শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতকে অনুরোধ : মোমেনের বক্তব্যের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ

2
2333

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন রাজনীতির বাইরে থেকে এসে মন্ত্রী হয়েছেন বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মতো। বড় ভাই-এর মতো তিনিও মাঝে মাঝে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের চাপে দিশেহারা হয়ে গোপন কিছু সত্য ভুলবশত ফাঁস করে দেন। চট্টগ্রামে হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানেও এমনটি করেছেন মোমেন সাহেব। তার মুখ থেকে সেই কথাই বেড়িয়ে এলো, এতদিন ধরে যা আওয়ামীলীগ বাস্তবে করে আসছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সেই অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, তিনি নাকি কিছুদিন আগে ভারত সফরে গিয়ে ভারত সরকারকে অনুরধ করে এসেছেন- তারা যেন শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তার ভাষায়, “আমি ভারতে গিয়ে যেটি বলেছি, যে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আজকে অনেকের বক্তব্যেও সেটাই এসেছে; যে শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। আর তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে। আমাদের দেশ সত্যিকার অর্থে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে যা যা করার, আমি ভারতবর্ষ সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।”

এতদিন ধরে নানান কাজে-কর্মে দালাল হাসিনা সরকার ভারত-তোষণের নীতি বাস্তবায়ন করে গেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতকে সব ‘উজার’ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও এদেশের মুসলিমদের স্বার্থের কোন তোয়াক্কা করেনি তারা। একথা এতদিন মুখে স্বীকার না করলেও, এবার ভুল করে সরাসরি হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিলেন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল পদে থাকা আব্দুল মোমেন। যদিও তার এভাবে প্রকাশ্যে বলার উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বিমত আছে, অনেকেই এটাকে হাসিনার অনুমতিতেই করা হয়েছে বলে মনে করছেন, তবে এই মুহূর্তে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হাসিনা সরকার যে ভারতকে যেকোন মূল্যে পাশে চাইছে- এব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই।

যাইহোক, আমরা মোমেন সাহেবের বক্তব্যে ফিরে যাই।

মোমেন সাহেব আরও বলেছেন, “এই কিছুদিন আগে একজন ভদ্রমহিলা কি কথা বলেছিলেন (সম্ভবত নুপুর শর্মা), আমরা একটা কথাও বলিনাই সরকার থেকে। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে। We did not utter a singla word. (আমরা একটা শব্দও উচ্চারন করিনি)। আমরা বলেছি, ‘এই ধরণের প্রটেকশনও আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি।’ কারণ সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য না, আমাদের মঙ্গলের জন্য।”

“কারণ আমরা যদি একটু বলি, তখন আমাদের এই উগ্রবাদীরা আরো আরো সোচ্চার হয়ে অনেক বেশি বেশি বলবে। তাতে ক্ষতিটা হবে কি, আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। আমাদের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।  সেইজন্যে, আমি ভারতবর্ষকে বলেছি, যে আমরা এমনভাবে কাজ করবো, যাতে আমাদের কোন কারণে কোন উস্কানিমূলক ব্যবহারকে আমরা কখনো প্রশ্রয় দিব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্য মঙ্গল হবে।”

লক্ষ্য করুণ, এখানে হসিনা সরকারের জঙ্গী-মৌলবাদী ট্রাম্পকার্ড ব্যবহারের বিষয়টি উঠে এসেছে। ভারতকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এদেশে ইসলামি শক্তির উত্থান যেকোন উপায়ে ঠেকিয়ে রাখবে। দরকার হলে শাপলা চত্বর আর মোদী ঠেকাও আন্দোলনের মতো কিংবা ভোলা আর নাসিরনগরের মতো মুসলিমদের বুকে গুলি চালাবে, জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নিরীহ মুসলিমদের বোমা মেরে উড়িয়ে দিবে; তবু ভারত আর হিন্দুদের স্বার্থবিরোধী কোন কথা তারা বলে না, বলতে দিবে না।

তারা এমনকি নবী অবমাননার মতো বিষয়ে হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে বার বার আইডি হ্যাকের গল্প শুনিয়ে উগ্র হিন্দুদের দুঃসাহস বাড়িয়ে দেয়। এমনকি নুপুর শর্মার ঘটনায় যখন আরবের গাদ্দার শাসকেরা পর্যন্ত মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে, তখনো নির্লজ্জ হাসিনা সরকার তাদের প্রভু ভারতের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি পর্যন্ত করেনি। কিন্তু কাশ্মীর-দিল্লী-আসামে মুসলিম নির্যাতন নিয়ে কিংবা ভারতের মুসলিম গণহত্যার প্রস্তুতি নিয়ে কথা বললে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। মোমেন তাই বলেছে, “এই ধরণের প্রটেকশনও আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি।”

আরও লক্ষ্য করুণ, তারা কিভাবে দুনিয়াবি সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে মুসলিমদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। নিজেদের আখিরাতের সাথে সাথে এই অঞ্চলের মুসলিমদের ভবিষ্যৎও তারা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের কাছে কিভাবে সুস্থ সমাজ নির্মাণের কিংবা মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার আশা করা যায়!

