২০০২ সালের রক্তাক্ত গুজরাট। ৩ মার্চ হিন্দুত্ববাদীদের পৈশাচিক হামলা থেকে বাঁচতে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন মুসলিম যুবতী বিলকিস বানু। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ট্রাকের মধ্যে হামলা করে সেখানেই তার পরিবারের ১৪ জন সদস্যের সাথে সাথে তার উপরও চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন।
১৯ বছর বয়সী বিলকিস বানু সে সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সশস্ত্র হিন্দু জনতা ট্রাকে হামলা চালিয়ে তাকে গণধর্ষণ করে। রক্ত পিপাসু হিন্দুরা তার মা এবং চাচাতো ভাইসহ তার পরিবারের ১৪ জন মুসলিম সদস্যকে তার চোখের সামনে খুন করে। উগ্র হিন্দুদের জিঘাংসা থেকে রেহায় পায়নি বিলকিস বানুর ২ বছরের ময়েটিও; তাকেও খুন করে হিন্দুরা।
গণধর্ষণের পর হিন্দুত্ববাদীরা বিলকিস বানুকে মৃত ভেবে ফেলে যায়। নিজ সন্তান আর পরিবার হারানোর বেদনাকে সাথে নিয়ে তাই এখনো বেঁচে আছেন বিলকিস।
পরে বিলকিস বানু স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দেয় উগ্রবাদী হিন্দুরা। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। এতে বিলকিস বানু এবং তার পরিবারেব বাকী সদস্যদেরও হত্যার হুমকি দিতে থাকে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা। অনেক হয়রানির পর সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্রে নিয়ে যায়।
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে মুম্বাই-এর একটি আদালত গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১৯ আসামির মধ্যে মাত্র ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়নি কাউকেই। হিন্দুত্ববাদের পৃষ্ঠপোষক ঐ বিচারকেরা হয়তো চাইছিলেন সমালোচনা থেকে বাঁচতে কোনরকম একটা রায় দিয়ে দেওয়া। তখন এভাবে চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা হয়, যেন পরবর্তীতে উপজুক্ত সময়ে আবার তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া যায়।
আর ঘটেছেও ঠিক এমনটাই। বিলকিস বানু গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ঐ এগার হিন্দু সন্ত্রাসীকে গত ১৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে মুক্তি দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী গুজরাট সরকার। পরে গোধরা সাব-জেল থেকে তাদের মুক্ত করে দেওয়া হয়।
মুসলিম নারীকে ধর্ষণ করার কারণে আসামীদেরকে হিন্দুত্ববাদীরা ফুলের মালা দিয়ে বীরের মতো বরণ করে নিয়েছে। এবং মিষ্টি বিতরণ করেছে। এমন জঘন্য আসামীদের মুক্তির অনুমতি দেওয়ার পরেও মিডিয়াতে কোন সমালোচনা নেই; দালাল বুদ্ধিজীবীরাও মুখ খুলছে না। কোন কথিত নারীবাদীও এ নিয়ে প্রতিবাদ করেনি।
অথচ মুসলিম নারীদের পর্দা, হিজাব আর বোরকা নিয়ে কথা বলতে এই কথিত প্রগতিশীল আর মানবতাবাদীরা একটুও দ্বিধা করে না। তারা মুসলিম নারীদের অধিকারের ব্যাপারে কখনো কথা বলেনি, বলবেও না।
হিন্দুত্ববাদীরা এবং তাদের দোসরেরা কখনোই মুসলিমদের উপর হামলা-হত্যা কিংবা মুসলিম নারীদের অপহরণ বা গণধর্ষণের মতো ঘটনার বিচার করেনি বা করবে না- এটা স্পষ্ট। কাশ্মীরে ৮ বছরের শিশু আসিফাকে যখন বাবা-ছেলে আর মন্দিরের পুরহিত মিলে কয়েকদিন পর্যন্ত পালাক্রমে ধর্ষণ করে হত্যা করেছিল, তারও কোন বিচার সঠিক বিচার করা হয়নি। আর বাংলাদেশেও দালাল হাসিনা সরকারের অধীনে হিন্দুত্ববাদীরা ও তাদের দোসর জাতির গাদ্দারেরা প্রশাসন থেক শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত যেভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, তাতে ভারতের মানচিত্রে বাংলাদেশের বিলিন হয়ে যাওয়াকে এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। বাংলাদেশ-ভারত–পাকিস্তান মিলিয়ে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র ও সংবিধান প্রকাশের পরেও, আরএসএস নেতা মোহন ভগবত অখণ্ড ভারত গঠনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার পরেও নির্লজ্জ মিডিয়া যেভাবে নির্লিপ্ত থেকেছে, তাতে সেই সম্ভাবনাকে জোরালোই মনে হচ্ছে।
উপমহাদেশের মুসলিমদেরকে তাই নিজেদের নারী-কন্যা-শিশুদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের লক্ষে নববী মানহাজ অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন ইসলামি চিন্তাবিদগণ। কারণ, হিন্দুত্ববাদীদের সাথে মুসলিমদের সংঘাত এখন অনিবার্য বলে মনে করেন তাঁরা।
তথ্যসূত্র:
——–
1. NewsClick : Bilkis Bano Case: 11 Convicts set Free by Gujarat Government Under its Remission Policy
– https://tinyurl.com/2p84kp5u