তালিবানের বিজয়ে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে ভারতের হিন্দুরা; বেড়েছে মুসলিম বিদ্বেষ

0
1388
তালিবানের বিজয়ে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে ভারতের হিন্দুরা; বেড়েছে মুসলিম বিদ্বেষ

আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী আমেরিকার পরাজয় এবং তালেবানের বিজয়ে ভারতের মুসলিমদের উপর কট্টরপন্থী হিন্দুদের বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করেছে।হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের উপর যুগ যুগ ধরে চলমান নির্যাতনের আরেকটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে তালিবানের বিজয়কে।

মুসলিম রাজনীতিবিদ, লেখক, সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট এবং সাধারণ মুসলিমরা হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

তালেবান মুজাহিদীনের দ্বারা সন্ত্রাসী আমেরিকার পরাজয় এবং তার পুতুল সরকারকে উৎখাত করার সাথে সাথে #Go To Afganistan বা আফগানিস্তানে চলে যাও হ্যাশট্যাগটি ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যপকভাবে প্রচার হতে থাকে। এতোদিন GoToPakistan স্লোগান দিয়ে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। এভাবে তারা ভারতকে একটি জাতিগত হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ১৫ জন মুসলিমকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানকে সমর্থন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

হুসাইন হায়দরি নামের এক লোক আল-জাজিরাকে বলেন, যেসব মুসলিম হিন্দুদের বিদ্বেষপরায়ণতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বা মুসলিমদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় তাদের বিরুদ্ধে তালেবানদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে।

উত্তর প্রদেশের রাজনীতিবিদ শফিকুর রহমান বারক, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের সংগ্রামের সাথে তুলনা করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আনা হয়।

এদিকে উত্তর প্রদেশের কুখ্যাত মুসলিমবিদ্বেষী যোগী আদিত্যনাথ উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠের শহর দেওবন্দে মুসলিমদের দমনের উদ্দেশ্যে একটি তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেয়।

তথাকথিত এই সন্ত্রাস-বিরোধী কেন্দ্রের বিষয়ে মন্তব্য করে, রাজ্যের মুখপাত্র শালভ মণি ত্রিপাঠি টুইটারে বলেছে, তালেবানের ‘বর্বরতার’ মধ্যে, ইউপির খবরও শুনুন। যোগী দেওবন্দে সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ডো সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।

শফিকুর রহমান বারকে বলেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার মুসলিম বিরোধী নীতি তৈরিতে ব্যস্ত। দেওবন্দকে একটি সন্ত্রাসের কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং সেখানে “ঘৃণার রাজনীতি” করার আরও একটি মাধ্যম হিসেবে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করে।”

তিনি আরও বলেন, ‘দেওবন্দকে এমনভাবে চিহ্নিত করার কারণ কী? এটি একটি ইসলামী কেন্দ্র যেখানে আলিমরা পড়াশোনা করেন, সেখানে কী দোষ হয়েছে?
এটি একটি ঘৃণার নীতি। তারা মনে করে যে এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনে জিতবে।’

ভারতে মুসলমানদের উপর হামলা, তাদের ব্যবসাকে টার্গেট করা এখন মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত বছর, কথিত করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, ভারতে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাবলিগ জামাতকে দায়ী করা হয়েছিল।

প্রায় প্রতিদিনই তুচ্ছ অজুহাতে মুসলিমদের উপর আক্রমণ, কটুক্তি, এবং বিভিন্ন অন্যায় বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিচ্ছে সেখানকার বর্বর মুশরিক হিন্দুত্ববাদীরা।

কয়েকদিন আগে ইন্দোরের গোবিন্দ নগরে। মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে মারধরের একটা ঘটনা ভাইরাল হয়েছে টুইটার ফেসবুক সহ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। যাতে দেখা যাচ্ছে উত্তেজিত হিন্দু জনতা কার্যত ঘিরে ধরে ওই যুবকের পরিচয় জানতে চাইছে। পরিচয় জানার পরেই শুরু হয় মারধর। চলে কিল, চড়, ঘুঁষি। এমনকী মাটিতে ফেলে লাথিও মারা হতে থাকে তাকে। পাশাপাশি এও হুমকি দেওয়া হয় আগামীতে আর কোনও হিন্দু এলাকায় যদি সে চুড়ি বিক্রির জন্য যায় তাহলে তার খেসারত আবার তাকে দিতে হবে।

হাতিয়ে নেওয়া হয় যাবতীয় সামগ্রী, টাকাও। ওই যুবকে মারতে মারতেই একজনকে বলতে শোনা যায়, “আমাদের মা-বোনেরা আফগানিস্তানে এত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মুসলমানরা এখানে চুড়ি বিক্রি করছে?” সেই সময়েই অন্য একজন বাকিদেরকেও ওই মুসলিম যুবককে মারতে এগিয়ে আসতে বলে। চলতে থাকে হুমকি। এদিকে উত্তেজিত জনতার মুখে পরে কার্যত হাতজোড় করে বারবার প্রাণ ভিক্ষা করতে দেখা যায় ওই চুড়ি বিক্রেতাকে। কিন্তু তারপরেও থামেনি মার।

সূত্র : আল-জাজিরা

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমকামিদের হত্যাকারী উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ফাঁসির রায় দিয়েছে কুফরি আদালত
পরবর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট | নানগারহার প্রদেশের নিরাপত্তায় নিয়োজিত “ভিক্টোরি ফোর্স”