তার বক্তব্যের আরেক অংশে সে এটা স্পষ্ট করেছে – “আমাদের প্রতিবেশীতেও কিছু মসজিদ পুড়েছে, আমরা সেইটা কোনভাবে প্রচার করতে দেই নাই। এর কারণটা হচ্ছে, এটা হলে পরে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু জঙ্গি লোক আছে, এই বাহানায় অনেক কাজ করবে।
সেইখানে, We must keep it under control. কারণ, আমরা শেখ হাসিনা সরকারকে টলটলায়মান চাই না।”

বাকস্বাধীনতা, মিডিয়ার স্বাধীনতা এসব যে শুধুই সিস্টেমের বেঁধে দেওয়া সীমানা পর্যন্তই চর্চা করা যায়, এর বেশি না- সেকথাও আমরা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি। এগুলো যে শুধুই মুখের শ্লোগানমাত্র, যা কেবলই ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার অনুমতি আছে, সেটা মোমেনের বক্তব্যে আবারো স্পষ্ট হলো।


মোমেন সাহেবের বক্তব্যের আরেকটা অংশ খেয়াল করুণ।

তিনি বলেছেন, “আমি বলেছি, শেখ হাসিনা আছেন বলে, ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে। এই বর্ডারে এক্সট্রা খরচ করতে হয় না। আর আমাদের উন্নতি হচ্ছে বলে ভারতে লোক যায়। ২৮ লক্ষ লোক ভারতে বেড়াতে গেসে। প্রায় কয়েক লক্ষ ভারতীয়রা আমাদের দেশে কাজ করে।  এটি সম্ভব হয়েছে, আমাদের এই সোনালি অধ্যায় হওয়ায়; এই সুন্দর আমাদের অবস্থান হওয়ায়। সুতরাং আমরা উভয়ে এমনভাবে কাজ করবো, কোন ধরণের উস্কানিমূলক কাজ আমরা যাতে (না করি)…”

এই অংশে এটা স্পষ্ট যে, এখন তারা এতদিন ধরে হিন্দুত্ববাদী ভারতকে করে যাওয়া তাদের খেদমতের কথা উল্লেখ করছে। আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারত সরকারকে তারা সরাসরি সাহায্য করতে বলছে।

এখানে একটু ভিন্নদিকে পাঠকের দৃষ্টিপাত করতে চাই।
কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক পাড়ায় একটা গুঞ্জন চলছে যে, নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এবং পকেট ভারি করার জন্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনা বিনিয়োগ ও অর্থের দিকে ঝুঁকছে। চীনও এই সুযোগে বাংলাদেশকে ব্যাবহার করে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় তার স্বার্থ বাগিয়ে নেওয়ার প্রয়াশ চালাচ্ছে। এসব কারণে খবর রটেছিল যে, হাসিনা সরকারের প্রতি ভারত নাকি কিছুটা নাখোশ। আবার ভারতের এদেশীয় ফুটসোলজার ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’ কুমিল্লার ঘটনায় মোমেন সাহেবের কিছু বক্তব্যের প্রতিবাদে মিছিলও করেছিল।

এদিকে আবার গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই খবর রটেছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে ভারত সরকারের প্রতি নমনীয় হচ্ছে। ভারত সরকারও নাকি বিএনপি’র সাথে নানান দর-কষাকষি ও আলোচনা করেছে এবং করছে। আওয়ামী-ভারত সম্পর্কে কিছু টানাপড়েনের খবর চাউর হওয়ার পাশাপাশি, বিএনপি-ভারত সম্পর্ক ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে থাকার গুঞ্জনও কিন্তু আবারও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর এই কারণেই হয়তো বিএনপি মোমেন সাহেবের এমন খোলামেলা বক্তব্যের পর সেই সুযোগ কাজে লাগানোর তেমন জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে না। আবার নুপুর শর্মার এমন ঘৃণ্য বক্তব্যের পরেও বিএনপি তেমন কড়া কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আর এমন কিছুর সম্ভাবনা ঠেকাতেই কি হিন্দুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে মোমেন সাহেবের এমন বক্তব্য ও সাফাই গাওয়া কি না- সেই হিসাব বা দুইয়ে দুইয়ে চার আপনি মিলাতেই পারেন।

