ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার প্রায় ৬ বছর পর পরিকল্পনায় ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
রেলের লাইন নির্মাণ কাজের পরিকল্পনায় ত্রুটি ধরা পড়ায় একই জায়গায় পুনরায় নতুন আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে আরও চারশ কোটি টাকার বেশি।
উল্লেখ্য, এখন যে প্রকল্পটি গৃহীত হচ্ছে প্রথম থেকেই এর কাজ করা সম্ভব ছিল। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত বরাদ্দ থেকে প্রায় চারশ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হতো। কিন্তু রেলওয়ের ভুলের কারণে এ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
৩৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে চলমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৫ সালে। শুরুতে পরিকল্পনা গ্রহণেই ছিল ভুল। সে সময় বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনটি যদি ডাবলগেজে আলাদা দুটি লাইন করা হতো তবে উদ্ভূত কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতো না।
কিন্তু রেলের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি ডাবলগেজ লাইন করার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘ এ সময়ে প্রকল্পটির কাজ ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নানা অজুহাতে প্রকল্পের সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। ফলে ২০২১ সালেও কাজটি শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে এসে পরিকল্পনায় ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালু হলে চাপ বাড়বে। কাজেই ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নতুন লাইনের পাশে আরও একটি লাইন বসাতে হবে।
মন্ত্রণালয় সংশোধিত হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটি নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৪০৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ১০৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জাপান এ প্রকল্পে আর অর্থায়ন করবে না। ব্যয়বৃদ্ধি যত হয় সবই বাংলাদেশের জনগণের জমাকৃত তহবিল থেকেই যাবে।
রেলওয়ের আরেক ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী বলেন, ২০১২ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে নতুন রেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ওই সময় সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা চলমান লাইনের সংস্কার ছাড়া শুধু নতুন করে একটি ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের পক্ষে নানা যুক্তি দেন। তারা জানত, চলমানটি বাদ রেখে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে পরে নতুন করে আরেকটা প্রকল্প নেওয়া যাবে। এতে তাদের পকেট ভারি হবে।
এদিকে অপর এক কর্মকর্তা জানান, এ প্রকল্পটি নিয়ে সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। ২০১২ সালে প্রকল্পটির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সে সময় একইসঙ্গে এ পথে ডুয়েলগেজের দুটি লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্টরা। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন কয়েক বছর আগেই বিদ্যমান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মিটারগেজ রেলপথটি সংস্কার করা হয়েছে। এমন যুক্তির পর শুধু নতুন একটি ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে নির্মিত ডুয়েলগেজের চেয়ে প্রায় তিন ফুট নিচুতে রয়েছে চলমান মিটারগেজ লাইনটি। দুই লাইনের মধ্যে উঁচু-নিচু থাকায় ট্রেন চলাচলে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলে চলমান রেল লাইনটিতে পানি জমছে। অন্যদিকে দুটি লাইনের মাঝে লেভেলক্রসিং সমান্তরাল না হওয়ায় সড়কযান চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান প্রকল্পের সঙ্গে ২০১৫ সালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ৬ বছর পর এমন ভুল ধরা পড়ত না। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের অনুদান রয়েছে ২৪৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাকি ১২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা বাংলাদেশের জনগণের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চলমান রেলপথ দ্রুত সময়ের মধ্যে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে না পারলে চলমান ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণেও পরিবর্তন আনতে হবে। ফলে পুরো রেল লাইনেই নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর