ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা বানোয়াট তথ্যচিত্র দিয়ে মুসলিম গণহত্যার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রতক্ষ মদদে ইতিহাস বিকৃত করে বানানো হয়েছে কাশ্মীর ফাইলস নামে একটি ছবি।
“দ্য কাশ্মীর ফাইলস” বিকৃত ইতিহাসভিত্তিক অনুমান নির্ভর একটি সিনেমা। ছবির পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী সন্ত্রাসী আরএসএসের নিজস্ব লোক। অনুপম খের ও মিঠুনও বিজেপির ঘরের লোক। এই ছবি নিয়ে হিন্দুত্ববাদী মোদী বেজায় উৎসাহী। বিজেপি শাসিত বহু রাজ্যে ছবিটি শুল্কমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপকহারে প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগানো হচ্ছে বিজেপি’র ইসলামবিদ্বেষী এজেন্ডা বাস্তবায়নে। এর উদ্দেশ্য একটা মুসলিম বিরোধী ন্যারেটিভ কাজে লাগানো।
এ সিনেমায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর অত্যাচারের গাল গল্প সাজানো হয়েছে। এবং যা হয়েছে তার কারণও তুলে ধরা হয়নি। এছাড়া কাশ্মীরি মুসলিম জনতার উপর হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী চেপে গেছে ছবির পরিচালক। শুধু দেখানো হয়েছে মুসলিমরা কাশ্মীরী পন্ডিতদের কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য করেছে। এছাড়াও এমন কিছু দৃশ্য রয়েছে যার মাধ্যমে হিন্দুদের সস্তা আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া যায়। হয়েছেও তাই। বেশ কয়েকটি সিনেমা হলে, সিনেমা চলাকালীন মুসলিম বিদ্বেষী হিংসাত্মক স্লোগান উঠেছে।
সিনেমাটি দেখার সময় হিন্দুত্ববাদীদের দেওয়া কিছু মুৃসলিম বিদ্বেষী আচরণের বহিঃপ্রকাশ ছিল এমন :
– মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করার শ্লোগান উঠেছে।
– মুসলিম মেয়েদের বিয়ে করে তাদের গর্ভ থেকে হিন্দু বাচ্চা পয়দা করার আওয়াজ তোলা হয়।
– মুসলিমদের গুলি করে হত্যা করার গর্জন শোনা যায়।
– মুসলিমদের থেকে সতর্ক থাকার জন্য হিন্দুদের সাবধান করা হয়।
– মুসলিমদের উপর নিধনযজ্ঞ চালানোর জন্য হিন্দুদের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দিতে রাষ্ট্রকে আবেদন জানানো হয়।
– শাহরুখ-আমীর-সালমান মুর্দাবাদ সহ তাদের সিনেমা বয়কটের ডাক দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন যে, হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় মদদে প্রোমোটেড সিনেমাটির আসল উদ্দেশ্য যে মুসলিম গণহত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করা, তা উপলব্ধির জন্য রকেট সায়েন্স জানার প্রয়োজন নেই। এরা জানে সাধারণ মানুষ তেমন একটা লেখাপড়া করে না। ফলে বানোয়াট নিবন্ধ লিখে সেই প্রচারটা হবে না, যেটা একটা সিনেমাতে সম্ভব। তাই ট্যাঁরা এমনটি করেছে।
হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নামক এই মুসলিম বিদ্বেষমূলক ছবিটির সাফল্য কামনা করেছে। মুভিটিতে যে ৬৫০ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান কোথা থেকে এল- তার কোনও স্পষ্ট জবাব কেউই দিতে পারেনি। হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দেখানো হয়েছে কাশ্মীরের আসল ভূমিপুত্র হিসেবে, আর কাশ্মীরি মুসলিমরা হচ্ছেন বহিরাগত – এই ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
কাশ্মীরে এখনও হাজার হাজার মুসলিম যুবক নিরুদ্দেশ রয়েছে। তাদের মা, বোন ও স্ত্রীরা জানতে চান, তাদের সন্তান বা স্বামী বেঁচে আছে না নিহত হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন বা মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই প্রশ্নে বার বার কাশ্মীর প্রশাসন ও ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে, সঠিক জবাব তুলে ধরতে। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে নিরুত্তর।
কাশ্মীরে যে এক লক্ষেরও বেশি তরুণকে হিন্দুত্ববাদী বাহিনী খুন করেছে। তাদের পরিবারের জন্য কারও কোনও সহানুভূতি নেই। তাদের নিয়ে ছবি বানানো হলে নির্ঘাত দেশদ্রোহী মামলা দায়ের হবে। এমনিতেই কাশ্মীরি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইউপিপিএ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে মুভি বানালে তার ফলে যে কি হবে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়া কথা নয়।
ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সিনেমাহলের ভিতরে এবং বাইরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করার অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে।
বিশ্লেষকগণ বলছেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দুত্ববাদীরা গণহত্যা চালিয়েছে। কাশ্মীরেও কয়েক যুগ ধরে হিন্দুত্ববাদী বাহিনী হত্যাজ্ঞ চালিয়ে আসছে। হতাহত মুসলিমদের নিয়ে তো কেউ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সিনেমা বানায়নি। কারণ একটাই তারা মুসলিম। তাদের কথা মুখে আনাও মোদির দেশে অপরাধ।
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
——–
1. Genocidal slogans raised at Kashmir Files screening
https://tinyurl.com/2p8m6es8
Allah amader hefajot koro.