উত্তরাখণ্ডে ইসলামবিরোধী ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রয়োগের ঘোষণা

মাহমুদ উল্লাহ্‌

1
352
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি।

ভারতে সব নাগরিকের জন্য একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড বাস্তবায়নের আলোচনা চলছিল অনেকদিন আগে থেকেই। এরকম কোন আইন হলে বিয়ে, বিচ্ছেদ, বা সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ভারতের মুসলিমরা নিজ ধর্ম অনুযায়ী যে ভিন্ন ভিন্ন আইন অনুসরণ করেন – তা আর থাকবে না। ফলে মুসলিমদের অনেক শরয়ী বিধি বিধান লঙ্ঘন হবে। আর ঠিক একারণেই আইনটি নিয়ে আলোচনার শুরু থেকেই মুসলিমরা এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন।

তবে বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি এরকম একটি আইনের ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলছে।

ভারতের যেসব রাজে বিজেপি ক্ষমতায় আছে – যেমন উত্তর প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ – সেখানে ইউসিসি নিয়ে আলোচনা করে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। সেই ধারাবাহিকতায় উত্তরাখণ্ড ভারতের প্রথম রাজ্য হতে চলেছে যেখানে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বাস্তবায়িত হবে। এমনটাই ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনার দিকগুলিও অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই একীকরণের কাঠামোটি সংসদে উত্থাপিত ২০১৮-এর পিতামাতা বিলের অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই আইনের মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধানগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কঠোর হবে। যে ব্যক্তিরা দুই-সন্তানের নিয়ম লঙ্ঘন করে তারা তাদের ভোটের অধিকার হরণ করার মতো পরিণতির মুখোমুখি হবে এবং তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে দেরাদুনে, “এনলাইটেনমেন্ট কনফারেন্সে” কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতে শীঘ্রই আইনটি বাস্তবায়ন করা হবে। উত্তরাখণ্ডে প্রস্তাবিত ইউনিফর্ম সিভিল কোডের অধীনে মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানো হতে পারে এমন ইঙ্গিত রয়েছে। মুসলিম নারীদের তিন তালাকের বিধান ও ‘ইদ্দত’-এর মতো বিধান নিষিদ্ধ হবে।

উত্তরাখণ্ডের ইউনিফর্ম সিভিল কোডে (UCC) প্রস্তাবিত সংস্কারগুলি বিভিন্ন ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে রাজ্যের মধ্যে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা, লিভ-ইন সম্পর্কের ঘোষণা এবং পৈতৃক সম্পত্তির বিষয়ে মেয়েদের জন্য সমান উত্তরাধিকারের অধিকার নিশ্চিত করা, সমস্ত ব্যক্তির জন্য দত্তক গ্রহণ সক্ষম করা এবং স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সমান ভিত্তি কার্যকর করা।

বিজেপির মূল নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রধান অঙ্গীকার ছিল তিনটি। অযোধ্যায় বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটির ওপর রামমন্দির নির্মাণ, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা, এবং একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তন। তো সেই মন্দির নির্মাণ এখন চলছে, কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদাও বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং এখন বাকী রয়েছে ইউসিসি তথা ইউনিফর্ম সিভিল কোড।

এতে ইউসিসিকে দেখানো হচ্ছে তাদের ভাষায় “পশ্চাৎপদ” মুসলিম ব্যক্তিগত আইনসমূহের একটি প্রতিপক্ষ হিসেবে।
মুসলিমদের তিন তালাক বা “তাৎক্ষণিক বিবাহবিচ্ছেদের” উদাহরণও টানা হচ্ছে – যা ২০১৯ সালে মি. মোদির সরকার নিষিদ্ধ করে।

বিজেপির ম্যানিফেস্টোতে বলা হচ্ছে, ভারত যতদিন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তন না করবে ততদিন পর্যন্ত সেদেশে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না।

ভারতের মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড জানিয়েছেন, ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রণয়নের নামে আইন কমিশন আসলে বিজেপি সরকারের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইছে। বোর্ডের সদস্য হজরত মওলানা ওয়ালি রহমানি দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “বহু ধর্ম, বহু মতের দেশ ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড কখনও প্রযোজ্য হতে পারে না।”

বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সম্পত্তি বা উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো বিভিন্ন ধর্মের ‘পার্সোনাল আইনে’র মধ্যে পড়ে এবং সেখানে আইন কমিশন নাক গলাতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তাছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কয়েক হাজার ইমাম এক সমাবেশ করে বলেন, মুসলিম পারিবারিক আইনের বদলে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি তারা কোনমতেই মেনে নেবেন না।



 

তথসূত্র:

1. People who violate the two children’s rule will not be given the right to vote: Uttarkhand CM Dhami on Uniform Civil Code
https://tinyurl.com/yhfatyr5
2. The tinderbox of the Uniform Civil Code (UCC)
https://tinyurl.com/b382su3p

১টি মন্তব্য

  1. আলহামদুলিল্লাহ, প্রিয় ভায়েরা।
    আল্লাহ আপনাদের জাযায়ে খায়ের দান করুন।
    আমার একটা আবেদন, এ সংবাদ যদি কওমী মাদরাসার সকল তালিবে ইলম ও আলিমগণের কাছে আমভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হতো তাহলে অনেক ভাল হতো।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তান সেনা কনভয়ে ইস্তেশহাদী অভিযানে অন্তত ৩০ সৈন্য হতাহত
পরবর্তী নিবন্ধইয়েমেনে আল-কায়েদার যুদ্ধাভিযান: শত্রু শিবিরে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা