পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি থেকে শরিয়াহ্ শাসনের বিলুপ্তি ঘটাতে ২০১৩ সালে দেশটিতে সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছিল পশ্চিমা ও ইউরোপীয় সামরিক জোটগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘও তখন এই দেশটিতে তার সামরিক মিশন শুরু করে। ফলে দীর্ঘ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সম্মুখীন হয় মালির মুসলিমরা।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে পশ্চিমা সম্মিলিত জোটবাহিনী সাময়িক সময়ের জন্য ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দূর্বল করে দিতে পারলেও, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে তাদের সকল কলাকৌশল ব্যর্থ হতে থাকে। আর আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারাও (জেএনআইএম) দিনে দিনে আরও বেশি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপর নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে থাকেন।
এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সমর্থিত জোটগুলো থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে মালির জান্তা প্রশাসন। পরাজিত ব্যর্থ পশ্চিমা ও ইউরোপীয় জোটগুলোও তখন ধীরে ধীরে দেশটি ছাড়তে বাধ্য হয়।
সর্বশেষ জাতিসংঘের প্রতিও অনাস্থা তৈরি হয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের। যেকারণে মালির সামরিক জান্তা প্রশাসন গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অবিলম্বে দেশটি থেকে জাতিসংঘের সামরিক মিশন প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছে। যদিও জান্তার এই পদক্ষেপ পশ্চিমাদের সাথে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়াবে বলে মনে হচ্ছে।
জাতিসংঘ মালি মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্টেবিলাইজেশন মিশন (MINUSMA) এবং জান্তার মধ্যে “বিশ্বাসের সংকট” এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জান্তা কর্মকর্তারা দাবি করেছে যে, সামরিক মিশন বিলম্ব না করে তাদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।
জান্তার সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী আবদৌলায়ে ডিওপ সামরিক মিশন প্রত্যাহার বিষয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষার জন্য এখানে জাতিসংঘের মিশন শুরু হলেও বিগত ১০ বছরেও তা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। দুর্ভাগ্যবশত এখানে MINUSMA-এর অবস্থানের ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করছে। সেই সাথে আগের যেকোনো সময়ের চাইতে সহিংসতাও বেড়েছে।”
মালির জান্তা প্রশাসন জোর দিয়ে বলেছে যে, ফ্রান্স এবং পশ্চিমা দেশগুলির যুদ্ধ ও কৌশল জিহাদি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট ছিলো না। তারা এখানে তাদের কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিপরীতে এই দেশগুলির উপস্থিতি এখানে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। মালিয়ান জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে, ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘের অবস্থানের বিরুদ্ধেও সম্প্রতি বিক্ষোভ করছেন জনগণ।
মালিয়ান কর্তৃপক্ষ এবং MINUSMA-এর মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলেও জোর দিয়ে ডিওপ বলেন, “এসব কারণে মালি সরকার চায় MINUSMA কে বিলম্ব না করে এখান থেকে প্রত্যাহার করা হোক।”
তবে জেএনআইএমের চতুর্মুখি চাপে এবং মুজাহিদদের সাথে আলোচনা শুরু করার তাগিদে অনেকটা বাধ্য হয়েই জান্তা সরকার এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে বলে বিভিন্ন নিরপেক্ষ মাধ্যমের বিশ্লেষণে অনুমান করা যাচ্ছে।
এসময় জাতিসংঘে ফরাসী রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভিয়ের বলেছেন যে, মিনুসমা এবং মালিয়ান কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংলাপ সত্ত্বেও, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা এখনও চলাচলের বিধিনিষেধের অধীন। ডি রিভিয়েরে জোর দিয়ে বলেন যে, ওয়াগনার মালিতে আসার পর থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন গুরুতরভাবে বেড়েছে।
জান্তার বিবৃতি সম্পর্কে জাতিসংঘের আর্থিক দূত এবং মালি মিশনের প্রধান এল গাসিম ভেন বলেছেন যে, এটি পরিষ্কার যে শান্তিরক্ষা মিশনগুলি আয়োজক দেশের সম্মতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং অসম্ভব, যদি সে দেশের সম্মতি না থাকে।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মালিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে জাতিসংঘের অধীনে বিভিন্ন দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি সৈন্য রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশী সৈন্যও রয়েছে।
اما الحمد و الثناء لله تعالى عز و جل