হিন্দুত্ববাদীদের আসন্ন গণহত্যার সম্মুখীন ভারতীয় মুসলিমরা: শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞদের মতামত

মাহমুদ উল্লাহ

0
939
হিন্দুত্ববাদীদের আসন্ন গণহত্যার সম্মুখীন ভারতীয় মুসলিমরা: শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞদের মতামত

ভারতে মুসলিমদের আসন্ন ভবিষ্যত এক ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। মুসলিম রক্তখেকু হিন্দুত্ববাদীদের হিংস্রতা এখন বহু গুণে বেড়ে গেছে। রক্ত পিপাসু হিন্দুত্ববাদীরা যেকোন সময় মেতে উঠতে পারে মুসলিম গণহত্যায়। এনিয়ে বহুদিন ধরেই ইসলামিক বিশ্লেষকগণ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এবার বিশ্বব্যাপী গণহত্যা বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার রক্ষাকর্মী, এবং সাংবাদিকরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু আধিপত্যবাদী সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত শক্তিশালী হিন্দুত্ববাদীদের গণহত্যার আহ্বানের পরে ভারতের ২০ কোটি মুসলিমরা একটি ভয়ানক এবং অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।
“ইন্ডিয়া অন দ্য ব্রিঙ্ক: প্রিভেনটিং জেনোসাইড” নামে তিনদিনের ভার্চুয়াল কনফারেন্সের প্রথম দিনে তারা কথা বলছিলেন।

হেগের ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিজের অধ্যাপক জ্যান ব্রেম্যান বলেছেন, “ভারত হিন্দুত্ববাদীদের একপাক্ষিক শাসন ক্ষমতা চলছে। তারা মুসলিম জনগণের কথা চিন্তা করে না।”

প্রফেসর ব্রেম্যান, যিনি ভারতের গুজরাট রাজ্যে ব্যাপক মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন, তিনি বলেছেন ,হিন্দুত্বের মতবাদ – হিন্দু জাতীয়তাবাদের সিস্টেমটাই এমন যা – “মুসলমানদের সুরক্ষা এবং সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে।”

প্রফেসর ব্রেম্যানম আরো বলেছেন, যে হিন্দুত্ববাদ এবং সন্ত্রাসী অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি আমলের মধ্যে মিল রয়েছে: কারণ তাদের আইডিয়া ছিল “আধিপত্যের জন্য তারাই শ্রেষ্ঠ”, আর হিন্দুদের আইডিয়া”হিন্দুত্ব হল শ্রেণিবদ্ধ” এবং “শ্রেষ্ঠ। যা অন্যদের প্রতি নিকৃষ্টতার ধারণা তৈরি করে। এবং “যারা শত্রু হিসাবে বিবেচিত হয়” তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর, নির্বাসিত এবং নির্মূল করা শুরু করে।” যা ইতিমধ্যে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করছে।

“গুজরাট ২০০২: দ্য বিগিনিং অফ জেনোসাইড” শিরোনামের একটি প্যানেলে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রখ্যাত মানবাধিকার রক্ষক তিস্তা সেটালভাদ বলেন, “ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং ঘৃণামূলক অপরাধ গুজরাটে গণহত্যাকে সক্রিয় করেছে” ২০০২সালে, যেখানে ২,০০০ জনেরও বেশি মুসলিম নিহত হয়েছে। “তিন মাস ধরে, মুসলমানদের তাদের গ্রামে ফিরে যেতে দেওয়া হয়নি,” তিনি গুজরাটের কসাই মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে হিন্দুত্ববাদীদের পরিচালিত গণহত্যার সহিংসতার ঘটনার কথা স্মরণ করে দেন।

তিনি আরও যোগ করেছেন যে, তাদের পৃষ্টপোষকতায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উত্তর ভারতের শহর হরিদ্বারে হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করেছিল, যেখানে দুই মিলিয়ন মুসলমানকে হত্যা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেটালভাদ বলেছিলেন যে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ” মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।”

তিনি ফেব্রুয়ারী ২০০২ এ একটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তার অনুসন্ধানের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যেখানে প্রায় ৬০জন নিহত হয়েছিল, যা রাজ্য জুড়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ভিত্তিহীনভাবে মুসলিমদের দায়ী করা হয়েছিল।

গুজরাটের প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক, আরবি শ্রীকুমার, যিনি একজন হুইসেলব্লোয়ার হিসাবে ২০০২সালের সহিংসতায় মোদির ভূমিকা উন্মোচন করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)এগণহত্যা চালিয়েছিল।

তার এই স্বীকারোক্তির জন্য, শ্রীকুমারকে ক্রমাগত আঘাত করা হয় এবং নির্যাতিত করা হয়। এমনকি সত্য না বলার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। তিনি তার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বেশ কয়েকটি হলফনামাও জমা দিয়েছিল।

আরেকজন আলোচক, ডক্টর রাকেশ পাঠক, একজন পুরষ্কারপ্রাপ্ত হিন্দু সাংবাদিক, বলেছেন এমনকি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও “বিভাজনের ভাষা [বলে] হিন্দুরা বিপদে আছে” ব্যবহার করেননি। কিন্তু সন্ত্রাসী আরএসএসের উত্থানের সাথে সাথে “হিন্দু-মুসলিম বিভাজন তৈরিতে কাজ করছে। আরএসএস এবং এর নেতারা তাদের হিন্দু রাষ্ট্রের এজেন্ডা অর্জন করতে প্রস্তুত। মুসরিম গণহত্যা ঘটতে পারে না বলে মনে করা বিপদকে উপেক্ষা করা। কারণ কোনো গণহত্যা রাতারাতি সংঘটিত হয় না বরং তা পরিকল্পিত এবং ধীরে ধীরে সংঘটিত হয়। যার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই প্রকাশ পাচ্ছে। মুসলিমদের “কি পরতে হবে এবং খাবে” বলাটা ছিল আমাদের কথিত গণতান্ত্রিক দেশের হিন্দুত্ববাদের অন্যতম লক্ষণ।

তথ্যসূত্র:
—–
1।Muslims in India face imminent threat of genocide: Experts at global summit on genocide
https://tinyurl.com/3skw33ju

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিজাব পরে ডিউটিতে আসায় মুসলিম স্বাস্থ্যকর্মীকে হেনস্থা
পরবর্তী নিবন্ধশামে মুজাহিদদের পরিচালিত হামলায় ২৪ রাশিয়ান সেনা হতাহত