পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: দেশব্যাপী ব্যাপক হামলার সিদ্ধান্ত টিটিপির

7
3174

চলতি বছরের ১ মে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান প্রশাসন ও দেশটির ইসলামপ্রিয় প্রতিরোধ বাহিনী টিটিপির মাঝে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু পশ্চিমাদের ক্রীড়নক গাদ্দার পাকিস্তান প্রশাসন বারবার এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং সীমান্ত অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রাখে। টিটিপি থেকে বারবার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হলেও তা কর্ণপাত করেনি পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) কর্তৃপক্ষ নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

ফাইল ছবি: প্রতিরোধ বাহিনী টিটিপির শীর্ষস্থানীয় দুজন কর্মকর্তা

এবিষয়ে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুফতি মুজাহিম হাফিজাহুল্লাহ্ একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেন। যা গত ২৮ নভেম্বর রাতে টিটিপির একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার টুইটারে প্রকাশিত হয়। যা মূহুর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুফতী মুজাহিম (হাফি.) পাকিস্তানজুড়ে টিটিপির সামরিক বাহিনীকে “আদেশ” দিয়েছেন যে, তাঁরা যেনো পাকিস্তানি গাদ্দার বাহিনীর যেকোনো সামরিক অভিযানের জবাবে “দেশের যে কোনো জায়গায় হামলা চালান।”

নতুন এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয় যে, পাকিস্তান সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বারবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে আসছে, বিশেষ করে সম্প্রতি বান্নু প্রদেশের লাকি-মারওয়াতে হামলা বৃদ্ধি করেছে পাকিস্তান। যা স্পষ্টতই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কর্তৃক ধারাবাহিক চুক্তি লঙ্ঘন করার ফলেই নতুন করে দেশব্যাপী হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিটিপি।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এখন থেকে আমাদের প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুধু সীমান্ত অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা, বরং তা সমগ্র দেশে অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে।”

২০০৭ সালে পাকিস্তান গাদ্দার সামরিক বাহিনী কর্তৃক জামিয়া হাফসা ও লাল মসজিদ গণহত্যাকে কেন্দ্র করে গঠন হয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান। এর আগ পর্যন্ত এটি আফগান ইমারাতকে শক্তিশালী করতে শুধুমাত্র মার্কিন কনভয় ও লজিস্টিক সাপোর্টের কেন্দ্রগুলোতে হামলার মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রেখেছিল।

ফাইল ছবি: টিটিপির প্রাক্তন আমিরের ইমামতিতে নামজ পড়ছেন সিরাজুদ্দীন হাক্কানী

কিন্তু ২০০৭ সালের পর এই সীমাবদ্ধতা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। কেননা পাকিস্তান সামরিক বাহিনী দেশজুড়ে তখন হক্কানি আলেম ও মুজাহিদদের শহীদ এবং সীমান্ত অঞ্চলে আনসারের ভূমিকা পালনকারী বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতে শুরু করে। ফলে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বাধ্য হয়ে ক্রুসেডার মার্কিন বাহিনীর পাশাপাশি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর উপরও হামলা চালাতে শুরু করে।

এই অভিযানের মাধ্যমে টিটিপির মুজাহিদগণ ২০১৩ সালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন। এসময় দখলদার বিদেশি বাহিনীর পাশাপাশি মুজাহিদদের হামলায় কয়েক হাজার পাকিস্তানি গাদ্দার সৈন্য নিহত হয়। আর হামলার এই ধারাবাহিকতা ১৫ আগস্ট তালিবানদের কাবুল বিজয় এবং দ্বিতীয় বারের মতো আফগানিস্তানে ইমারাতে ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

ক্যাপশন: কাবুল বিজয়ের রাতে রাষ্ট্রিয় প্রাসাদে তালিবান

এরপর ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রশাসনের মধ্যস্থতায় দফায় দফায় আলোচনার টেবিলে বসে পাকিস্তান প্রশাসন ও প্রতিরোধ বাহিনী টিটিপি। যার ফলাফল সুরূপ চলতি বছরের মে মাসে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

কিন্তু এখানেও পাকিস্তান চুক্তি লঙ্ঘন করতে শুরু করে, ফলে টিটিপি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা, ডেরা ইসমাইল খান এবং ট্যাঙ্কে প্রতিরক্ষামূলক হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময়েও টিটিপি আলোচনা চালিয়ে যায় এবং যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার চেষ্টা করে।

সার্বিকভাবে টিটিপির এই হামলার ঘোষণা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

পাকিস্তানে বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ উত্তপ্ত। এরই মধ্যে পাকি সেনা-প্রশাসনের লাগাতার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সীমান্তে আফগান তালিবান প্রশাসনের সাথেও লাগাতার সংঘর্ষ হচ্ছে তাদের। আবার কাশ্মীরি প্রতিরোধ বাহিনীগুলোকে দমন করার ক্ষেত্রেও পাকি সেনা-প্রশাসন ভারত ও অ্যামেরিকার পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে।

গাদ্দার সেনা-অফিসার আর রাজনৈতিক নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে ইতিমধ্যে দেশটি দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে। এমন সময় তারা তাদের বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে ইসলামি বাহিনীগুলোকে লাগাতার উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এসব বেপরোয়া অপরাধের প্রেক্ষিতেই টিটিপি যুদ্ধবিরতি সমাপ্ত ঘোষণা করে সারা দেশে গাদ্দার বাহিনীগুলোর উপর হামলার ঘোষণা দিয়েছে।

বর্তমানে টিটিপি নিঃসন্দেহে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ঘোষণা-পরবর্তী টিটিপির কার্যক্রম তাই নিঃসন্দেহে অত্র এলাকায় মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধি করবে, ইনশাআল্লাহ্‌। আর পাকিস্তানে, বিশেষ করে গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে মুসলিমদের শক্তিবৃদ্ধি মানেই হলো- তা কাশ্মীরি মুসলিমদের মুক্তির পথকে ত্বরান্বিত করবে ইনশাআল্লাহ্‌।

তাছাড়া টিটিপির এই ঘোষণা হয়তো পাকি-তাগুদি শক্তিকে সরিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের সাথে মুসলিমদের সরাসরি সংঘর্ষের পথকে উন্মুক্ত করে দিতে ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করছি, তবে সেটা সময়েই স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ্‌।



 

লিখেছেন :  আলী হাসনাত

7 মন্তব্যসমূহ

  1. আল্লাহ মুজাহিদিনের শক্তি সামর্থ্যকে বৃদ্ধি করে দিন। কুফফার ও মুনাফিকদের কুটচাল এর উপর বিজয় দান করুন। হে রব, আমাদের সর্বাবস্থায় দ্বীনি মনোভাব লালন করার তাউফিক দান করুন। ও জিহাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার তাউফিক দান করুন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফের বাংলাদেশিকে খুন করলো বিএসএফ; বিজিবি ব্যস্ত বিএসএফের সাথে ভলিবল খেলায়
পরবর্তী নিবন্ধইয়েমেনে আল-কায়েদার হামলায় হতাহত দুই ডজনেরও বেশি মিলিশিয়া