলাকার এক অজপাড়াগাঁ থেকে শহরে ছুটে এসে নিয়মিত মিছিল, সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন। তার রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মকাণ্ডের কারণে স্বল্প সময়ের তিনি দলের মধ্যে একজন জনপ্রিয় কর্মী হয়ে উঠেন।
একপর্যায়ে তিনি কাউন্সিলের মাধ্যমে মোগড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হন। সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে সাবেক এ নেতা অভাবের তাড়নায় দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ ৪ জনের সংসার তার। পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন জোগাতে কখনো নির্মাণ শ্রমিক, কখনো মালামাল লোড-আনলোড, আবার কখনো ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করছেন তিনি।
তার থাকার দু’চালা টিনের ঘরটি ও ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে টিনের চাল দিয়ে ঘরে পানি ঢুকে পড়ছে। সেই ভাঙাচোরা ঘরের মধ্যেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন যাপন করছেন সাবেক এ ছাত্রনেতা।
সেলিম খন্দকার বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছিলাম। তখনকার সময় রাজনীতি করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। সরকার বিরোধী আন্দোলনে অনেক জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি থেকে সরে যাইনি। একপর্যায়ে ইউনিয়ন ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নানা কারণে আজ আমরা যেন হারিয়ে যেতে বসেছি। যার কারণে আজ অর্থাভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে। গরিব কৃষকের ঘরে জন্ম নেয়ায় ইচ্ছাশক্তি থাকার পরও লেখাপড়া বেশি করতে পারিনি। তাই এখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। যেদিন কাজ থাকে সেদিন আহার জোটে। আর যেদিন কাজ থাকে না সেদিন উপোস থাকতে হয়। তাছাড়া এখন বয়স হয়েছে, বেশি পরিশ্রমের কাজ করতে কষ্ট হয়।
উল্লেখ্য, তার অব্স্থা থেকে বর্তমানের ছাত্রলীগ নেতাদের অনেক কিছু শেখার আাছে। যারা ক্ষমতার দাপটে অহরহ অন্যায় কাজ করে চলছে। দলীয় রাজনীতির অন্ধ অনুকরণে উলামায়ে কেরামের সাথে বেয়াদবি করছে।