তবে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- আওয়ামীলীগ, বিএনপি-জামাত, কমিউনিস্ট বা জাতীয় পার্টি – সবাই এই পচে যাওয়া এলিট-গণতান্ত্রিক সিস্টেমেরই অংশ। যে সিস্টেম তৈরিই হয়েছে সাধারণ জনগণকে শোষণ করে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য, সেই সিস্টেমের কোন পক্ষ থেকেই আপনি ইনসাফ আর ন্যায়ভিত্তিক সমাজের আশা করতে পারেন না। এই সত্য অতীতেও প্রমাণিত হয়েছে, প্রয়োজন শুধু আমাদের অনুধাবন করা।

আমরা আবার মোমেন সাহেবের বক্তব্যে ফিরে আসি।

মোমেন সাহেব কুমিল্লায় মূর্তির পায়ে কুরআন রাখার ঘটনার সময় সরকার ও তার কিছু বক্তব্য এবং সেটা নিয়ে তাদের মালিকপক্ষের ‘আপনজন’দের অভিমান করার বিষয়ে নিজেদের সাফাই গেয়েছেন।

কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে তার বক্তব্য ছিল এমন-
“আমি বলেছি যে, এক জিনিস নিয়ে আমার উপরে বক্তব্য রেখেছেন, সেটিও তার এক বছর আগে।  এক বছর আগে, পূজার সময়, কুমিল্লায়, একটি দেবতাকে- পুকুরের পারে ছিল, ওখানে একটা কুরআন শরীফকে রাখে। তারপরে সেটা রেখে একটা ছবি তুলে, ঐটা ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পরে কিছু মোল্লাগোষ্ঠী ওখানে আক্রমন করে। আক্রমন থামাতে গিয়ে আমাদের পুলিশ গুলি করে। এবং তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, তখনো কিন্তু আমরা ঐ কুরিগ্রামের কাহিনী জানিনা; তখন আমার মন্ত্রণালয় যে জিনিসটা বলেছে, সত্যি কথা বলেছে; আমি শিক্ষক লোক, আমরা সত্য কথা বলি। শ্রীকৃষ্ণ সত্য কথাই বলতেন।
আমি বলেছি তখন, ৬ জন লোক সর্বমোট মারা যায়। এর মধ্যে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ৪ জন মুসলমান, ২ জন হিন্দু। তবে আমরা একটা লোক মারা জাক সেটা চাইনা। কিন্তু উস্কানি দিলে পরে আরও দেখায়। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারনায় বের হল, যে কয়েকশত নারী নির্যাতিত হয়েছে, রেইপড হয়েছে। জাস্ট চিন্তা করেন; একটাও নারী কিন্তু তখন রেইপড হয়নাই। আপনারা ঘুণাক্ষরেও বলতে পারেন, বুকে হাত দিয়ে, যে কুমিল্লার সময় কেউ নারী নির্যাতিত বা রেইপড হয়েছে? নো। সেইটাই আমরা বলেছি। সত্য কথা বলেছি।”

“এইটা নিয়ে একবছর পরে, এইটাকে আবার রঙ্গায়ে-ঠঙ্গায়ে…
হ্যাঁ, এরপরে, কুমিল্লার ঘটনার পরে, নর্থবেঙ্গলে দুর্ঘটনা হয়। ১৭ না ১৮ টা বাড়ি জমি দখল করার জন্যে বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু পরে সরকার সবগুলা মেরামত করে দিয়েছে। ওদেরকে কিছু কম্পেনসেশনও দিয়েছে।”
“আমরা এমন কাজ করবো না, এমনভাবে উস্কানিমূলক জিনিস ছোট্টটারে ফুলায়ে ফালায়ে এমনভাবে করবো না, যাতে উশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রতিবেশীতেও কিছু মসজিদ পুড়েছে, আমরা সেইটা কোনভাবে প্রচার করতে দেইনাই। এর কারণটা হচ্ছে, এটা হলে পরে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু জঙ্গি লোক আছে, এই বাহানায় অনেক কাজ করবে। সেইখানে, We must keep it under control. কারণ, আমরা শেখ হাসিনা সরকারকে টলটলায়মান চাই না।”

একটা সরকার ও সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মানসিকতা কতটা নিচু ও নতজানু হতে পারে! মোমেন সাহেবরা ভারতকে তাদের ক্ষমতার রক্ষাকর্তা বানিয়েছেন। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। ইসলাম ও মুসলিমের শত্রুদের কাছে দাসত্বের দস্তখত দিচ্ছেন। তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন, যে আমরা তোমাদেরই অনুগত, আরেকবার ক্ষমতায় এলে আমরা তোমাদের স্বার্থই রক্ষা করবো, আমাদেরকে বিশ্বাস করে আরেকবার ক্ষমতায় বসিয়ে দাওনা তোমরা!

