ইয়েমেনে আল-কায়েদার যুদ্ধাভিযান: শত্রু শিবিরে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা

ত্বহা আলী আদনান

2
763

আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখা জামা’আত আনসারুশ শরিয়াহ্ (AQAP) সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিমাত্রিক সামরিক অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে ইয়েমেন যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে নিজেদের হাতে নিচ্ছে। বিশেষ করে তাদের ড্রোন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে শত্রুরা তাদের মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। স্থল ও আকাশপথে তাদের এসকল অভিযানে সবচাইতে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে আরব আমিরাত সমর্থিত ৩টি ভাড়াটে মিলিশিয়া বাহিনী।

সূত্রমতে, আল-কায়েদা ইন দ্য অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি) “সত্যের তীর” অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১২ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সময়ে ১২টি অভিযান পরিচালনার তথ্য নিশ্চিত করেছে। এতে শত্রু বাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদা কমান্ডার সহ অসংখ্য সৈন্য হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

আল-মালাহিম মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী একিউএপির যোদ্ধারা এসময়ের মধ্যে মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর ২টি সামরিক অবস্থান ও একটি কনভয় লক্ষ্য করে ৩টি ড্রোন হামলা চালিয়েছেন। এরমধ্যে আল-মুসিনা’আ এলাকায় পরিচালিত একটি ড্রোন অ্যাটাকেই আমিরাতের ভাড়াটে বাহিনীর অন্তত চার সদস্য হতাহত হয় এবং সামরিক ঘাঁটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাকি আক্রমণগুলোতে শত্রু কনভয় ও সাইটে ব্যাপক হাতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে গত ১২ জুন আল-মুখাত্তাত এলাকায় শাবওয়া ডিফেন্সের একটি সাইটে অ্যাম্বুশ করেন একিউএপি যোদ্ধারা। এই অভিযানের ফলে ভাড়াটে বাহিনীর একজন কর্নেল সহ অপর এক সৈন্য নিহত হয়। একই সাথে অন্য আরও ৪ সৈন্য আহত হয়। এসময় শত্রুপক্ষের একটি সামরিক যান পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং অন্য একটি যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই অভিযানের ২দিন পর সামরিক ব্যারাকটিতে ফের ড্রোন আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। এতে সামরিক ব্যারাকটিতে হাতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

এদিকে আবইয়ানের মুদিয়া এলাকায় ১৩ তম ব্রিগেডের একটি দলকে লক্ষ্যবস্তু করে বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান মুজাহিদগণ। যার ফলশ্রুতিতে সামরিক বাহিনীর একটি ট্রাক ধ্বংস হয়ে যায়। এসময় পলায়নরত সেনাদের মধ্যে একজন আহত হয়।

এমনিভাবে ১৪ জুন তারিখে আবইয়ানের আল-বাকিরা এলাকায় একইদিনেই ৩টি অভিযান চালিয়েছেন মুজাহিদগণ।
এর মধ্যে একটি অভিযান চালানো হয় পরপর ৩টি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরণের মাধ্যমে। এতে সামরিক বাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়, সেই সাথে অন্তত ২ সৈন্য নিহত এবং অন্যরা আহত হয়।
দ্বিতীয় অভিযানে মুজাহিদগণ একই এলাকার সামরিক বাহিনীর একটি দলকে টার্গেট করে অ্যাম্বুশ করেন। এতেও বেশ কয়েকজন ভাড়াটে সৈন্য নিহত ও আহত হয়।
তৃতীয় অভিযানটি ভাড়াটে সৈন্যদের একটি সামরিক যানকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমে চালানো হয়। এতে ভাড়াটে মিলিশিয়াদের সাঁজোয়া যানটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাতে আরোহী সমস্ত মিলিশিয়া সদস্য নিহত হয়।

এই অভিযানগুলোর ৪ দিন পর, ১৮ জুন তারিখে আনসারুশ শরিয়াহ্’র মুজাহিদগণ ফের আবইয়ানের আল-বাকিরা এলাকায় আরও একবার অভিযান চালান। এই অভিযানটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাড়াটে সৈন্যদের একটি কনভয় টার্গেট করে দুটি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। ফলশ্রুতিতে সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ি ধ্বংস এবং অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সাথে অনির্দিষ্ট সংখ্যক শত্রু সৈন্য হতাহত হয়।

মুজাহিদগণ তাদের সর্বশেষ অভিযানটি গত ২১ জুন অবিয়ানের মুদিয়া এলাকায় একটি বিস্ফোরক ডিভাইস দ্বারা চালিয়েছেন। এই অভিযানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল ভাড়াটে মিলিশিয়া বাহিনীর ৩য় ব্রিগেডের ১ম ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এতে ৩য় ব্রিগেডের এক কমান্ডার সহ অন্তত ৭ সৈন্য হতাহত হয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় যে, আলকায়েদা ঠিক এমন সময় তাদের অভিযান জোরদার করছে, যখন সৌদি ও আরব শাসকরা একে একে শিয়াপ্রধান ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিচ্ছে। তবে ইয়েমেন যুদ্ধের বাস্তবতায় এটা আগেই প্রমাণিত হয়েছে যে, আরব জোট জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী শিয়া হুথিদের বাদ দিয়ে সুন্নি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকেই তাদের প্রধান টার্গেটে পরিণত করেছে।

2 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তরাখণ্ডে ইসলামবিরোধী ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রয়োগের ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধকোচিং সেন্টারে জামাতে নামাজ আদায় করায় মুসলিম ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার