হাজার বছর ধরে মুসলিম শাসনের অধীনে থাকা ভারত থেকে মুসলিমদের নিশানা মুছে দেয়ার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বারবার একটি সস্তা কৌশল অবলম্বন করে। প্রাচীন মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো ভাঙ্গার পটভূমি তৈরি করছে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা।
বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে এই একই কৌশলের পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মুঘল আমলে নির্মিত বাবরি মসজিদ এই কৌশলে ভেঙ্গে দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদীরা। কিছুদিন আগে উত্তর প্রদেশের জ্ঞানবাপি মসজিদের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এবারে টার্গেট করেছে কর্ণাটকের শ্রীরঙ্গপাটনা জামিয়া মসজিদকে।
কর্ণাটকের উগ্র হিন্দুপন্থী গোষ্ঠীগুলি কর্ণাটক হাইকোর্টে ১০৮টি পিটিশন দাখিল করবে যেন মান্ডিয়া জেলার শ্রীরঙ্গপাটনায় জামিয়া মসজিদের ভিতরে তাদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বজরং এর রাজ্য সভাপতি, বি মঞ্জুনাথ, গত ৩ নভেম্বর, বার্তা সংস্থা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছে, পিটিশনগুলি প্রস্তুত আছে। কিছু দিনের মধ্যে সেগুলো দায়ের করা হবে৷ ১০৮ কে হিন্দুদের জন্য একটি শুভ সংখ্যা দাবি করে এই উগ্র হিন্দু নেতা বলেছে, “এ কারণেই আমরা এতগুলো পিটিশন ফাইল করছি।”
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল সহ বেশ কয়েকটি উগ্র হিন্দুপন্থী দল দাবি করছে যে, মসজিদটি একটি হনুমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত হয়েছে। এ কারণে হিন্দুদের অধিকার রয়েছে সেখানে পূজা প্রার্থনা করার।
অথচ, ১৭৮২ সালের দিকে নির্মিত মসজিদটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (ASI) দ্বারা রক্ষিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ, জেলা কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকার অতীতে তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এদিকে মসজিদটির নিরাপত্তার জন্য মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে হিন্দুত্ববাদী সরকারের আবেদন জানানো হয়েছে। আর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রশাসন সব সময়ই হিন্দুদের পক্ষে রায় দেয়।
উগ্র হিন্দু মঞ্জুনাথের দাবি, “এটি একটি হিন্দু মন্দির। এটা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যে কেউ ফটো এবং প্রমাণগুলি দেখে একমত হবেন যে এটি একটি হিন্দু কাঠামো। আমরা এই সব আদালতে উপস্থাপন করব। তারা পুরো মন্দির ভেঙে দেয়নি। তারা শুধুমাত্র উপরের কাঠামো ভেঙ্গে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে। বাকি বিল্ডিং অক্ষত আছে।”
সে অভিযোগ করেছে, মুসলিমরা নাকি সেখানকার মন্দিরের সকল প্রমাণ নষ্ট করছে। তাই ঐ মসজিদ থেকে মুসলিমদের বের করে দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এই মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু নেতা।
গত কয়েক মাসে, বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন এই মসজিদের জরিপ চেয়ে জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তাদের দাবি সত্য প্রমাণিত হলে মন্দিরটি পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে উগ্র হিন্দুরা।
মঞ্জুনাথ আরো বলেছে, “আমরা নিশ্চিত যে, এখন না হলেও ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময় মন্দিরটি হিন্দুদের পূজার জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
মঞ্জুনাথের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, প্রমাণিত হোক বা হোক এই মসজিদ তারা এক সময় দখল করবেই।
নাপাক হিন্দুত্ববাদীরা উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোকে বিতর্কিত করে হিন্দুত্ববাদী আদালতে মামলা করছে। তারা জানে, আজ না হোক কাল হিন্দুত্ববাদী আদালত তাদের দাবির পক্ষেই রায় দিবে। যেমনটা হয়েছে বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীতের দৌরাত্ম্য এখনই রুখে না দিতে পারলে ভারতে মুসলিমদের গণহত্যা অনিবার্য। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সকল পর্যায়ে ভেদাভেদ ভুলে এক মুসলিম অপর মুসলিমের পাশে দাঁড়াতে হবে; হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। তবেই রচিত হবে গাজওয়াতুল হিন্দের মারহালা।
তথ্যসূত্র:
——
১। Hindu groups to move Karnataka high court for nod to pray at Jamia Masjid – https://tinyurl.com/yc278pt2