প্রত্যাবর্তনকৃত শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান বিষয়ক আফগান হাই কমিশনের প্রতিবেদন (২৮ নভেম্বর)

- আব্দুল্লাহ্‌ বিন নজর

0
241

আফগান শরণার্থীদের জোড়পূর্বক অন্যায়ভাবে বিতাড়িত করেছে পাকিস্তান সরকার। এরপর থেকে আগফানিস্তান অভিমুখে শরণার্থীর ঢল নেমেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে লম্বা সময় পর নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন আফগান শরণার্থীরা। পাকিস্তানের সাথে মিল রেখে ইরানও সেখানে আশ্রয় নেওয়া স্বীকৃত শরণার্থীদেরকেও আফগানিস্তানে ফেরত পাঠাচ্ছে।

তবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে রত অবস্থাতেও চতুর্মুখী শরণার্থীদের ঢলকে সততা ও দক্ষতার সাথে ঠিকই সামলে নিচ্ছে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান। পরিস্থিতি মোকাবেলায় শরণার্থীদের গ্রহণ, নিবন্ধন, পরিবহন, সাময়িক আবাসন, আর্থিক অনার্থিক সুবিধা প্রদান ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য আলাদা আলাদা কমিটির মাধ্যমে শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় অনন্য নজির স্থাপন করে যাচ্ছেন তাঁরা। সার্বিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত কার্যক্রমের রিপোর্টও প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রত্যাবর্তনকৃত শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান বিষয়ক হাই কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ২৮ নভেম্বরের প্রতিবেদনটি আমরা আল-ফিরদাউসের পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করছি।

তুরখাম (কাল্পনিক ডুরান্ড সীমান্ত)

নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
মোট ৪৫৪ জন সদস্য বিশিষ্ট ১০৯টি পরিবারের বায়োমেট্রিক ও নিবন্ধন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
মোট ২৭৫ জন সদস্যের ৪৬টি পরিবারকে নানগারহার, লাঘমান, কুনার ও কাবুল প্রদেশে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ৯,৫০০ আফগানি করে প্রদান করা হয়েছে।

শরণার্থীদের অস্থায়ী আবাসন বিষয়ক কমিটি:
প্রত্যাবর্তনকৃত ৪০টি শরণার্থী পরিবারকে ওমরি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সেখানে ৩০টি তাবু ও ৮টি বিশ্রামাগার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি পানি সংরক্ষণাগারগুলো পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ও সেবা কমিটি:
ওমরি ক্যাম্পে ৭,৫০০ জন প্রত্যাবর্তিত শরণার্থীর মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু দাতব্য সংস্থার সহায়তায় তাদের মাঝে ৭৫০টি কম্বল, ৭৫০ জোড়া জুতা ও শীতের পোশাক (M&F), ৪৫০ প্যাকেট লবণ , ৪৫০ ব্যাগ রেশন এবং ১৪০,০০০ লিটার পানি বিতরণ করা হয়েছে।
শরণার্থীরা ৫৫২ টি সিমকার্ডও পেয়েছেন।

কর্মসংস্থান কমিটি:
কর্মসংস্থান কমিটি কর্তৃক ৮ জন হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েট, ২ জন কুরআনের হাফেজ, ৩১৪ জন স্বল্প দক্ষ ব্যক্তি এবং ৮৯ জন পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী পরবর্তীতে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে ইনশাআল্লাহ্‌।

তথ্য ও জন সচেতনতা কমিটি:
ওমরি ক্যাম্পের কর্মকর্তাগণ ফিরে আসা শরণার্থীদের সাথে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা সভা সম্পন্ন করেছেন। প্রতারণার আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদেরকে শরণার্থীদের জায়গা দখল না করতে সতর্ক করে তাঁরা বলেছেন যে- এমন কেউ ধরা পরলে নিজেদের পরিণতির জন্য তারা নিজেরাই দায়ী থাকবে।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থাও (আইএমও) শরণার্থীদের স্বীকৃতি সনদ বিতরণ করেছে।

স্পিন বোল্ডাক

নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
উক্ত কমিটি ১৬৯০ জন সদস্য বিশিষ্ট ৩১২টি পরিবারের বায়োমেট্রিক ও নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি, মোট ১২৮২ সদস্যের ২৪১টি সংকটাপন্ন পরিবারের তত্ত্বাবধানের জন্য তাদেরকে আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার (আইএমও) অধীনে অর্পণ করা হয়েছে।
এছাড়াও, ৪০৮ সদস্যের ৭১টি পরিবারের কাছে আগে থেকেই ভিআরপি ও এউএনএইচসিআরের কার্ড ছিল। তাদের জরুরী সহায়তা ও প্রয়োজন পূরণের দায়িত্বও আইএমও-কে প্রদান করা হয়েছে।

পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
বোল্ডাক দিয়ে আগত ৮৩৯ জন্য সদস্যের ১০৪টি শরণার্থী পরিবারকে কাবুল, হেরাত ও কান্দাহার প্রদেশে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সকল পরিবারকে ১২৯,০০০ আফগানি অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

অর্থ বিষয়ক কমিটি:
ফিরে আসা প্রতিটি পরিবার এই কমিটির কাছ থেকে ১০ হাজার আফগানি করে অর্থ সহায়তা পেয়েছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ও সেবা কমিটি:
স্পিন বোল্ডাক ও খোর আন্দাম ক্যাম্পে ফিরে আসা ৫,৪০০ জন শরণার্থীর মাঝে খাবার ও ৭০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মীরওয়াইস খান হাসপাতাল, রেড ক্রস কমিটি, হেলথনেট অর্গানাইজেশনের ডাক্তারগণ মোট ২৭৬ জন রোগীর পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও চিকিৎসা সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি ২,৪৮০ জন শরণার্থীকে টিকা প্রদান ও ১২৭৮ জনের স্ক্রিনিং সম্পন্ন করা হয়েছে।
শরণার্থীদের মাঝে ৭৯০ সিমকার্ডও বিতরণ করা হয়েছে।

পাকতিকা প্রদেশ:

নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
আংগুর আদায় ৩ টি পরিবারের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে।

পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
আগত ৩টি পরিবারকে তাদের নির্ধারিত জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

অর্থ বিষয়ক কমিটি:
প্রত্যাবর্তনকারী ৩টি পরিবার ১০ হাজার আফগানি নগদ সহায়তা পেয়েছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ও সেবা কমিটি:
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আংগুর আদা এর পাবলিক হেলথ টিম ফিরে আসা ৮২ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে।
আঙ্গুর আদায় ৮৩টি শরণার্থী পরিবারকে কমিটির সদস্যদের সাথে ৩ বেলার খাবার প্রদান করা হয়েছে।
প্রত্যাবর্তিত শরণার্থীদের ১৪টি সিমকার্ডও প্রদান করা হয়।

জাবুল প্রদেশ:

নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
১৯ জন সদস্যের ৪টি ফিরে আসা পরিবারকে জাবুলের শামালজো জেলায় নিবন্ধন করা হয়েছে।

পরিবহন ও হস্তান্তর কমিটি:
৩টি পরিবারের ১২ জন সদস্যকে তাদের নির্ধারিত জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পরিবার ভাড়া বাবদ ৪,৫০০ আফগানি পেয়েছে।

অর্থ বিষয়ক কমিটি:
উক্ত কমিটি আগত ৪টি পরিবারকে ভাড়া বাবদ ১০ হাজার আফগানি প্রদান করেছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ও সেবা কমিটি:
প্রত্যাবর্তনকারী ৪টি পরিবার প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সম্বলিত ৪টি সাময়িক আবাস লাভ করেছে। রেড ক্রস সোসাইটি তাদেরকে খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করেছে।

নিমরুজ প্রদেশ:

নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
১৮৬ সদস্যের ৪৮টি পরিবারকে নিবন্ধিত ও বায়মেট্রিক সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও, ২৫৬২ জন অবিবাহিত ব্যক্তিকেও নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে আবার ২৫৬ জনকে জরুরি সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায়(IOM) আনা হয়েছে।

শরণার্থীদের অস্থায়ী আবাসন বিষয়ক কমিটি:
১১৭ সদস্য বিশিষ্ট ২৯টি পরিবারকে অস্থায়ী আবাসন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নারী তীব্র অভাবগ্রস্ত হওয়ায়, তাদের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার(IOM) নিকট অর্পণ করা হয়েছে।

হেরাত প্রদেশ:

নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
ইসলাম কালা রুট দিয়ে আগত ১২৭ সদস্যের ৬৩টি পরিবারের নিবন্ধিত ও বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও, ২৫৬২ জন অবিবাহিত ব্যক্তিকেও নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে আবার ২৫৬ জনকে জরুরি সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায়(IOM) আনা হয়েছে।

অর্থ বিষয়ক কমিটি:
প্রত্যাবর্তিত ৪৩টি পরিবারের প্রত্যেককে ১০,০০০ আফগানি অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

কাবুল প্রদেশ:

অর্থ সংস্থান বিষয়ক কমিটি:
উক্ত কমিটির প্রধান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত প্রধান, আল-গুরাফা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। সেখানে অর্থ সংস্থান বিষয়ক কমিটির প্রধানের কাছে ১০০,০০০ ডলারের সহায়তা হস্তান্তর করা হয়।

পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কমিটির কৃত কাজের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। কর্মকর্তাগণ শরণার্থীদের প্রয়োজন পূরণে দ্রুত সারা দেওয়ার ব্যপারে গুরুত্বারোপ করা হয়।



 তথ্যসূত্র:
———-
Daily report of the high commission for facilitation of returning refugees

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও দুই দিন বাড়ল
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ২৯ নভেম্বর, ২০২৩