পশ্চিমা বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে গত ১৫ আগস্ট একপ্রকার বিনা বাধায় কাবুলের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেন তালেবান। তাদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালালে পতন ঘটে পশ্চিমাসমর্থিত সরকারের। এর প্রায় তিন সপ্তাহ পর কাবুলে নতুন সরকার ঘোষণা করে তালেবান। তবে এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তারা। অবশেষে সেই অপেক্ষা হয়তো শেষ হতে চলেছে। ভারত শিগগির তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে জানিয়েছে কলকাতাভিত্তিক দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে ভারতীয় পত্রিকাটি জানিয়েছে, আফগানিস্তান ইস্যুতে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভারত আফগানিস্তানে সদ্য গঠিত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে কি না, সেই প্রশ্নই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভারতের কূটনৈতিক মহলের দাবি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহেই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পারে নয়াদিল্লি।
সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর তাজিকিস্তানে বসছে সাংহাই করপোরেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) পরবর্তী বৈঠক। এতে যোগ দেবেন ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানসহ এসসিওভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ভার্চুয়ালি তাতে অংশ নিতে পারেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি। সেখান থেকেই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতির বিষয়ে সবুজ সংকেত আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে পত্রিকাটির দাবি, মূলত গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়। গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) অন্য এক বৈঠকে এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ারও সম্মতি আদায় করেছে দিল্লি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া উভয়ই মনে করে, আফগানিস্তানে ‘ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সরকার’ গঠন করছে তালেবান।
আফগান ইস্যুতে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানের বিষয়ে একই কথা জানিয়েছে প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তাদের এক প্রতিবেদনের শিরোনামেই বলা হয়েছে, ‘ভারত স্বীকার করেছে: ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অবস্থানে তালেবান’।
ওই প্রতিবেদনের মূল অংশে বলা হয়েছে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে, ‘আফগানিস্তানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অবস্থান’ গ্রহণ করেছে তালেবান। এই মন্তব্য কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে একটি পদক্ষেপ, শুধু তালেবান প্রশাসনকে আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াই বাকি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে, তালেবানের মন্ত্রিসভা ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে ‘অনেক বিতর্ক ও আলোচনার’ পর রোববারের বক্তব্যটি এসেছে। ওই দিন ২+২ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা।
সংবাদ প্রতিদিনের সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের আঁচ থেকে কাশ্মীর বাঁচাতে চায় নয়াদিল্লি। এ ইস্যুতে ভারতের পাশে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কারণ, তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করেছে ক্যানবেরাও।