পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। গত বছরের মে মাসে হারাকাতুশ শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। বৃদ্ধি করা হয় এই অঞ্চলের দখলদার দেশগুলোর সেনা সদস্য সংখ্যাও। এমন ঘোষণা ও সেনা বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই অঞ্চলে উল্টো একের পর এক লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে থাকে সোমালি সরকারি বাহিনী। এই সফলতা এখনো বজায় রেখেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন।
স্থানীয় সূত্রমতে, গত রমাদান মাসে সোমালিয়া জুড়ে অন্তত ৫৭টি অভিযান পরিচালনা করেছেন হারাকাতুশ শাবাব। এর প্রতিটি অভিযানেই পশ্চিমা সমর্থিত বাহিনী ও আফ্রিকান ইউনিয়নের অসংখ্য সেনা হতাহত হয়েছে।
সাতটি এলাকায় হারাকাতুশ শাবাব যোদ্ধাদের হাতে লজ্জাজনক পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে পালিয়েছে সরকারি সেনারা। মুজাহিদদের দ্বারা বিজিত হয়েছে ১৩টি সামরিক ঘাঁটি ও ৪টি শহর। আর এসব অভিযানে মোট কত পশ্চিমা সমর্থিত সেনা হতাহত হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি।
তবে হারাকাতুশ শাবাব সংশ্লিষ্ট মিডিয়া সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত রমাদানে মুজাহিদদের পরিচালিত মাত্র ৭টি অভিযানেই তুরষ্ক ও মার্কিন প্রশিক্ষিত স্পেশাল ফোর্সের সদস্যসহ অন্তত ২৬৭ সেনা সদস্য হতাহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ৩৮টি সাঁজোয়া যান ও অসংখ্য সামরিক সরঞ্জাম। আর মুজাহিদদের হস্তগত হয়েছে আরও ২১টি সাঁজোয়া যানসহ অগণিত অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ।
এসব অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে সফল অভিযানটি পরিচালিত হয়েছিল ১৯ এপ্রিল সকালে। সেদিন হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদগণ সোমালিয়ার জালাজদুদ রাজ্যের আইল-দেরী শহরে তুর্কি প্রশিক্ষিত সোমালি স্পেশাল ফোর্সের একটি ঘাঁটিতে ইস্তেশহাদী অভিযানের পর ঝড়ের গতিতে আঘাত হানেন। এই অভিযানে পশ্চিমা সমর্থিত বাহিনীর অন্তত ৬২ সেনা নিহত এবং আরও কমপক্ষে ৪০ সৈন্য আহত হয়েছিল। এদের মাঝে তুর্কি প্রশিক্ষিত গরগর ফোর্সের নিহত সেনা সদস্য সংখ্যাই ছিল ১২ এবং আহত সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ জন। অভিযান শেষে মুজাহিদগণ গনিমত লাভ করেন ১১টি সাঁজোয়া যান এবং আরও ১১টি ধ্বংস করেছেন।
মুজাহিদদের দ্বিতীয় সফল অভিযানটি চালানো হয় ১৬ এপ্রিল। জালাজদুদ রাজ্যের জাল’আদ শহরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রায় ১ ঘন্টার তীব্র লড়াইয়ে সোমালি বাহিনীর অন্তত ৩০ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও ২৫ সেনা আহত হয়েছে। বাকি সৈন্যরা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে গেলে মুজাহিদগণ সেটার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ফলে, শত্রুদের ফেলে যাওয়া কয়েকটি সাঁজোয়া যানসহ প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ গনিমত লাভ করেন মুজাহিদগণ।
একইভাবে পবিত্র রমাদান মাসে মুসলিমদের ভূমি দখল করতে আসা আগ্রাসী কুফ্ফার বাহিনীকেও কঠোর জবাব দিয়েছেন মুজাহিদগণ। মুজাহিদগণ আরেকটি বীরত্বপূর্ণ অভিযান চালিয়েছেন ১৬ এপ্রিল জানালী শহরে। এতে দখলদার উগাণ্ডান বাহিনীর একটি সামরিক কনভয়কে এম্বুশ করা হয়। প্রাথমিক তথ্য মতে, এই অপারেশনে ২ অফিসারসহ অন্তত ৯ উগাণ্ডান সেনা নিহত এবং আরও ৮ সেনা আহত হয়েছে। পাশাপাশি, মুজাহিদগণ কনভয়ের ৪টি সাঁজোয়া যান সম্পূর্ণভাবে এবং কয়েকটি আংশিকভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছেন।
শাবাবের অভিযানে উচ্চপদস্থ অনেক সামরিক কর্মকর্তা ও মিলিশিয়া নেতাও নিহত হয়েছে। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কিন-প্রশিক্ষিত সোমালি বিশেষ বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ডো অফিসার আব্দুল আজিজ মুহাম্মদ মাহমুদ। একই সময়ে সে সামরিক মন্ত্রণালয়ের অপারেশনাল ডেপুটি কমান্ডারের পদেও অধিষ্ঠিত ছিল। রাজধানী মোগাদিশুর ওয়াদজার জেলায় মুজাহিদদের একটি সফল অভিযানে সে ও তার সাথে থাকা ৩ অফিসার নিহত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সামরিক কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশেষ সামরিক কোর্সে উচ্চ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেই সাথে ‘সিআইএ’র সাথে কাজ করেছে এবং তাকে পূর্ব আফ্রিকায় মার্কিন ড্রোন বিভাগের প্রধান হিসাবেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এটি লক্ষণীয় যে, এই অঞ্চলে দখলদার দেশগুলোর সেনা বৃদ্ধির পাশাপাশি, পশ্চিমা ক্রুসেডার ও আরবের গাদ্দার সরকারগুলো সোমালি বাহিনীকে ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেও হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন এই অঞ্চলে তাদের অগ্রগতি ও বিজয়ের ধারা অব্যহত রেখেছেন এবং পশ্চিমা সমর্থিত বাহিনীর উপর বিজয়ের উষ্ণতা অব্যাহত রেখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।