আল্লাহ তাআলা কুরআনে যাদেরকে ইসলাম ও মুসলিমের সবচেয়ে জঘন্যতম শত্রু বলেছেন, তাদের কাছেই মাথা নত করছে এই ক্ষমতাপাগল শাসকেরা।  এখনো কি আপনি এটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন যে, ক্ষমতায় থাকার জন্য এরা প্রয়জনে হিন্দুত্ববাদীদেরকে এদেশে আগ্রাসন চালাতে অনুমতি দেবে কি না, আপনাকে-আমাকে নির্দ্বিধায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে তুলে দিবে কি না, আমাদেরকে হিন্দুত্ববাদীদের গোলামে পরিণত করবে কি না!

মোমেন সাহেবের বক্তব্যের শেষাংশটি দেখুন, যেটি আরো ভয়াবহ – “এটা মনে রাখতে হবে, আপনাদেরও স্মরন করা দরকার, যে শেখ হাসিনাকে যদি ঠেলায়ে-ধাক্কায়ে অস্থিতিশীলতার পাশে নিয়ে যায়, আপনার আমার  প্রত্যেকের জন্যে বিপদ। আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিপদ। সেই বিপদ যাতে না আসে, সেইজন্য আমরা স্থিতিশীলতা চাই। সেই কথাটাই আমি ভারত সরকারকে বলেছি, যে We need stability, political stability. এবং এইটা সম্ভব শেখ হাসিনাকে যদি আমরা সাপোর্ট দেই। আমার অনলি ইস্যু হচ্চে, যে We must protect sekh hasina, and the stability of bangladesh. অন্য ধরণের কোন কাজ করবো না, যেটার ফলে আমরা stability নষ্ট করবো।”

উপমহাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ আমদের সামনে স্পষ্ট করেছে যে- হিন্দুত্ববাদীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আচরণে মুসলিমদের দিন দিন আরও কোণঠাসা হওয়া, আর তাদের দেশি-বিদেশি দালালদের নির্লিপ্ততায় আমরা এক অনিবার্য সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছি। সেই সংঘাত আপনাকে-আমাকে অবশ্যই খুঁজে নিবে, আমরা এর থেকে পালাতে পারবো না। আর এই অনাগত বিপদকালে আমরা আমাদের নামধারী শাসক-প্রতিবেশী কাউকেই পাশে পাবোনা।

মনে রাখবেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম ভূখণ্ড, অন্য কোন মুসলিম দেশের সাথে যার কোন সীমান্ত বা স্থল-সংযোগ নেই। এর টিন দিক ঘিরে আছে আজন্ম শত্রু ভারত, আরেক দিকে রয়েছে আরেক শত্রু মিয়ানমার। এছাড়া পার্বত্য-চট্টগ্রাম ও পূর্ব-ভারতে খ্রিস্টবাদের অভ্যুত্থানও আমাদেরকে চূড়ান্তভাবে ভোগাবে, এটাও অজানা কোন বিষয় নয়। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে নিজেক তাই প্রশ্ন করতে হবে, হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন থেকে আমরা কি সত্যিই নিরাপদ থাকবো? কাশ্মীর কিংবা আসাম থেকে আমাদের পরিস্থিতি কি খুব ভিন্ন হবে? আমরা কি সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি?  আমাদের স্বাধিকারের লড়াই কি আমদেরকেই লড়তে হবে না? চারিদিকে শত্রু-বেষ্টিত আমাদের এই ভূখণ্ডের মুসলিমদের কি সত্যিই কোন সাহায্যকারী আছে?

এজন্য আগে-ভাগেই হিন্দুত্ববাদীদের দালালদের চিনে রাখতে হবে, তাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কোন ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না, আর তাদের কোন মিষ্টি কোথায় ভুলা যাবে না। অনাগত বিপদের সময়ে নিজেদের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে – এটা মাথায় রেখে প্রস্তুত থাকতে হবে। আর উম্মাহর কল্যাণকামী হক্কানী উলামায়ে কেরামের আহব্বানে সারা দিয়ে তাঁদের আশে-পাশে জড়ো হতে হবে।

আপনাদের আরেকটা বিষয় জানিয়ে দিচ্ছি। মোমেন সাহেব তার বক্তব্যের শেষাংশে – কে তাদের আপনজন – সেকথা আবারো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। বক্তব্যের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ‘আপনজন’দের প্রতি তাকে কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হতেও দেখা গেছে তখন। এই আমাদের ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আর এই আমাদের সরকার!



লেখক আব্দুল্লাহ বিন নজর

2 মন্তব্যসমূহ

Leave a Reply to M.najmul.islam প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবাধিকার সংস্থায় এবার তালা দিল সন্ত্রাসী ইসরাইল
পরবর্তী নিবন্ধরাবি হলে ছাত্রকে নির্যাতন, টাকা ছিনতায়ি এবং আবরার ফাহাদের পরিণতির হুমকি